যশোরের শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র (বালক) থেকে এক কিশোর পালিয়ে গেছে। ১৫ বছর বয়সী ওই কিশোর গতকাল বুধবার দুপুরের দিকে অভ্যন্তরীণ সীমানা প্রাচীর ডিঙিয়ে পালায়। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। কিশোরটি নড়াইল সদর উপজেলার গোবরা গ্রামের বাসিন্দা।
এ ঘটনায় যশোর কোতোয়ালি মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছে কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ। শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রটি যশোর সদর উপজেলার পুলেরহাট এলাকায় অবস্থিত। এর আগে ৯ ডিসেম্বর একটি চুরির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে তাকে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে রাখা হয়।
কেন্দ্র ও থানা সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকালে কেন্দ্রের অভ্যন্তরে ক্রিকেট টুর্নামেন্ট চলছিল। অনেকেই খেলায় অংশ নেয়, কেউ কেউ ছিল দর্শক। দুপুর ১২টার দিকে খেলা শেষে খাবারের সময় কিশোরটিকে পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, খেলাধুলার একপর্যায়ে সুযোগ বুঝে কেন্দ্রের অভ্যন্তরীণ সীমানা প্রাচীর ডিঙিয়ে পালিয়ে যায় সে। পালানোর মুহূর্তে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীরা বিষয়টি টের পাননি। পরে নিয়মিত গণনার সময় একজন কম পাওয়া গেলে খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত হয় যে কিশোরটি কেন্দ্র থেকে পালিয়েছে। কীভাবে সে পালাতে সক্ষম হলো, নিরাপত্তায় কোনো ঘাটতি ছিল কি না—তা খতিয়ে দেখতে কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু করেছে।
শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক মঞ্জুরুল হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘খেলাধুলা শেষে একজনকে কম পাওয়া যাওয়ার পর খোঁজাখুঁজি করা হয়। তাকে পাওয়া যায়নি। এমনকি সিসি ক্যামেরায়ও পালানোর দৃশ্য ধরা পড়েনি। ধারণা করছি, প্রাচীর ডিঙিয়ে পালিয়েছে। ছেলেটি নতুন এসেছিল। এ ঘটনায় থানায় জিডি করা হয়েছে। পাশাপাশি তার পরিবারকে জানানো হয়েছে। তারা জানিয়েছে, বাড়িতে ফিরলে তাকে আবার কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।’ বন্দী পালালেও নিরাপত্তায় ঘাটতি নেই বলেও দাবি করেন তিনি।
যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কাজী বাবুল হোসেন বলেন, ‘পালানো বন্দীকে আটক করতে প্রয়োজনীয় আইনগত প্রক্রিয়া ও অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। আশপাশের এলাকা, পরিবহন স্ট্যান্ড ও সম্ভাব্য লুকিয়ে থাকার স্থানগুলোতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।’
প্রসঙ্গত, শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রগুলোকে আগে কিশোর সংশোধন কেন্দ্র বলা হতো। পরে নাম পরিবর্তন করা হয়। বিভিন্ন অপরাধে অভিযুক্ত শিশু-কিশোরদের সাজার পরিবর্তে সংশোধনের জন্য ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত এসব কেন্দ্রে রাখা হয়। দেশে ছেলেদের জন্য দুটি ও মেয়েদের জন্য একটি—মোট তিনটি শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র রয়েছে। যশোর কেন্দ্রটিতে বর্তমানে ২৬২ জন শিশু-কিশোর রয়েছে। এর আগে অন্তত সাত-আটবার বন্দী পালানোর ঘটনা ঘটেছে। প্রায় দেড় বছর পর আবার পালানোর ঘটনা ঘটল গতকাল।
এর আগে ২০২০ সালের ৬ ডিসেম্বর একসঙ্গে জানালা ভেঙে আট কিশোর পালানোর ঘটনা ঘটে। একই বছরের ১৩ আগস্ট তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কেন্দ্রটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ১৮ বন্দী কিশোরকে নির্যাতন করেন বলে অভিযোগ ওঠে। এতে তিন কিশোর নিহত হন এবং ১৫ জন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় পাঁচ কর্মকর্তা ও সাত বন্দী কিশোরের নামে মামলা হয়। ওই ঘটনার পর কেন্দ্রটি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি হয়।