যশোরের মনিরামপুরে ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট (ভিডব্লিউবি) ২০২৩-২৪ চক্রে দুস্থ নারীর তালিকা তৈরিতে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ রয়েছে দুস্থ অসহায় নারীদের বাদ রেখে এ তালিকায় স্থান পেয়েছে সচ্ছল নারীরা।
এ অভিযোগে উপজেলার কুলটিয়া ইউনিয়নে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি দুই মাসের চাল বিতরণ বন্ধ রয়েছে। তালিকা সংশোধনের জন্য ওই ইউনিয়ন পরিষদের (৪, ৫ ও ৬ নম্বর) ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী সদস্য রমা দত্ত জেলা ও উপজেলা প্রশাসকের দপ্তরসহ নানা দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
রমা দত্তের অভিযোগ, তাঁর ওয়ার্ডে ভিডব্লিউবির নতুন চক্রে ৩৮ জনের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। যার ১৮ টিতে রয়েছে সচ্ছল ব্যক্তির স্ত্রীর নাম। কুলটিয়া ইউপির চেয়ারম্যান ও ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পুরুষ ইউপি সদস্যরা টাকার বিনিময়ে এবং স্বজনপ্রীতি করে এসব নাম তালিকাভুক্ত করেছেন।
এ নারীদের অধিকাংশের স্বামী ছাদের পাকা বাড়ি, মাছের ঘের ও ৪-৫ বিঘা জমির মালিক। আবার এমন নাম রয়েছে যাঁরা সরকারের অন্য সুবিধা ভোগ করছেন, এমনটি অভিযোগ ইউপি সদস্য রমা দত্তের।
রমা দত্ত বলেন, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের তালিকার জেসমিন বেগমের স্বামী মাহাবুর রহমানের ছাদের বাড়ি ও মাঠে ৫ বিঘা চাষের জমি আছে। আড়সিংগাড়ী গ্রামের রেশমা বেগমের স্বামী শফিকুলের ছাদওয়ালা বাড়ি আছে। পোড়াডাঙা গ্রামের ফিরোজা বেগমের স্বামী তবিবুর রহমানের ছাদের বাড়ি আছে।
রমা আরও বলেন, ‘আমার দেওয়া দুস্থ আরতি শীল, মায়া দত্ত, নাজমা বেগম, শাহীনা খাতুনসহ ১৫ জনের নাম কেটে দেছে। এঁরা সবাই দিন এনে দিন খায়। থাকার ভালো ঘরও নেই।’
এ বিষয়ে কুলটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শেখর চন্দ্র বলেন, ‘জলাবদ্ধতার কারণে আমার ইউনিয়নে ৭ বছর ফসল হয় না। যাদের ছাদের বাড়ি, মাঠে চাষের জমি আছে। জমি চাষ করতে না পেরে এখন তাঁদের অবস্থা বেশি খারাপ। এ লোকেরা লজ্জায় পারেন না কামলা দিতে, পারেন না মাছ ধরতে। ভাঙা ঘরের লোকজন খেটে খেতে পারছেন। আমার ইউনিয়নে এখন ধনীরা গরিব আর গরিবেরা ধনী হয়েছেন।’
মনিরামপুরে ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট (ভিডব্লিউবি) ২০২৩-২৪ চক্রে দুই বছর মেয়াদি বিনা মূল্যে মাসিক ৩০ কেজি করে চাল বিতরণের জন্য নতুন ২ হাজার ৭১৭ জন নারীর নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। গেল বছরের নভেম্বরে অনলাইন আবেদনের মাধ্যমে এ তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়। প্রাথমিকভাবে উপজেলা মহিলা বিষয়ক দপ্তর তালিকা যাচাই করে প্রতি ইউনিয়ন থেকে কিছু নাম বাদ দেন। পরে বাদ পড়া নামের বিপরীতে নতুন নাম দেন চেয়ারম্যানেরা। অভিযোগ রয়েছে, ইউপি চেয়ারম্যানদের দেওয়া সংশোধিত নাম পুনরায় যাচাই না করে তালিকাভুক্ত করেছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর।
মৌসুমি আক্তার আরও বলেন, ‘অন্য ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের দেওয়া তালিকা যাচাইবাছাই করে কিছু নাম বাদ দেওয়া হয়েছিল। পরে আর সংশোধিত নাম যাচাই করা হয়নি।’
মনিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকির হোসেন বলেন, ‘ভিডব্লিউবি নিয়ে কুলটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সমস্যা সমাধান করে দেওয়া হয়েছে। তালিকা নিয়ে কোনো ইউনিয়নে অভিযোগ থাকলে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’