হোম > সারা দেশ > ঢাকা

যুবদল নেতা কিবরিয়া হত্যার পেছনে কি মালয়েশিয়া পলাতক সন্ত্রাসীর হাত

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎

যুবদল নেতা গোলাম কিবরিয়া। ছবি: সংগৃহীত

‎রাজধানী ঢাকার পল্লবীতে যুবদল নেতা গোলাম কিবরিয়াকে গুলি করে হত্যার নেপথ্যে বেশ কয়েকটি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত করছে পুলিশ। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের পাশাপাশি এতে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের হাতও থাকতে পারে। প্রতিপক্ষ দীর্ঘ পরিকল্পনা করে ভাড়াটে খুনি দিয়ে কিবরিয়াকে হত্যা করেছে বলে তথ্য পেয়েছে পুলিশ।

‎তদন্ত সংশ্লিষ্ট ও স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, পল্লবী এলাকায় মফিজুর রহমান ওরফে মামুন নামে এক শীর্ষ সন্ত্রাসী এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ, আবাসন ও পরিবহন ব্যবসায় চাঁদাবাজিতে তাঁর লোকজনকে সুযোগ দেওয়া নিয়ে বিরোধ বাঁধে। এসব বিষয়ে কিবরিয়া কোনো সাড়া না দেওয়ায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন মামুন।

কিবরিয়া হত্যার ঘটনা তদন্তে যুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা ও স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, এলাকায় মাদক নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে। আর এর পেছনে ওই এলাকার এক শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ মাদক কারবারি ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা জড়িত। তাঁকে আগে থেকেই টার্গেট করে সন্ত্রাসীদের দিয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। ‎

‎‎গোলাম কিবরিয়া ছিলেন পল্লবী থানা জাতীয়তাবাদী যুবদলের সদস্যসচিব ছিলেন। পাশাপাশি তিনি চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহের ব্যবসা করতেন।

ঘটনার বিষয়ে তদন্ত সংশ্লিষ্ট ও স্থানীয়রা জানান, মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনের সি ব্লকের ৫ নম্বর রোডে বন্ধু মাসুদ রানার বিক্রমপুর হার্ডওয়্যার অ্যান্ড স্যানিটারি দোকানে প্রায়ই আড্ডা দিতেন কিবরিয়া। গত সোমবার (১৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় তিনি ওই দোকানে অবস্থান করছিলেন। এ সময় দুটি মোটরসাইকেলে করে ছয়জন ব্যক্তি আসে। তাদের মধ্যে মো. জনি ভূঁইয়া, রোকন ও সোহাগ ওরফে কাল্লু দোকানের ভেতরে ঢোকেন। একজনের পরনে পাঞ্জাবি ও দু’জনের গায়ে শার্ট ছিল। প্রত্যেকের মাথায় হেলমেট ও মুখে মাস্ক ছিল। বাকি তিনজন বাইরে অপেক্ষা করেন। ভেতরে প্রবেশ করা তিনজনেই একের পর এক কিবরিয়াকে গুলি করলে মুহূর্তেই তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। হত্যায় অংশ নেওয়া তিনজন গুলি করে দ্রুত বেরিয়ে বাইরে থাকা ব্যক্তিদের মোটরসাইকেলে ওঠেন। এ সময় জনি মোটরসাইকেলে উঠতে না পারায় এক অটোরিকশায় উঠে চালককে দ্রুত যেতে বলেন। চালক আরিফ হোসেন যেতে না চাওয়ায় তাঁকেও গুলি করেন জনি। স্থানীয় লোকজন জনিকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে।

‎তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, কিবরিয়াকে হত্যা করতে জনি ভূঁইয়াসহ কয়েকজনকে আগে থেকেই ভাড়া করা হয়। হত্যায় সরাসরি অংশ নেওয়া অপর দু’জনকেও শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

‎সরেজমিনে গতকাল মঙ্গলবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনের সি ব্লকের ৫ নম্বর রোডে মোড়ের পাশেই কিবরিয়ার বন্ধু মাসুদ রানার বিক্রমপুর হার্ডওয়্যার অ্যান্ড স্যানিটারি দোকান। তবে এই দোকানসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি দোকান বন্ধ।

‎স্থানীয়রা বলেন, হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া সবাই বিদেশ পলাতক মিরপুরের চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী মফিজুর রহমান ওরফে মামুনের লোক। নাম আসা পাঁচজনই মিরপুর, পল্লবী, বাউনিয়া বাঁধসহ সংশ্লিষ্ট এলাকায় মাদক, চাঁদাবাজি ও নানা অপকর্মে লিপ্ত। এই পাঁচজন মূলত মামুনের অনুসারী।

