চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য নির্ধারিত ‘পোষ্য’ কোটা বাতিল করা হয়েছে। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ইউনিটে আবেদনের ন্যূনতম জিপিএর মান কমানোসহ বিভাগগুলোর আসন কমিয়ে সর্বোচ্চ ১০০টি নির্ধারণ করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম এ তথ্য জানান। এর আগে গত রোববার উপাচার্যের সম্মেলনকক্ষে ভর্তি পরীক্ষা কমিটির দ্বিতীয় সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়।
সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘পোষ্য কোটা বাতিলের জন্য শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন ও দাবি জানিয়ে আসছিল। তাদের সেই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আমরা এই কোটাব্যবস্থা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
ভর্তি পরীক্ষার সময়সূচি
বৈঠকে ভর্তি পরীক্ষার সময়সূচির বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সংশোধিত সময়সূচি অনুযায়ী, ২ জানুয়ারি ‘এ’ ইউনিটের পরীক্ষার মধ্য শুরু হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কার্যক্রম।
এ ছাড়া, ৩ জানুয়ারি ‘ডি’ ইউনিট, ৯ জানুয়ারি ‘সি’ ইউনিট ও ১০ জানুয়ারি ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। উপ-ইউনিটগুলোর মধ্যে ডি-১ ইউনিটের (শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়াবিজ্ঞান বিভাগ) পরীক্ষা হবে ৫ জানুয়ারি, বি-১ ইউনিটের ৭ জানুয়ারি ও বি-২ ইউনিটের পরীক্ষা হবে ৮ জানুয়ারি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার অনলাইন আবেদন ১ ডিসেম্বর শুরু হয়ে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে।
এবার বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করার ক্ষেত্রে জিপিএর ন্যূনতম মান গত বছরের তুলনায় শূন্য দশমিক ২৫ পয়েন্ট কমানো হয়েছে। ‘এ’ ইউনিটে (বিজ্ঞান অনুষদ) আবেদনকারীদের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে (চতুর্থ বিষয়সহ) সর্বনিম্ন মোট জিপিএ ৭ দশমিক ৭৫ থাকতে হবে, তবে আবেদনকারীকে আলাদাভাবে মাধ্যমিক কমপক্ষে ৪ পয়েন্ট এবং উচ্চমাধ্যমিকে কমপক্ষে ৩ দশমিক ২৫ থাকতে হবে।
‘বি’ ইউনিটে (কলা ও মানবিক অনুষদ) মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য আবেদন করার ক্ষেত্রে ন্যূনতম মোট জিপিএ ৭ পয়েন্ট এবং বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য ৭ দশমিক ৫০ নির্ধারিত হয়েছে।
‘সি’ ইউনিটে (ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ) ন্যূনতম মোট জিপিএ নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ দশমিক ৫০। ‘ডি’ ইউনিটে (সমন্বিত ইউনিট) সব বিভাগ থেকে আবেদন করা যাবে, যেখানে মোট জিপিএ নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ পয়েন্ট।
চলতি বছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় ফলাফল বিপর্যয়ের বিষয়টি বিবেচনা রেখে এই ছাড় দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে মাধ্যমিকের ফলাফলের ক্ষেত্রে আগের শর্তই বহাল থাকছে। এ ছাড়া যেসব বিভাগে শতাধিক আসন ছিল, সেসব বিভাগ সর্বোচ্চ ১০০ আসনে সীমিত করা হয়েছে।
নতুন শিক্ষাবর্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পোষ্য কোটা পুরোপুরি বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ৯টি কোটা থাকবে। এগুলো হলো—মুক্তিযোদ্ধা সন্তান, বিদেশি শিক্ষার্থী, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, সুবিধাবঞ্চিত গোষ্ঠী, পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালি শিক্ষার্থী, শারীরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী, বিকেএসপির খেলোয়াড়, পেশাদার খেলোয়াড় ও দলিত শিক্ষার্থী।
উল্লেখ্য, গত বছরের জুলাই আন্দোলনের সময় থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পোষ্য কোটা সম্পূর্ণ বাতিলের দাবি জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভর্তি কমিটি ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে কোটার সংখ্যা দুই-তৃতীয়াংশ কমিয়ে আনে। এবার নতুন শিক্ষাবর্ষে তা সম্পূর্ণ বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে।