খরাপ্রবণ জয়পুরহাট অঞ্চলে পানির সংকটে সাধারণ পুকুরে মাছের চাষ অনেক সময় সম্ভব হয় না। এই বাস্তবতায় নতুন বিকল্প হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বিশেষায়িত ট্যাংকে মাছ চাষ। এতে যেমন বাড়ছে পরিবারের আমিষের জোগান, তেমনি আসছে বাড়তি আয়—আর্থিক সচ্ছলতাও মিলছে।
এই পদ্ধতির সফল উদাহরণ হয়ে উঠেছেন জয়পুরহাট সদর উপজেলার তেঁতুলতলী গ্রামের পল্লি চিকিৎসক আনোয়ারুল ইসলাম। বাড়ির আঙিনায় ইট, বালু, রড ও সিমেন্ট দিয়ে তৈরি বিশেষায়িত ট্যাংকে তিনি আধুনিক পদ্ধতিতে শিং মাছের পোনা চাষ করছেন। তাপমাত্রা ও অক্সিজেনের ভারসাম্য রেখে মাছ বড় করার এই পদ্ধতিতে কম খরচ ও পরিশ্রমে বেশি লাভ পাওয়া যাচ্ছে।
আনোয়ারুল জানান, প্রথম দফায় মাত্র ৫ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে তিনি দুই মাসের ব্যবধানে প্রায় ২০ হাজার টাকার মাছ বিক্রি করেন। এতে খরচ বাদে তার নিট লাভ দাঁড়ায় ১৫ হাজার টাকা।
তিনি আরও জানান, এই পদ্ধতিতে মাছ দ্রুত বাড়ে, রোগ কম হয়। মাছ দেখতে আকর্ষণীয়, খেতেও সুস্বাদু।
তাঁর এই সাফল্যে আশপাশের মানুষও অনুপ্রাণিত হচ্ছেন। মাছচাষি মামুনুর রশিদ বলেন, ‘আগে পুকুরে চাষ করতাম, সময় ও খরচ বেশি লাগত। কিন্তু লাভ ছিল কম। এখন আনোয়ারুলের ট্যাংকে মাছ চাষ দেখে আমিও ভাবছি এই পদ্ধতিতে চাষ করব।’
তাঁর মতোই আগ্রহী হয়েছেন মাছচাষি তারাজুল ইসলাম ও গোলাপ হোসেন। শুধু পুরুষই নন, নারীরাও উৎসাহী হচ্ছেন। আনোয়ারুলের প্রতিবেশী শিখা রানী বলেন, ‘প্রতিদিন তাঁর মাছ চাষ দেখি। কম খরচে, কম সময়ে লাভ দেখে ভাবছি—আমিও এভাবে চাষ শুরু করব।’
বাজারেও এই মাছের চাহিদা বেশি। স্থানীয় বিক্রেতা তারাজুল ইসলাম জানান, ট্যাংকে চাষ করা মাছ দেখতে ভালো, স্বাস্থ্যসম্মত ও স্বাদে আলাদা। ক্রেতারাও সহজে আকৃষ্ট হন। তাই পাইকারি ও খুচরা উভয় বাজারেই এর চাহিদা বাড়ছে।’
এই উদ্যোগে আগ্রহ দেখাচ্ছেন শিক্ষিত তরুণেরাও। কলেজে পড়ুয়া সিয়াম ও গৌতম লেখাপড়ার পাশাপাশি মাছ চাষ শুরু করতে চান। সিয়াম বলেন, ‘এই পদ্ধতিতে সময় ও খরচ কম। অবসরটা কাজে লাগানো যাবে, আয় দিয়ে পড়াশোনার খরচও মেটানো সম্ভব।’
জয়পুরহাট সদর উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, প্রতি লিটার পানিতে নবীনরা একটি করে এবং অভিজ্ঞরা দুটি করে পোনা চাষ করতে পারেন। বছরে দু-তিনবার উৎপাদন সম্ভব। প্রতি কেজি শিং মাছ বর্তমানে বাজারে ৩০০–৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা বলেন, ‘শিং মাছ উচ্চমূল্যের। যাঁদের পুকুর নেই, তাঁদের জন্য ট্যাংকে চাষ একটি সম্ভাবনাময় দিক। প্রযুক্তিনির্ভর এই পদ্ধতিতে আগ্রহ বাড়লে দেশের মাছ উৎপাদনে নতুন গতি আসবে।’