হোম > সারা দেশ > খুলনা

খাল খননের মাটিতে নষ্ট হচ্ছে ধানখেত, দুশ্চিন্তায় কৃষকেরা

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার হরিদাশপুর ইউনিয়নের খাগাইল গ্রামে খাল খননের মাটিতে নষ্ট হচ্ছে ধানখেত। পানি উন্নয়ন বোর্ড এই খাল খনন করছে। চাষের জন্য অতীব প্রয়োজনীয় খাগাইল খালটি খনন করে এর দুই পাশের বোরো ধানের জমিতে ফেলানো হচ্ছে মাটি। এতে ফলন্ত ধান নষ্ট হয়ে ব্যাপক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন কয়েক শত কৃষক। পানি উন্নয়ন বোর্ডে লিখিতভাবে জানিয়েও কোনো প্রতিকার পাননি ওই এলাকার কৃষকেরা। 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বলেছেন, খালে পানি থাকায় সময়মতো কাজ শুরু করতে পারেননি। আর কাজ দেরিতে শুরু করে কৃষকদের ক্ষতির জন্য নির্বাহী প্রকৌশলীকে দায়ী করলেন স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান। 

২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ২৫ তারিখে জয় ট্রেডার্স নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে প্রায় দেড় কিলোমিটারের খাগাইল খালটি পুনঃ খননের কার্যাদেশ দেয় গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড। অদৃশ্য কারণে খননের কাজ শুরু হয় ২০২৪ সালের মার্চের প্রথম সপ্তাহে।

যে সময়টিতে খালের দুই পাড়ের বেশির ভাগ জমির ধানে শিষ বের হওয়া শুরু হয়। ধান নষ্ট হওয়ায় জমিতে মাটি ফেলতে নিষেধ করেন কৃষকেরা। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন প্রভাব খাটিয়ে খাল খননের মাটি জোর করে ফেলেছে সেই ধানের ওপরে। বিলের এক ফসলি বোরো ধানের এ জমিই কৃষকদের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। এ ঘটনার ফলে এখানকার কৃষকদের প্রায় ১০ একর জমির ধানের ক্ষতি হয়েছে। তাই ক্ষতি পূরণের দাবি ফসল হারানো কৃষকদের।

ভুক্তভোগী কৃষক নিয়ামত খাঁ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের এখানে এক ফসলি জমি। আমার দুই জায়গায় মোট দুই বিঘা জমিতে ধান হয়। আমরা গরিব মানুষ। এই ধান লাগিয়ে আমরা খাই। আমার ধানের ভেতর দিয়ে মাটি ফেলায় চলে গেছে। মানা করছি শোনে নায়। বলছে অল্প একটু ফেলাবানি। কিন্তু তা না করে প্রায় অর্ধেক জমির ধান নষ্ট করে ফেলেছে।’ 

ভুক্তভোগী এক কৃষকের স্ত্রী স্বপ্না বেগম বলেন, ‘দ্যাড় (দেড়) বিঘে জমি রুইছি আমরা। সে জমিতে ফুলা ধান, তার ওপর মাটি ফেলাইছে। আমাগে আর কোনো কামাই নাই। আমাগে মরণ (মৃত্যু) ছাড়া আর কোনো ফত (রাস্তা) নাই। ছয়ড়া ছেলে-মেয়ে এ্যাল্যা (একা) বেডা কামাই হরে তাই দিয়ে আমরা খাইয়ে, দিন যাইয়ে রাত ফোয়াইয়ে কোন রহম বাইচে থাহি। এইভাবে ধানের উপর মাটি ফেলানুর কোন যুক্তি আছে।’

ভুক্তভোগী কৃষক শাহানুর মোল্লা বলেন, ‘আমাগে একই ফসল, এর পরে আর কোনো ফসল নাই। আমাগে যে কি ক্ষতি করে গেছে। আমাগে আগে বললো না কেন। কাতি (কার্তিক) মাসে যদি বলতো এই জমিগুলো লাগাইও না, তাহলে আমরা লাগাতাম না। তারপর আমাগে যে ফুলা (শিষ বের হওয়া শুরু) ধানডা তার উপরে মাটি ফেলাইছে। বলার পরেও শোনলো না। তাগে মোনমত কাজ চালায়ই (চালিয়ে) গেছে। আমরা কৃষক মানুষ আমরা কি খাইয়ে বাচপো।’

ভুক্তভোগী কৃষক আবুল মৃধা বলেন, ‘আমাকে জমির ফোলা ধানের উপর মাটি ফেলাইছে। কিছুদিন পরে আবার মাটি ফেলালি ধান আরও নষ্ট হবে। জমি জড়াইয়ে কাটছে। পরে এসমস্ত জমি ভাইঙ্গে খালের মধ্যি পড়বে। আমাগেতো কিছুই থাকবে না। আমাগে যে ক্ষতি হইছে তাই আমাগে বুইঝে দিক।’ 

হরিদাশপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. ইলিয়াস হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘খাগাইল খালটি খনন করা এলাকার কৃষকদের জন্য খুবই জরুরি। এই খালের টেন্ডার হওয়ার পরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের গোপালগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে অনেকবার কথা হয়েছে। তাঁর কাছে এই খাল খননের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি জানান খালের টেন্ডার হয়েছে। দ্রুতই ওয়ার্ক অর্ডার দিয়ে কাজ শুরু করা হবে।

