‘ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড’ এবং ‘ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেড’-এর স্বত্বাধিকারী দিলীপ কুমার আগরওয়ালার বিরুদ্ধে এবার মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। অবৈধভাবে ৬৭৮ কোটি টাকারও বেশি অর্থ মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগে মামলাটি করা হয়। চোরাচালানের মাধ্যমে স্বর্ণ ও হিরা সংগ্রহ করে অবৈধ পন্থায় অর্জিত বিশাল অঙ্কের অর্থ মানিলন্ডারিংয়ের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় এ মামলা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সিআইডি।
একাধিক হত্যা মামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া দিলীপ কুমার আগরওয়ালা গত ১ অক্টোবর কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। তবে তাঁর কারামুক্তির বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জনসমক্ষে আসে ১৫ দিন পর।
গতকাল সোমবার ১৭ নভেম্বর গুলশান থানায় মামলাটি করে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট। আজ মঙ্গলবার সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সিআইডি জানায়, চোরাচালানের মাধ্যমে স্বর্ণ ও হিরা সংগ্রহ করে ৬৭৮ কোটি ১৯ লাখ ১৪ হাজার ১৪ টাকার মানিলন্ডারিংয়ের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় গতকাল সোমবার গুলশান থানায় মামলাটি (মামলা নং-৩০) করা হয়। সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর সংশোধিত ধারায় এ মামলা রুজু করে।
সিআইডি আরও জানায়, প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক লেনদেন, নথিপত্র ও ব্যাংক হিসাব পর্যালোচনা করে গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে অনুসন্ধান শুরু হয়। অনুসন্ধানে দেখা যায়, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এলসির মাধ্যমে বৈধভাবে ৩৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকার স্বর্ণবার, অলংকার ও অন্যান্য দ্রব্য আমদানি করেছিল। কিন্তু একই সময়ে স্থানীয় বাজার থেকে ক্রয়/বিনিময়/পরিবর্তন পদ্ধতিতে তারা ৬৭৮ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের স্বর্ণ ও হিরা সংগ্রহ করে, যার উৎস বা সরবরাহকারী সংক্রান্ত কোনো বৈধ নথি সিআইডিকে দেখাতে ব্যর্থ হন দিলীপ কুমার আগরওয়ালা।
বৈধ নথিপত্রের অভাবে, বিপুল অঙ্কের এই স্বর্ণ ও হিরা অবৈধ চোরাচালানের মাধ্যমে দেশে আনা হয়েছে এবং এই অপরাধলব্ধ অর্থ রূপান্তর ও হস্তান্তর করে মানিলন্ডারিং করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে বলে জানিয়েছি সিআইডি।
এর আগে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিলীপ কুমার আগরওয়ালাকে গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার করে র্যাব। পরদিন তাঁকে একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় এবং আদালতের মাধ্যমে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। এরপর বিভিন্ন হত্যা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
পুলিশ ও আদালত–সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, একাধিক মামলায় জামিনের আবেদন করলে উচ্চ আদালত ও ঢাকার আদালত থেকে তিনি জামিন পান। সব মামলায় জামিন পাওয়ার পর গত ১ অক্টোবর তিনি কারাগার থেকে ছাড়া পান। তবে সেটি গণমাধ্যমে আসে আরও ১৫ দিন পর।
দিলীপ কুমার আগরওয়ালা কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক উপকমিটির সদস্য। তিনি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চুয়াডাঙ্গা-১ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন।