যশোরের বেনাপোল সীমান্তে এবারও ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন দুই দেশের বাংলা ভাষাপ্রেমীরা। আজ বুধবার বেলা ১১টায় সীমান্তের শূন্যরেখায় কাঠ ও বাঁশের তৈরি অস্থায়ী শহীদ মিনারে তাঁরা শ্রদ্ধা জানান। এ সময় দুই বাংলার মিলনমেলা তৈরি হয়।
বেনাপোল সীমান্তের শূন্যরেখায় অস্থায়ী শহীদ মিনারে আজ বাংলাদেশের পক্ষে যশোর-১ (শার্শা) আসনের সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দীনের নেতৃত্বে ২০ জন শ্রদ্ধা জানান। ভারতের পক্ষে ২৪ পরগনার বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামীর নেতৃত্বে আরও ২০ জন অংশ নেন। তাঁদের মধ্যে দুই দেশের রাজনৈতিক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, কবি ও সাহিত্যিকেরা ছিলেন।
শূন্যরেখায় সরেজমিনে জানা গেছে, মাথার ওপর একদিকে লাল-সবুজ আর অন্যদিকে গেরুয়া-সাদা-সবুজ রঙের পতাকা উড়তে থাকে। ফুলে ফুলে ভরে ওঠে শহীদ মিনার চত্বর। সেখানে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ব্যস্ত থাকেন দুই বাংলার বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। এতে এক ছাদের নিচে দুই দেশের ভাষাপ্রেমীদের মিলন মেলা তৈরি হয়। এ সময় ভাষাপ্রেমীরা গেয়ে ওঠেন ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো ২১ ফেব্রুয়ারি’ গান। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বিজিবি, বিএসএফসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক সংস্থার নিরাপত্তা জোরদার ছিল।
বেনাপোল পৌরসভার লোকজন জানান, বেনাপোল সীমান্তে ২০ বছর ধরে ভারত-বাংলাদেশ যৌথভাবে ভাষা শহীদদের প্রতি এভাবে শ্রদ্ধা জানিয়ে আসছে। এ বছরও সংক্ষিপ্ত পরিসরে শূন্যরেখায় শহীদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানান দুই বাংলার ভাষাপ্রেমীরা। সীমানা ভুলে অনেকটা এদিন মিলে-মিশে একাকার হওয়ার সুযোগ পান ভাষাপ্রেমীরা।
বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতা স্থানীয় সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দীন বলেন, ‘ভাষার জন্য জীবন ত্যাগের ইতিহাস একমাত্র বাঙালির। যা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে বিশ্ব। এ জন্য বাঙালি ও বাংলাদেশি হিসেবে আমরা গর্ববোধ করি। শূন্যরেখায় দুই বাংলার ২১ উদ্যাপন নতুন প্রজন্মকে ভাষার প্রতি আরও শ্রদ্ধাশীল হতে ভূমিকা রাখবে।’
শূন্যরেখায় ফুল দিতে আসা ভারতীয় ভাষাপ্রেমী নদ্দিতা বিশ্বাস জানান, ভাষার টানে শূন্যরেখায় বারবার ছুটে আসেন তিনি। এ দিনটির জন্য সারা বছর ধরে অপেক্ষায় থাকেন।
বেনাপোল সরগম সংগীত একাডেমির সভাপতি মোস্তাফিজ্জোহা সেলিম জানান, ২০০২ সালে প্রথম বেনাপোলের সরগম সংগীত একাডেমি ও ভারতের ২৪ পরগনার ২১ উদ্যাপন কমিটির আয়োজনে যৌথ মাতৃভাষা দিবস পালন শুরু হয় শূন্যরেখায়। আর ২০১২ সাল থেকে সরকারিভাবে এই দিবসটি পালন করে আসছে বেনাপোল পৌরসভা ও ভারতের বনগাঁ পৌরসভা।