খুলনায় জোড়া খুনের দুই দিন পর থানায় হত্যা মামলা করেছে পুলিশ। আজ বুধবার খুলনা সদর থানায় মামলাটি করা হয়। মামলায় অজ্ঞাতনামা ১৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। তবে হত্যার ঘটনায় নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে দুই পরিবারের কেউ মামলা করতে রাজি হননি।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল হাই আজকের পত্রিকাকে বলেন, জোড়া হত্যার ঘটনায় দুই পরিবারের কেউ মামলা না করায় এসআই আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেছেন। মামলার তদন্ত করবেন এসআই মো. মিয়ারব হোসেন।
এর আগে গত রোববার (৩০ নভেম্বর) খুলনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের প্রধান গেটের সামনে গুলি করে ও কুপিয়ে হাসিব হাওলাদার ও ফজলে রাব্বি রাজন নামের দুজনকে হত্যা করা হয়। তাঁরা খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী পলাশ বাহিনীর সদস্য ছিলেন। এই জোড়া হত্যার সঙ্গে আরও এক শীর্ষ সন্ত্রাসী রনি চৌধুরী বাবু ওরফে গ্রেনেড বাবুর সম্পৃক্ততার তথ্য পেয়েছে পুলিশ।
এদিকে নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে ঘটনার দুদিন পরও মামলা করেনি ভুক্তভোগী পরিবার। জানতে চাইলে নিহত রাজনের বাবা মো. এজাজ শেখ জানান, ছেলে হত্যার বিচার তিনি আল্লাহর আদালতে দিয়েছেন।
এজাজ শেখ বলেন, ‘বিচার তো আদালতে হয়ে থাকে। কিন্তু আদালতে হাজিরা দিতে এসে লাশ হয়ে বাড়ি ফিরলে কার কাছে বিচার চাইব। চারপাশে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বাসা ও অফিস রয়েছে। এমন একটি জায়গায় নিরাপত্তার চিত্র যদি এমন হয়, তাহলে মানুষ কোথায় যাবে।’
এজাজ শেখ আরও বলেন, ‘আমি কোনো মামলা করব না। মামলা করে কী হবে? আমার একমাত্র ছেলেকে তো ওরা মেরে ফেলেছে। এখন মামলা করলে কী আমার ছেলেকে ফিরে পাব? আমার বা আমার পরিবারের নিরাপত্তা কে দেবে? আমি আল্লাহর কাছে বিচার দিলাম, তিনিই উত্তম বিচার করনেওয়ালা।
‘বন্ধুর উপকার করতে গিয়ে আমার ছেলে মিথ্যা মামলায় ফেঁসেছে। জেলে থাকা অবস্থায় আমার ছেলেকে হত্যা, অস্ত্র মামলাসহ ছয়টি মামলা দেওয়া হয়েছে। সেই মামলায় হাজিরা দিতে গিয়ে আজ আমার ছেলে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হয়েছে।’
অপর দিকে ৫৪ ধারায় আটক রিপন শেখ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নয় বলে দাবি করেছেন তাঁর পরিবার ও নিহত হাসিব হাওলাদারের ছোট ভাই সুমন হাওলাদার।
আজ সংবাদ সম্মেলনে সুমন হাওলাদার বলেন, ‘আমরা মামলা দেব না। নিহত হাসিবের দুই শিশুকন্যাসহ পরিবারের নিরাপত্তার কারণেই আমরা মামলার দিকে যাচ্ছি না। তা ছাড়া হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে রিপনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সে আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও প্রতিবেশী। তাকে হয়রানি করার জন্য গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
রিপন শেখের স্ত্রী আঁখি জানান, রিপন শেখ ঘটনার দিন ফকিরহাটের ফলতিতা পাইকারি মাছের বাজারে মাছ কিনতে গিয়েছিলেন। দুপুর সাড়ে ১২টায় খুলনার আদালতের সামনে যখন হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়, তখন তিনি ওই বাজারে ছিলেন, যার ভিডিও ফুটেজও দেখানো হয়। এ ছাড়া রিপন ‘ইহুদি’ বাহিনীর সদস্য ছিলেন না। ২০০৩ সালে ওই বাহিনী বিলুপ্ত হয়, তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১১ বছর।