ঠিকমতো হাজিরার টাকা না দেওয়া ও খারাপ আচরণের কারণের ক্ষোভ থেকে রাজধানীর শাহবাগ থেকে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে নিয়ে মাদ্রাসাছাত্র আতিক হাসানকে (১৩) হত্যা করে তার বাবার দোকানের কর্মচারী। এ ঘটনায় কর্মচারী তারেক মিয়া ওরফে নুর আলম (২০) ও তাঁর দুই সহযোগী নিরব মন্ডল (২১) ও প্রিয়ন্ত মন্ডলকে (১৯) গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
এ বিষয়ে র্যাব-৩-এর স্টাফ অফিসার (মিডিয়া) শাহনাজ জেসমিন বুধবার (১৯ নভেম্বর) বিকেলে এ তথ্য জানিয়েছেন।
শাহনাজ জেসমিন জানান, শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ী বাবুল হোসেনের ছেলে মাদ্রাসাছাত্র আতিক হাসান (১৩) ১৪ নভেম্বর মার্কেটসংলগ্ন রাস্তা থেকে নিখোঁজ হন। পরে বাবুল হোসেন এ ঘটনায় শাহবাগ থানায় একটি জিডি করেন। ওই দিনই অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি তাঁকে ফোন করে এক কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। দাবি করা টাকা দিলে তাঁর ছেলেকে ছেড়ে দেওয়া হবে বলেও ওই অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি জানান। বাবুল বিষয়টি পরদিন (১৬ নভেম্বর) র্যাবকে জানান এবং একটি অভিযোগ দেন। পরে তথ্যপ্রযুক্তির সহযোগিতা ও গোয়েন্দা নজরদারি চালিয়ে র্যাব গত ১৮ নভেম্বর দোকানের কর্মচারী তারেক মিয়াকে বাংলামোটর থেকে গ্রেপ্তার করে।
শাহনাজ জেসমিন জানান, জিজ্ঞাসাবাদে তারেকের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) দুপুরে দিয়াবাড়ির উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের ৩ নম্বর ব্রিজের পূর্ব-দক্ষিণ পাশে লেকের পানির মধ্যে কচুরিপানার নিচ থেকে আতিকের লাশ উদ্ধার করা হয়। এরপর তুরাগের বৃন্দাবন এলাকা থেকে দুই সহযোগী নিরব মন্ডল ও প্রিয়ন্ত মন্ডলকে ওই দিন রাতেই গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান র্যাব কর্মকর্তা শাহনাজ জেসমিন।
গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার ইসমাইল ভূঁইয়ার ছেলে তারেক মিয়া ওরফে নুর আলম, ঢাকা জেলার দোহারের রমেশ চন্দ্র মন্ডলের ছেলে নিরব মন্ডল ও পল্লবীর মৃত অমল মন্ডলের ছেলে প্রিয়ন্ত মন্ডল।
শাহনাজ জেসমিন বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া তারেক মিয়া আতিক হাসানের বাবার দোকানের কর্মচারী। তিনি মাদ্রাসাছাত্র আতিককে নিয়মিত মাদ্রাসায় আনা-নেওয়া করতেন। ঘটনার দিন ১৪ নভেম্বর মাদ্রাসা বন্ধ থাকায় ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে মেট্রোরেলে চড়ে তাকে দিয়াবাড়ি নিয়ে আসেন। একপর্যায়ে সুযোগ বুঝে আতিককে হত্যা করে লেকের পানির কচুরিপানার ভেতর লাশ গুম করে রাখেন।
হত্যাকাণ্ডের কারণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে র্যাব কর্মকর্তা জেসমিন জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে বলেন, আতিকের বাবা বাবুলের দোকানে তারেক নিয়মিত কাজ করতেন। কিন্তু বাবুল তারেককে ঠিকমতো হাজিরার টাকা দিতেন না এবং অত্যন্ত জঘন্য আচরণ করতেন। দীর্ঘদিন ধরে এমন আচরণের কারণে তারেকের ভেতর ক্ষোভ সৃষ্টি হয় এবং প্রতিশোধের সুযোগ খুঁজতে থাকেন। একপর্যায়ে মাদ্রাসা বন্ধের সুযোগ পেয়ে আতিককে বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে পরিকল্পনা করে হত্যা করেন। পরে ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য তারেক বিভিন্ন নাম্বার থেকে ফোন করে বাবুলের কাছে মুক্তিপণ দাবি করেন।
গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থার জন্য তুরাগ থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে র্যাব।