গান গেয়েই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত বাতিলের প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন সংস্কৃতিকর্মীরা। জাতীয় শিক্ষা ও সংস্কৃতি রক্ষা আন্দোলনের ব্যানারে আজ শনিবার বিকেলে বিভিন্ন সংগঠনের কর্মীরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন ও আলোচনার মাধ্যমে প্রতিবাদ জানান। পাশাপাশি সংগীত ও শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক নিয়োগের মূল প্রজ্ঞাপন পুনর্বহালের দাবি জানান।
রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন সংগঠনের শিল্পীদের যৌথ অংশগ্রহণে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় সমাবেশ। আলোচনা পর্বে সংগঠনের বিভিন্ন প্রতিনিধি বক্তব্য দেন। তাঁদের কথায় উঠে আসে, সম্প্রতি সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত ও শরীরচর্চা বিষয়ক শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত বিশেষ একটি মহলের চাপে বাতিল করেছে। ওই মহলটি সংগীত ও শরীরচর্চা শিক্ষক নিয়োগের পরিবর্তে ধর্মীয় বিষয়ক শিক্ষক নিয়োগের দাবি জানিয়েছে। অথচ সবগুলো স্কুলে আগে থেকেই ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োজিত আছে। তারপরও পুনরায় ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের দাবি অসৎ উদ্দেশ্যমূলক।
তাঁরা আরও বলেন, সংগীত ও শরীরচর্চা শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশের অপরিহার্য অংশ। গান, সুর ও তাল পরিবার ও পরিপার্শ্বের মধ্যে নান্দনিক বন্ধন সৃষ্টি করে, অন্যের সঙ্গে ভাবের আদান-প্রদান করতে শেখায়। শিশুদের ভাষার দক্ষতা তৈরি করে, ক্রিয়াশীল করতে শেখায়, শিশুর শারীরিক-মানসিক দক্ষতা বাড়ায়। একটি বুদ্ধিসম্পন্ন, মেধাবী ও সৃজনশীল প্রজন্ম গড়ে তুলতে হলে শিশুদের সংগীত ও শরীরচর্চা শিক্ষা অবশ্য প্রয়োজনীয়। ধর্মের নামে যারা সংগীত ও শরীরচর্চা শিক্ষা বন্ধের দাবি জানাচ্ছেন, তাঁরা মূলত একটি মেধাহীন অবিকশিত বুদ্ধির প্রজন্ম গড়ে তোলার ষড়যন্ত্র করছেন।
তাঁদের দাবি, ২ নভেম্বর তারিখের সংগীত ও শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক নিয়োগ বাতিল-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার করে ২৮ আগস্টের সংগীত ও শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক নিয়োগের মূল প্রজ্ঞাপন পুনর্বহাল করা। পর্যায়ক্রমে প্রতিটি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সংগীত, চারুকলা ও শরীরচর্চার শিক্ষক নিয়োগ করা।
আলোচনা পর্বে জাতীয় শিক্ষা ও সংস্কৃতি রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক ও উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহমুদ সেলিমের সভাপতিত্বে সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন। আলোচনার পরে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। শুরুতে সমবেত সংগীত পরিবেশন করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংগীত বিভাগের শিল্পীরা।
তাঁরা ‘ওরা আমাদের গান গাইতে দেয় না’ এবং ‘অধিকার কে কাকে দেয়’ গান দুটি পরিবেশন করেন। দলীয় সংগীত পরিবেশন করে সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী। একক সংগীত পরিবেশন করেন বাংলাদেশ রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থা, শিল্পকলা বিদ্যালয় ঐক্যজোটের শিল্পীরা। সালমা মনির পরিচালনায় দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে নৃত্যাক্ষর। একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন উদীচীর শিল্পী বেলায়েত হোসেন, শিখা সেনগুপ্তা ও মির্জা আতিকুজ্জামান।
সবশেষে বাউলগান পরিবেশন করেন বাউলশিল্পী সংস্থার জামিল খ্যাপা ও জাহিদ বাউল। সঞ্চালনায় ছিলেন উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের সাধারণ সম্পাদক কংকন নাগ। জাতীয় শিক্ষা ও সংস্কৃতি রক্ষা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে ২৩টি সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষক, ছাত্র ও শিশু সংগঠন।