ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবুল কাসেম মোহাম্মদ জামাল উদ্দীনকে ধাওয়া দিয়েছেন ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক এবি জুবায়ের। এ সময় তাঁদের মধ্য ধস্তাধস্তির ঘটনাও ঘটে। পরে ধাওয়া খেয়ে বাধ্য হয়ে ক্যাম্পাস ছেড়েছেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ওই অধ্যাপক। তাঁর অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে গেলে তিনি হেনস্তার শিকার হয়েছেন।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের লাউঞ্জে এ ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় তাঁর সঙ্গে ছিলেন আওয়ামী লীগের নীল দলের সমর্থক ঢাবির চার শিক্ষক। অধ্যাপক ড. আবুল কাসেম মোহাম্মদ জামাল উদ্দীন সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নীল দলের আহ্বায়ক।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, আ ক ম জামাল উদ্দীনসহ কয়েকজন শিক্ষক দুপুরে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে যান। সেই খবর পেয়ে অনুষদ ভবনের সামনে জড়ো হন একদল শিক্ষার্থী। বেলা ১টার দিকে তাঁরা ভবন থেকে বের হতেই ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক এবি জুবায়েরের নেতৃত্বে কয়েকজন শিক্ষার্থী আ ক ম জামালকে ধাওয়া করেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক জুবায়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সিঁড়িতে অধ্যাপক জামালের পোশাক টেনে ধরে তাঁকে আটকে রাখের চেষ্টা করছেন। আ ক ম জামাল নিজেকে ছাড়াতে তাঁর হুডি খুলে ফেলেন। তিনি সিঁড়ি থেকে নেমে দৌড়ে পালালে তাঁর পিছু ধাওয়া করেন জুবায়ের। একপর্যায়ে অধ্যাপক জামাল একটি গাড়িতে উঠে পড়েন। জুবায়ের তখনো গাড়ির দরজা টেনে ধরে তাঁকে নামানোর চেষ্টা করছিলেন। সেখানে পুলিশ ডাকার কথাও বলেন ওই শিক্ষার্থীরা।
ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক এবি জুবায়ের পরে এক ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘স্বঘোষিত রাজাকারের বাচ্চাগুলোরে ধইরা ধইরা ব্রাশফায়ার দিতে হবে’ বলা আওয়ামী লীগের কুলাঙ্গার শিক্ষক আকম জামাল, নীল দলের পোস্টেড নেতা জিনাত হুদাসহ ৫ জন ফ্যাসিস্টের দোসর শিক্ষক আজকে ক্যাম্পাসে এসে গোপন মিটিংয়ে যুক্ত হয়েছিল। খবর পেয়ে আমরা তাদেরকে পাকড়াও করে পুলিশে দেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু আনফরচুনেটলি আগে থেকে প্রস্তুত করে রাখা গাড়িতে উঠে পালিয়ে যায় কুলাঙ্গারগুলো!’
এবি জুবায়ের আরও লিখেছেন, ‘এরা চিহ্নিত খুনিদের দোসর। এদের ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থীরা এদের ক্লাস-পরীক্ষা সব বয়কট করেছে। তারপরও এরা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করার সাহস কীভাবে পায়! প্রশাসনকে আরও তৎপর হতে হবে। খুনিদের সাথে কোনো সহাবস্থানের সুযোগ নেই। সবগুলোকে বিচারের আওতায় আনতে হবে শীঘ্রই।’
হেনস্তার ঘটনার বিষয়ে কথা বলতে অধ্যাপক ড. আবুল কাসেম মোহাম্মদ জামাল উদ্দীনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা নীল দলের মোট পাঁচ শিক্ষক সাত দাবি নিয়ে সাড়ে ১২টার সময় উপাচার্যের কার্যালয়ে স্মারকলিপি দিতে গেছিলাম এবং উপাচার্য না থাকায় পিএসের কাছে জমা দিয়ে আসছি। পরে দুপুর ১টার দিকে বের হয়ে এসে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের লাউঞ্জে চা খাইতে গেছিলাম, দুপুরের নাস্তাও করতেছিলাম। নাস্তা খেয়ে আমরা যখন বের হচ্ছি তখন চার পাঁচটা ছেলে আমাদের ওপর হামলা করে। বিশেষ করে তারা প্রথমে আক্রমণটা করে একজন নারী শিক্ষকের ওপর। পরে আমাকে ধরছে, আমাকে তারা যেতে দিবে না এই বলে। একপর্যায়ে আমার সঙ্গে হাতাহাতি বাকবিতন্ডা চলছিল। তারপরে সেখান থেকে আমি গাড়িতে করে স্থান ত্যাগ করি।’
এক প্রশ্নের জবাবে ড. জামাল বলেন, ‘আমরা কোনো মিটিংয়ের জন্য সেখানে যাইনি। স্মারকলিপি দিতে গেছিলাম। আমার তো মতাদর্শ থাকতেই পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে কিন্তু আমার বিরুদ্ধে কোথাও মামলা হয় নাই। নীল দল শিক্ষকদের দল, আমরা কি তাহলে দল করব না? আমরা এই প্রথম ক্যাম্পাসে না, এর আগেও গেছি, প্রতি সপ্তাহে যাই; কিন্তু কখনো হামলা হয়নি। আর আজ স্মারকলিপি দিতে গেলে হামলা করেছে তারা।’
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমি সে সময় ক্যাম্পাসে ছিলাম না। তবে এর আগে আ ক ম জামাল স্যার ক্যাম্পাসে এলে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে। পরে আমরা শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করি যে, তিনি আর আসবেন না। আমরা জামাল স্যারকেও বলেছিলাম না আসতে। তারপরও তিনি এসেছেন।’