‘বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে ছোলক সেনাবাহিনীতে ডুকাই দিছুনু। হামার এতিম ছোলটা যোনো কষ্ট না পায়। কষ্ট করে লেখাপড়া হামি করাইছি, মরার আগপর্যন্ত হামাক দেখপে। সেই ছোলক ওরা মারছে। তোমরা হামাক, আমার ছোলক আনে দেও। হামার ময়নাটা কী হলো রে, হামার একটাই খাটনেআলা ছোল।’ এভাবে আহাজারি করছেন সুদানে নিহত শান্তিরক্ষী সবুজ মিয়ার বৃদ্ধ মা ছকিনা বেগম (৬০)।
গতকাল শনিবার সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনের আওতাধীন কাদুগলি লজিস্টিক বেসে সন্ত্রাসী ড্রোন হামলায় ছয় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত হন। নিহতদের মধ্যে সবুজ মিয়াও রয়েছেন। তিনি মিশনের লন্ড্রি কর্মচারীর দায়িত্ব পালন করছিলেন।
সবুজ মিয়া পলাশবাড়ী উপজেলার মহদীপুর ইউনিয়নের আমলাগাছি (ছোট ভবনপুর) গ্রামের মৃত হাবিদুল ইসলামের ও ছকিনা বেগমের ছেলে।
আজ রোববার বিকেলে গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার মহদীপুর ইউনিয়নের আমলাগাছি (ছোট ভবনপুর) গ্রামে দেখা যায়, সবুজ মিয়ার বাড়িতে লোকজন দিয়ে ভর্তি। সবুজ মিয়ার মা ছকিনা বেগম ছেলের মৃত্যুতে বারবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন। পাড়া-প্রতিবেশী আত্মীয়স্বজন মাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন।
অন্যদিকে সবুজের স্ত্রী নূপুর আক্তার কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। নূপুর উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্রী। তিনি বলেন, ‘বিয়ের মাত্র এক বছর আট মাস, তাতেই স্বামীকে হারালাম। আমার জীবনটাই শেষ হয়ে গেল। আমার সব শেষ হয়ে গেল।’
মহদীপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও স্থানীয় বাসিন্দা ফিরোজ আকন্দ জানান, প্রায় সাত-আট বছর আগে সবুজ মিয়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে লন্ড্রি কর্মচারী হিসেবে যোগদান করেন। এক ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবুজ মিয়া ছিলেন ছোট। তাঁর বড় বোনের বিয়ে হয়েছে। সবুজ মিয়া এক বছর আগে বিয়ে করেন। তাঁর স্ত্রী ও মা এখন বাড়িতে আছে। সবুজ মিয়ার মৃত্যুর খবরে পরিবারে মাতম চলছে। একই সঙ্গে গ্রামজুড়েই নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
এ বিষয়ে পলাশবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ জাবের আহমেদ বলেন, নিহতের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। দ্রুত এ বিষয়ে পরে বিস্তারিত জানানো হবে।