ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য সংস্থা ইউএসএইডের কর্মকর্তা জুলহাজ মান্নান ও তাঁর বন্ধু নাট্যকর্মী মাহবুব রাব্বী তনয় হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হবে আজ মঙ্গলবার। ঢাকার সন্ত্রাস বিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান বেলা সাড়ে ১১টায় এই রায় ঘোষণা করবেন।
গত ২৩ ও ২৪ আগস্ট দুই দিনে এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামি পক্ষ যুক্তিতর্ক শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে যুক্তিতর্কে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের (পুরোনো নাম আনসারুল্লাহ বাংলা টিম) সামরিক শাখার প্রধান চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হকসহ আট জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড দাবি করেন। অন্যদিকে আসামি পক্ষ থেকে আসামিদের নির্দোষ দাবি করা হয়। এরপর মামলার রায়ের তারিখ ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল।
২০১৯ সালের ২৮ জুলাই এই মামলায় জিয়াউল হক জিয়াসহ আট আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেওয়া হয়। অভিযোগপত্রে অন্য যাদের আসামি করা হয় তারা হলেন আনসার আল ইসলামের মিডিয়া শাখার প্রধান মোজাম্মেল হোসেন ওরফে সায়মন, ইন্টেলিজেন্স শাখার প্রধান শেখ আবদুল্লাহ জোবায়ের, সামরিক শাখার সদস্য আরাফাত শামস ওরফে সাজ্জাদ, ফয়জুল ওরফে আসাদুল্লাহ, হায়দার জোনায়েদ, আকরাম ওরফে আবির আদনান ও আফনাল ওরফে অনিক। এদের মধ্যে মধ্যে মোজাম্মেল সায়মন, শেখ আবদুল্লাহ, আরাফাত শামস ও আসাদুল্লাহ কারাগারে আছেন। বাকিরা পলাতক।
২০১৬ সালের ২৫ এপ্রিল সন্ধ্যায় কলাবাগানের বাসায় ঢুকে দুর্বৃত্তরা জুলহাজ ও তাঁর বন্ধু তনয়কে কুপিয়ে হত্যা করে। হত্যার পর পালানোর সময় বাধা দিতে গেলে দুর্বৃত্তরা বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী পারভেজ মোল্লাকেও কোপায়। কলাবাগান থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মমতাজউদ্দিন এক দুর্বৃত্তকে জাপটে ধরলে তাঁকেও কুপিয়ে তারা পালিয়ে যায়। তবে এএসআই মমতাজ ওই দুর্বৃত্তদের একজনের কাছ থেকে একটি ব্যাগ কেড়ে নিতে সক্ষম হন। ওই ব্যাগে একটি পিস্তল, একটি দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি ও মুঠোফোন পাওয়া যায়।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, জুলহাজ সমকামিতা নিয়ে পত্রিকা প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত থাকায় আনসার আল ইসলাম তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ হয় এবং তাকে হত্যার পরিকল্পনা নেয়। জঙ্গি মোজাম্মেল সায়মন, শেখ আবদুল্লাহ, আরাফাত শামস ও আসাদুল্লাহ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দি ও তদন্তে বেরিয়ে এসেছে চাকরিচ্যুত মেজর জিয়ার সমন্বয়, পরিকল্পনা ও নির্দেশে জঙ্গিনেতা সেলিমের তত্ত্বাবধানে আনসার আল ইসলামের ১২ জঙ্গি খুনের ঘটনায় জড়িত। হত্যার আগে পাঁচ জঙ্গি জুলহাস ও মাহবুবের গতিবিধি নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেন। তাঁরা হলেন মোজাম্মেল সায়মন, শেখ আবদুল্লাহ, জোবায়ের আকরাম, আরাফাত শামস ও হাসান। তাঁদের তথ্যের ভিত্তিতে হায়দার জোনায়েদ, আফনাল, আসাদুল্লাহ, কামরুল ও আলীম বাসায় ঢুকে জুলহাজ ও মাহবুবকে কুপিয়ে হত্যা করেন। হত্যাকারীদের প্রশিক্ষক জঙ্গিনেতা সেলিম, হাসান, কামরুল ও আলীম ওরফে আলীর পূর্ণাঙ্গ নাম–ঠিকানা না পাওয়ায় তাঁদের মামলার অভিযোগপত্র থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়। তবে তাদের নাম ঠিকানা পাওয়া গেলে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেওয়া হবে বলে অভিযোগপত্রে বলা হয়।