রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকায় একই ফ্ল্যাট বারবার বিক্রির নামে প্রায় কোটি টাকা আত্মসাৎ করা একটি সংঘবদ্ধ চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। আজ বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) ভোরে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সুমিলপাড়া এলাকার একটি ভাড়া বাসা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করে সিআইডির ঢাকা-মেট্রো দক্ষিণ ইউনিট।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন শাহানা শিকদার, সামীর ও হানিফ ব্যাপারী।
সিআইডির মুখপাত্র ও বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সংস্থার পক্ষ থেকে এ-সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তিও পাঠানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে—চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে একই ফ্ল্যাট বিক্রির প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে আসছিল। তারা প্রথমে ফ্ল্যাট বিক্রির প্রস্তাব দিত, পরে বলত ফ্ল্যাটটি মর্টগেজ রাখা আছে, মালিকের জরুরি টাকার প্রয়োজন, দ্রুত টাকা দিলে রেজিস্ট্রি করে দেবে। এভাবে তারা ধাপে ধাপে অগ্রিম টাকা নিত, আবার সময়ক্ষেপণ করে আরও টাকা দাবি করত।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, চক্রটি বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ ও প্রলোভন দেখিয়ে ‘রূপা’ (ছদ্মনাম) নামের এক ভুক্তভোগীকে ফ্ল্যাট কেনার ব্যাপারে আকৃষ্ট করে। ২০২৫ সালের আগস্টজুড়ে বায়নানামার মাধ্যমে তাঁর কাছ থেকে মোট ৪১ লাখ ৪০ হাজার টাকা নেয় প্রতারকেরা। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে রেজিস্ট্রি না করে গড়িমসি শুরু করে তারা। পরে ২৭ আগস্ট ধানমন্ডির একটি ব্যাংকের সামনে রূপা ও তাঁর সহকারীকে মারধর করে এবং তাঁর কাছে থাকা মর্টগেজ টোকেন ছিনিয়ে নেয়।
ঘটনার পর রূপা হাজারীবাগ থানায় মামলা করেন। মামলার তদন্তভার পেয়ে সিআইডি ব্যাংক লেনদেন অনুসন্ধান, প্রযুক্তিনির্ভর তথ্য বিশ্লেষণ এবং ভুক্তভোগীর বর্ণনার ভিত্তিতে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে।
তদন্তে আরও জানা গেছে, চক্রটি একই ফ্ল্যাট দেখিয়ে আগেও বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে টাকা হাতিয়েছে। মো. শাহাদাৎ হোসেনের কাছ থেকে ১২ লাখ, মো. মাহবুবুর রহমানের কাছ থেকে ৯ লাখ ৪০ হাজার এবং মো. নান্নু মিয়া ইমনের কাছ থেকে ৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা নেওয়ার তথ্য মিলেছে। এমনকি চলতি বছরের ২৮ আগস্ট চক্রটি একই ফ্ল্যাট ২৬ লাখ ২৫ হাজার টাকায় রওশন আরা নামের এক নারীর কাছে রেজিস্ট্রি করে দেয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা প্রতারণার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তাঁদের আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে সিআইডি।