জানা যায়, মামুনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, খুন, মাদক, অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার ও ডাকাতির অভিযোগে পল্লবী থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। পুলিশ জানায়, তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ও সাজা পরোয়ানা রয়েছে। একটি মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত মামুনকে ২০২১ সালে পল্লবী থেকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। পরে জামিনে মুক্ত হয়ে তিনি মালয়েশিয়ায় পালিয়ে যান।

‎আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মামুনের সঙ্গে গার্মেন্টস ব্যবসা ও যুবদলের কমিটি নিয়ে কিবরিয়ার বিরোধ ছিল। ঘটনার দশ-বারো দিন আগে মামুন পল্লবী থানা যুবদলের কমিটিতে নিজের লোকদের পদ দিতে ও মিরপুর-৭ নম্বরের ডেকো গার্মেন্টসের নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন। এসব নিয়েই তাঁদের মধ্যে বিরোধ চলছিল। এরই জেরে খুন হয়েছেন যুবদল নেতা কিবরিয়া।

গতকাল পল্লবীতে কিবরিয়ার বাড়ির সামনে কথা হয় কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের এক নেতার সঙ্গে। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যারা হত্যা করেছে তারা চিহ্নিত মাদক কারবারি। এলাকায় মাদক ব্যবসায় বাধা দেওয়ায় কিবরিয়াকে হত্যা করা হয়েছে।’

‎কিবরিয়ার বন্ধু মাসুদ রানা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে সবার সঙ্গে কিবরিয়ার সুসম্পর্ক ছিল। তবে কিছুটা চাপা স্বভাবের। তাই কারওর সঙ্গে শত্রুতা রয়েছে কিনা তা আমরা জানতাম না।’

‎গতকাল শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে বিকেল মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনের ১ নম্বর লেনে নিজ বাড়িতে গোলাম কিবরিয়ার মরদেহ নেওয়া হয়। সেখানে ছোট ভাই গোলাম কবির আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার ভাই এলাকার সবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতেন। এলাকায় তার বেশ পরিচিতি। এই পরিচিতও তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের জন্য ঈর্ষার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তদন্তে বিষয়গুলো দ্রুতই বেরিয়ে আসবে।’

‎এদিকে এই ঘটনায় গতকাল বিকেলে ডিএমপির পল্লবী থানায় নিহত কিবরিয়ার স্ত্রী সাবিহা আক্তার দিনা বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেছেন। মামলায় আসামি হিসেবে জনিসহ পাঁচজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। আসামিরা হলেন, মো. জনি ভূঁইয়া (২৫), সোহেল ওরফে পাত্তা সোহেল ওরফে মনির হোসেন (৩০), সোহাগ ওরফে কালু (২৭), মাসুম ওরফে ভাগিনা মাসুম (২৮) ও রোকন (৩০)। এ ছাড়া অজ্ঞাত পরিচয় আরও সাত-আটজন এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। মামলাটি তদন্ত করছে পল্লবী থানা-পুলিশ।

‎মামলার তদন্তের বিষয়ে ডিএমপির মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আটক জনি ভূঁইয়া যুবদল নেতা কিবরিয়া হত্যায় সরাসরি অংশ নেওয়ার কথা স্বীকার করেছে। হত্যার পেছনে মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন বিষয়ই তথ্য পাচ্ছি। তবে সবগুলো বিষয় আমলে নিয়েই আমরা তদন্ত করছি। আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে হত্যার পেছনে কারণ বের করার চেষ্টা করছি।’

প্রথম আলোতে হামলার ঘটনায় আরও ২ আসামি কারাগারে

‘যেকোনো মুহূর্তে’ যমুনা ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি ইনকিলাব মঞ্চের

সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় কিশোরগঞ্জের এক যুবক নিহত

হাদি হত্যার বিচার দাবিতে আবারও শাহবাগ মোড়ে ইনকিলাব মঞ্চ

‎জবির ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন

ঢাকায় ঘন কুয়াশা : ৮ ফ্লাইট নামল চট্টগ্রাম, কলকাতা ও ব্যাংককে

ঘন কুয়াশায় সাড়ে ১৪ ঘণ্টা পর দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌ-রুটে ফেরি চলাচল শুরু

তারেক রহমানের ওসমান হাদির কবর জিয়ারতকে ঘিরে শাহবাগ এলাকায় কড়া নিরাপত্তা

হাদির কবর জিয়ারতে আসবেন তারেক রহমান, শাহবাগ মোড় থেকে সরে গেল ইনকিলাব মঞ্চ

রাত পেরিয়ে সকাল, শাহবাগ ছাড়েননি হাদি হত্যার বিচার দাবিতে বিক্ষোভকারীরা