দায়িত্বে অবহেলা, তদারকির অভাব ও ঠিকাদারের অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ সুন্দরমহল খেয়াঘাট সড়কটি সম্পূর্ণভাবে চলাচলের অনুপযোগী। সম্প্রতি দেড় লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়ে সংস্কারকাজ হলেও নিম্নমানের কাজ ও নদীর অব্যাহত ভাঙনের মুখে সড়কের ইট বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এমনকি রাতের আঁধারে ইট চুরি হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি দ্রুত টেকসই বেড়িবাঁধ ও সংস্কারের অভাবে কার্যত নদীগর্ভে চলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
গতকাল সরেজমিনে দেখা যায়, পুরো রাস্তায় ভাঙাচোরা ও গর্ত। রাস্তার অধিকাংশ স্থানের ইট নদীভাঙনে হারিয়ে গেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, অনেক ইট রাতের আঁধারে চুরি হয়ে যাচ্ছে। জোয়ারের পানির স্রোতে প্রতিদিনই রাস্তাটির অংশবিশেষ ভেঙে যাচ্ছে এবং অধিকাংশ স্থানে রাস্তা সরু হয়ে পড়ায় বর্তমানে এই রাস্তা দিয়ে যানবাহন চলাচল প্রায় বন্ধের উপক্রম।
স্থানীয় মুরগি ব্যবসায়ী মো. মোমরেজ বিশ্বাস বলেন, ‘রাস্তাটির অবস্থা এত খারাপ যে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। কাস্টমাররা আমার দোকানে আসতে চায় না রাস্তা খারাপ বলে।’
খেয়াঘাট ইজারাদার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘ভাই কী বলব রাস্তার কথা। প্রতিদিন আমার খেয়া দিয়ে হাজারো লোক পারাপার হয়ে থাকে। কিন্তু রাস্তার অবস্থা এমন যে যাত্রীরা গাড়ি নিয়ে আসতে পারে না। রাস্তাটি সংস্কার এখন খুবই জরুরি।’
সুন্দরমহল আশ্রয় প্রকল্পের মসজিদের ইমাম মোহাম্মদ মিনারুল ইসলাম জানান, প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়ে হাজারো মানুষ যাতায়াত করে। রাস্তাটি খারাপ হওয়ায় মুসল্লিদের মসজিদে নামাজ পড়তে আসতে সমস্যা হয়।
বাজার কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিএনপি নেতা মেহেদী হাসান বলেন, কাজে এত অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে যে অল্প দিনের মধ্যে রাস্তাটি নষ্ট হয়ে গেছে। রাস্তাটি পুনরায় সংস্কার করা দরকার।
স্থানীয় ব্যবসায়ী ও জামায়াত নেতা মো. ইয়াসিন আরাফাত বলেন, ‘আমরা শুনেছি এই রাস্তায় একাধিকবার বরাদ্দ হয়েছে। কিন্তু কাজের কোনো চিহ্ন নেই। অনিয়ম আর দুর্নীতির কারণে আজ রাস্তাটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। নদীভাঙনে রাস্তাটি বিলীনের পথে। দ্রুত টেকসই বেড়িবাঁধের ব্যবস্থা না করলে রাস্তাটি নদীভাঙনে বিলীন হয়ে যাবে।’
তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বটিয়াঘাটা উপজেলার ৪ নম্বর সুরখালী ইউনিয়ন পরিষদের উন্নয়ন (১%) তহবিল থেকে দেড় লাখ টাকা রাস্তা সংস্কারের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। পরে অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে দ্বিতীয় পর্যায়ে সুন্দরমহল পিচের রাস্তা থেকে খেয়াঘাট পর্যন্ত ইটের সোলিংয়ের কাজটি সম্পন্ন করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আশিক এন্টারপ্রাইজ। কাজটির সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন সুরখালী ইউনিয়ন পরিষদের মহিলা সদস্য রত্না অধিকারী।
স্থানীয় ইউপি সদস্য জি এম এনামুল হক বলেন, রাস্তা নির্মাণের আগে বেড়িবাঁধ না দেওয়ায় আজ এই অবস্থা। ভবিষ্যতে সংস্কারের আগে পাইলিং ও বেড়িবাঁধ দিতে হবে, নইলে টিকবে না।
সুরখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস কে জাকির হোসেন লিটু বলেন, ‘শুনেছি রাস্তা এখন চলাচলের অনুপযোগী। রাতের আঁধারে ইটগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। নদীভাঙনের কারণে রাস্তার অনেক ইট নদীর মধ্যে পড়েছে। রাস্তাটি পুনরায় সংস্কার করতে হলে টেকসই একটি বেড়িবাঁধ দিতে হবে। আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত সংস্কারের উদ্যোগ নেব।’
বটিয়াঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমি নতুন এসেছি। তাই সব এলাকা এখনো ভালোভাবে চিনি না। তবে বিষয়টি তদন্ত করে যথার্থ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’