রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য মানবিক সহায়তার অংশ হিসেবে দ্বিতীয় দফায় ২০ হাজার ২৫৬ টন চাল দিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। আজ মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রামের অলংকার মোড়ে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) গুদামে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই চাল হস্তান্তর করা হয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশে নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত ইয়ং সিক পার্ক এবং ডব্লিউএফপির কান্ট্রি ডিরেক্টর ডম স্কালপেলি।
এ দিন কোরিয়ার কৃষক দিবস হওয়ায় অনুষ্ঠানে কোরীয় কৃষকদের পরিশ্রম ও অবদানকেও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়।
কোরিয়ার কৃষি, খাদ্য ও গ্রামীণবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দেওয়া এই চালের সঙ্গে প্রথমবারের মতো যুক্ত হয়েছে ফর্টিফায়েড রাইস কার্নেল, যাতে রয়েছে ভিটামিন এ, বি১, বি১২, আয়রন, জিঙ্ক, ফলিক অ্যাসিডসহ প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ। চালের সঙ্গে ১: ১০০ অনুপাতে এই কার্নেল মিশিয়ে কক্সবাজারে পাঠানো হবে, সেখানে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে তা বিতরণ করবে ডব্লিউএফপি।
ডব্লিউএফপি জানায়, এই অনুদান রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ১১ লাখের বেশি মানুষের দুই মাসের খাদ্য চাহিদা পূরণে সহায়ক হবে। এটি কোরিয়ার বৈশ্বিক মানবিক সহায়তার অংশ, যার আওতায় ১৭টি দেশে ১ লাখ ৫০ হাজার টন চাল দিয়েছে দেশটি।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ২০১৭ সাল থেকে প্রায় ১৫ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অস্থায়ীভাবে আশ্রয় নিয়েছে। সরকার, স্থানীয় সম্প্রদায় ও সরকারি-বেসরকারি সংস্থার সহায়তায় তাদের দেখভাল করা হচ্ছে। কিন্তু এখন তহবিল সংকট দেখা দিয়েছে, যা রোহিঙ্গাদের জীবনযাত্রায় সরাসরি প্রভাব ফেলছে। তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন না হওয়া পর্যন্ত মানবিক সহায়তা চালু রাখা জরুরি। কোরিয়ান সরকারের সহায়তা এই মুহূর্তে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সময়োপযোগী। এটি দুই-তিন মাসের জন্য রোহিঙ্গাদের খাদ্যসংকট লাঘবে সহায়ক হবে।
দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত ইয়ং সিক পার্ক বলেন, ‘এক দশক আগেও আমরা ডব্লিউএফপির সহায়তা নিয়েছি। আজ আমরা নিজেরা সহায়তার হাত বাড়াতে পারছি। এটাই আমাদের গর্ব। বাংলাদেশ সরকার ও ডব্লিউএফপির সঙ্গে আমরা মানবিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখব।’
ডব্লিউএফপির কান্ট্রি ডিরেক্টর ডম স্কালপেলি বলেন, কোরিয়া এখন উদাহরণ—যারা সাহায্য পেত, তারাই আজ দাতা। তাদের এই সহানুভূতি সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ক। বাংলাদেশও মানবিকতার উজ্জ্বল উদাহরণ স্থাপন করেছে।
প্রসঙ্গত, রোহিঙ্গা সংকট এখন নবম বছরে প্রবেশ করেছে। মিয়ানমারের রাখাইন অঙ্গরাজ্যে সহিংসতা বাড়ার কারণে ২০২৪ সালের শুরু থেকে আরও ১ লাখ ৩০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে। ২০২৫ সালের খাদ্যনিরাপত্তা মূল্যায়ন অনুযায়ী, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ৪০ শতাংশের বেশি মানুষ গুরুতর খাদ্যসংকটে ভুগছে। ডব্লিউএফপি জানিয়েছে, ২০২৬ সালের জন্য রোহিঙ্গাদের জন্য অর্থায়ন পরিস্থিতি অত্যন্ত অনিশ্চিত; নতুন তহবিল না পেলে আগামী এপ্রিল থেকে সহায়তা কার্যক্রমে বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটতে পারে।