বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ ও তিন দিনের টানা বৃষ্টিতে চাঁদপুরের মতলব উত্তরের বিভিন্ন এলাকায় হাজারো মাছের ঘের ও পুকুর প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ৫ কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। এ ছাড়া পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ।
বিশেষ করে চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের ভেতরে অতি বৃষ্টির কারণে পানি জমে যায়। এ ছাড়া বেড়িবাঁধের বাইরে ও চরাঞ্চলের প্রায় ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দী রয়েছেন। পানিবন্দী থাকায় তিন দিন রান্না করতে পারেনি অনেক পরিবার। ফলে পরিবারগুলো মানবেতর জীবনযাপন করছে।
সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার দপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলায় ৩ হাজার ৭৯৬টি পুকুরে মাছ চাষ হয়। এতে ৬ হাজার ৬৫০ টন মাছ উৎপাদিত হবে। আর এ উপজেলায় মাছের চাহিদা রয়েছে ৬ হাজার ১৮০ টন। উৎপাদিত মাছের বাজার মূল্য প্রায় ১৩৩ কোটি টাকা। এ দিকে পানি কমতে শুরু করলেও মাছ চাষিদের মুখে হাসি নেই। ঘের ও পুকুরের মাছ বের হয়ে যাওয়ায় নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন চাষিরা।
উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামের মৎস্য চাষি বাবুল মেম্বার বলেন, গত বৃহস্পতিবার থেকে শনিবারের টানা বৃষ্টিতে মাছের ঘের তলিয়ে আমার অন্তত ৫০ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে। শুধু আমার নয়, এলাকার বিভিন্ন মানুষের ঘের ও পুকুর ডুবে গেছে। এতে অনেক মাছ চাষি নিঃস্ব হয়ে গেছেন।
পাঁচানী গ্রামের মৎস্য চাষি আলম সরকার ও সোহাগ সরকার বলেন, এনজিও থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে মাছ ছেড়েছি। কিছুদিন পরে মাছ বিক্রি করার ইচ্ছা ছিল। বৃষ্টিতে সব শেষ হয়ে গেল আমার। এখন কী করব বুঝতে পারছি না।
মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী অফিসার গাজী শরিফুল হাসান বলেন, বৃষ্টির পানিতে আমার উপজেলার অনেক মানুষ পানিবন্দী রয়েছেন। আমরা পানিবন্দী মানুষদের সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি।
কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক জিএম ফারুক বলেন, বৃষ্টিতে মতলব উত্তরের প্রায় ২ হাজার ঘের ও পুকুর ভেসে গেছে। চাষিদের ক্ষতি পোষাতে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া হবে।
সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মনোয়ারা বেগম বলেন, টানা বৃষ্টিতে মৎস্য ঘের ও পুকুর ভেসে গেছে। আমি নিজেও বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখেছি। এতে চাষিদের প্রায় ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। চাষিরা নেট দিয়ে মাছ রক্ষার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। আমরা চাষিদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। এ ক্ষতি পোষাতে চাষিদের প্রশিক্ষণ ও সরকারি বিভিন্ন প্রণোদনা দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।
মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী অফিসার গাজী শরিফুল হাসান বলেন, অতিবর্ষণের কারণে উপজেলায় বরাবরের মতো এবারও কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বেড়িবাঁধের বাইরে ও চরাঞ্চলে ভাটার সময় আবার সেই পানি নেমেও গেছে। এতে কিছু মাছের ঘেরও ভেসে গেছে। সব মিলিয়ে কী পরিমাণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমরা সেই তালিকা প্রস্তুতের কাজ করছি।
নির্বাহী অফিসার আরও বলেন, বৃষ্টির কারণে তলিয়ে যাওয়া এলাকার পানি দ্রুত নিষ্কাশনের ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশ দিয়েছি।