রাজধানীর মিরপুরে সক্রিয় ‘ফোর স্টার’ সন্ত্রাসী গ্রুপের আধিপত্য বিস্তার এবং রাজনৈতিক কোন্দলকে কেন্দ্র করে পল্লবীতে জাতীয়তাবাদী যুবদলের নেতা গোলাম কিবরিয়াকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। র্যাব বলছে, ওই গ্রুপকে চাঁদাবাজি ও মাদক কারবারে সহযোগিতা করতে অস্বীকৃতিও এই হত্যার কারণ। বড় অঙ্কের অর্থের লেনদেনে ভাড়াটে খুনি দিয়ে তাঁকে হত্যা করানো হয়।
কিবরিয়া হত্যার ঘটনায় গত মঙ্গলবার দুজনকে গ্রেপ্তারের পর গতকাল বুধবার এসব তথ্য জানান র্যাব-৪-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মাহবুব আলম। গ্রেপ্তার এই দুজন হলেন হত্যার নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনাকারী মো. মনির হোসেন ওরফে সোহেল ওরফে পাতা সোহেল (৩০) ও মো. সুজন ওরফে বুকপোড়া সুজন (৩৫)। তাঁরা পল্লবীতে ‘ফোর স্টার’ গ্রুপের সক্রিয় সদস্য। গত সোমবার সন্ধ্যায় একটি দোকানে ঢুকে গুলি করে কিবরিয়াকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়ার সময় মো. জনি ভূঁইয়া নামের একজনকে স্থানীয় লোকজন আটক করে পুলিশে দেন। কিবরিয়া (৫০) পল্লবী থানা যুবদলের সদস্যসচিব ছিলেন। হত্যার ঘটনায় তাঁর স্ত্রী সাবিহা আক্তার দিনা মঙ্গলবার জনিসহ পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা সাত-আটজনকে আসামি করে পল্লবী থানায় মামলা করেন।
র্যাবের সূত্র জানায়, মিরপুর এলাকায় মাদক নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত ফোর স্টার গ্রুপ। ফোর স্টারের নিয়ন্ত্রণকারী হলেন বিদেশে পলাতক মিরপুরের চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও মাদক কারবারি মফিজুর রহমান ওরফে মামুন, ইব্রাহীম, সাহাদাত ও মোক্তার। তাঁদের ছত্রচ্ছায়ায় ও নির্দেশে মিরপুরে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হয়।
কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে গতকাল বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে লে. কর্নেল মো. মাহবুব আলম বলেন, মঙ্গলবার দিবাগত রাতে সাভারের বিরুলিয়া থেকে হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনাকারী মো. মনির হোসেন ওরফে সোহেল ওরফে পাতা সোহেল এবং টঙ্গী পশ্চিম থানার মাজার বস্তি এলাকা থেকে হত্যাকাণ্ডে জড়িত ও ১৮টি মামলার পলাতক আসামি মো. সুজন ওরফে বুকপোড়া সুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ওই দুজনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর র্যাব জানায়, রাজনৈতিক কোন্দল ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে কিবরিয়া হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এটি সুপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড, যেখানে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়। পাতা সোহেলের নামে একাধিক হত্যা, ডাকাতি, মাদকসহ পল্লবী থানায় মোট আটটি মামলা রয়েছে।
লে. কর্নেল মো. মাহবুব আলম বলেন, ইব্রাহীম ও মামুনের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ফোর স্টার গ্রুপের সদস্যরা সন্ত্রাসী কার্যকলাপে লিপ্ত। এই ঘটনায় সোহেল ওরফে পাতা সোহেল অর্থ সরবরাহ করেন। এ জন্য প্রাথমিকভাবে জনিকে ৩০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। তবে তিনি কীভাবে অর্থ পেয়েছেন কিংবা কার কাছ থেকে পেয়েছেন, সেটা এখনো পরিষ্কার নয়।
হত্যার মোটিভ সম্পর্কে র্যাব-৪-এর অধিনায়ক বলেন, মিরপুরকেন্দ্রিক আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, মাদক কারবার ও অন্যান্য সন্ত্রাসী কার্যকলাপ এবং দ্বিতীয়টি হলো রাজনৈতিক কোন্দল। নিহত গোলাম কিবরিয়া একটি সংগঠনের সদস্যসচিব এবং মিরপুরে রাজনৈতিকভাবে খুব সক্রিয় ছিলেন। আগে তাঁর সঙ্গে যাঁদের সখ্য ছিল, রাজনৈতিক মেরুকরণের পর সেই সখ্যের বিরুদ্ধে তিনি কাজ করছিলেন। বিশেষ করে এলাকায় চাঁদাবাজি ও মাদক কারবারের বিষয়ে তাঁর সমর্থন ছিল না। হয়তো এ কারণে হত্যাকাণ্ড ঘটে থাকতে পারে।
র্যাবের সূত্র বলছে, কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডে সন্ত্রাসী মামুনের সরাসরি সম্পৃক্ততা আছে কি না, তা অনুসন্ধান করা হচ্ছে। এই ঘটনায় অপরাধ জগতের যোগাযোগ থাকতে পারে। মামলায় নাম উল্লেখ করা পাঁচজনের বাইরেও হত্যায় জড়িত আরও পাঁচজনকে শনাক্ত করা গেছে। তবে কিলিং মিশনে থাকা অপর একজনের নাম এখনো জানা যায়নি। গুলি করা বাকি দুজনকেও গ্রেপ্তার করা যায়নি। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের কাছ থেকেও তাঁদের বিষয়ে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। তবে শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের পর দ্রুতই এই হত্যার রহস্য উন্মোচিত হবে।