লক্ষ্মীপুরে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে বেওয়ারিশ কুকুর। শুধু সেপ্টেম্বরে সরকারি হিসাব অনুযায়ী, সদর হাসপাতালে কুকুর ও বিড়ালের আক্রমণের শিকার হয়ে আট শতাধিক মানুষ চিকিৎসা নিয়েছে। আক্রান্তদের বেশির ভাগই শিশু। আক্রান্ত ব্যক্তিদের টিকা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।
লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে কুকুরের কামড় ও বিড়ালের আঁচড়ে আক্রান্ত হয়ে সদর হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছে ৮০০ জন। ২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে এমন আক্রান্ত প্রায় ১০ হাজার মানুষ জলাতঙ্ক রোগ প্রতিরোধের টিকা নিয়েছে। আক্রান্ত প্রত্যেক ব্যক্তিকে তিন ডোজ করে টিকা নিতে হয়। সেই হিসাবে এক বছরে প্রায় ৩০ হাজার ডোজ টিকা দিতে হয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।
এদিকে স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ, কয়েক বছর আগে একটি পাইলট প্রকল্পের আওতায় পৌর এলাকায় কয়েক হাজার কুকুরকে জলাতঙ্ক প্রতিরোধে টিকা দেওয়া হলেও তা বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন। হাইকোর্টের নির্দেশে বেওয়ারিশ কুকুর নিধন বন্ধ রয়েছে। বেশির ভাগ সময় যাতায়াত করতে গিয়ে কুকুরের আক্রমণের শিকার হতে হচ্ছে। ফলে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা।
আক্রান্ত ব্যক্তিরা জানান, রাস্তা, বাসাবাড়ি এবং স্কুলে যাতায়াত করার সময় হঠাৎ কুকুরের আক্রমণের শিকার হতে হচ্ছে। কয়েক মাস ধরে কুকুরের উপদ্রব কয়েক গুণ বেড়েছে। ফলে অনেক শিক্ষার্থী স্কুলে যেতে ভয় পাচ্ছে।
আনোয়ার হোসেন ও কফিল উদ্দিন নামের দুজন বলেন, কুকুরের কামড়ের পর টিকা দিতে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু টিকা না থাকায় বাইরে থেকে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। এতে বেশি অর্থ খরচ ও ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
সদর হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স মো. রোকুনুজ্জামান বলেন, গত সেপ্টেম্বরে ৮০০ ব্যক্তি কুকুর ও বিড়ালের আক্রমণের শিকার হয়ে হাসপাতালে এসেছিল। তাদের টিকা দেওয়া হয়। এ নিয়ে গত এক বছরে ১০ হাজার মানুষকে প্রায় ৩০ হাজার ডোজ টিকা দেওয়া হয়। এ ছাড়া প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ জন কুকুর বা বিড়ালের কামড়ে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে টিকা নিতে আসে।
লক্ষ্মীপুর পৌর প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, কুকুর নিধনে হাইকোর্টের নির্দেশনা থাকায় ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। আবার নির্দেশনা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর বাইরে করার কিছু নেই। তারপরও সবাই সচেতন হয়ে চলাচল করলে কুকুরের আক্রমণের শিকার হতে হবে না।
লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা অরুপ পাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, জলাতঙ্ক রোগ প্রতিরোধের পর্যাপ্ত টিকা মজুত রয়েছে। কোনো সংকট নেই। হঠাৎ করে সড়কে কুকুর বেড়ে যাওয়া ও প্রাণীদের উত্ত্যক্ত করার কারণে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। আক্রান্ত স্থান পানি বা সাবান দিয়ে পরিষ্কার করে দ্রুত হাসপাতালে এসে টিকা ও চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।