‘তাঁকে বলা হয়েছে শীত মৌসুমে খাল খনন করলে মাটি ফেলানোর পর্যাপ্ত জায়গা পাওয়া যাবে। খনন শেষে কৃষক তাদের চাষাবাদও করতে পারবে। যত দ্রুত সম্ভব কাজটা শুরু করার জন্য তখন নির্বাহী প্রকৌশলীকে অনুরোধ করে বলি; যেহেতু আমার নির্বাচনী এলাকা ও আমার নিজের গ্রাম, সেহেতু কাজ শুরু করার আগে যেন অবহিত করা হয়। যাতে কাজটি করতে তাদের সাহায্য করা যায়। কিন্তু ওয়ার্ক অর্ডার হওয়া ও চলতি মাসের প্রথম দিকে কাজ শুরু করেও আমাকে জানানো হয়নি।’ 

চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ওয়ার্ক অর্ডার হয়েছে। সেপ্টেম্বরে কাজ শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু সেই কাজ কেন পাঁচ মাস পরে ধানি জমি নষ্ট করে শুরু হলো। আমি কৃষকদের এই ব্যাপক ক্ষতির জন্য ঠিকাদার নয়, নির্বাহী প্রকৌশলীকেই দায়ী করব। কাজ শুরুর অনুমতি যখন দেওয়া হলো তখন খনন শুরু করলে কৃষকদের এই ক্ষতি হতো না। আমি মনে করি তিনি আমার জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন এবং এটি তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে করেছেন।’

গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডর নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম রেফাত জামিল বলেন, ‘দেড় কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ২০ ফুট প্রশস্তের খাগাইল খালটির পুনঃ খনন কাজের ওয়ার্ক অর্ডার ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সে সময় খালে পানি থাকায় খাল খনন করা সম্ভব হয়নি। ডিসেম্বর মাসের শেষ দিকে পানি শুকিয়ে যাওয়ায় জানুয়ারি মাসে কাজ শুরু করা হয়। চলতি বছরের জুন মাসে খননকাজের মেয়াদ শেষ হবে। কৃষকদের সেচের সুবিধার জন্য এই খাল খননের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি আমরা খাল খননে এক্সকাভেটর  ব্যবহার করছি যাতে খালের দুই পাড়ে মানুষ কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যে মাটিটা উঠবে সেটি খালের দুই পাড়ে রাখা যাবে। সেই মাটিটা ভবিষ্যতে তারা তাদের জমিতে ব্যবহার করতে পারবে। এটি পলি সংবলিত মাটি। এটি জমির উর্বরতা বাড়াবে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ আলোচনার পরে তারা কিছুটা আশ্বস্ত হয়েছে এবং কাজটি চলমান রয়েছে।’ 

নির্বাহী প্রকৌশলী আরও বলেন, ‘আমরা মাঠপর্যায়ে কাজটি বাস্তবায়নের পূর্বে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি যিনি আছেন তাঁকে জানিয়েছি, যেন শুকনো মৌসুমেই কাজটা করা যায়। এই জমিগুলো এক ফসলি এবং ফসল যখন জমিতে সেই মুহূর্তেই কাজটা হবে। এ কারণে কৃষকেরা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, এ বিষয়ে আগেই আমরা সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে জানিয়েছিলাম। তারপরও মাঠপর্যায়ে কৃষকদের ক্ষতি কিছুটা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের ডিজাইন, এস্টিমেট এখানে কোথাও ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সুযোগ নেই। তাই আমরা কৃষকদের কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে পারব না। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তাদের জমিতে সেচের জন্য এতটুকু ক্ষতি মেনে নিতে কৃষকদের অনুরোধ করছি।’

বাগেরহাটে জাপানপ্রবাসীর বাড়িতে ডাকাতি, স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট

অস্ত্র তৈরির কারখানার সন্ধান: চার ঘণ্টা পর আগের বক্তব্য প্রত্যাহার করল পুলিশ

খুলনা ওয়াসা: প্রকল্প পরিচালক হলেন ষষ্ঠ গ্রেডের প্রকৌশলী

লেদ কারখানা থেকে উদ্ধার যন্ত্রাংশ দিয়ে ৩০ অস্ত্র তৈরি করা যেত: পুলিশ

খুলনায় ভাবিকে হত্যার অভিযোগে দেবর আটক

খুলনায় অস্ত্র তৈরির কারখানার সন্ধান, আটক ২

লিচুগাছে নারীর ঝুলন্ত লাশ, রয়েছে আঘাতের চিহ্ন

যৌথ অভিযানে অস্ত্র ও গুলিসহ গাংনীতে গ্রেপ্তার ১

মাথায় আঘাত ও বালিশচাপায় মাকে হত্যা, ৬ লাখ টাকা নিয়ে ছেলে উধাও

নারী পুলিশ কনস্টেবলের মোবাইল ছিনতাইচেষ্টা, যুবক আটক