বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় ডিবি পুলিশ পরিচয়ে এক ব্যবসায়ীকে মাইক্রোবাসে তুলে অপহরণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। পরে মাইক্রোবাসের মালিকের বুদ্ধিমত্তায় পুলিশ মাইক্রোবাসের চালককে আটক এবং লাশ উদ্ধার করেছে। নিহত ব্যক্তির নাম পিন্টু আকন্দ (৩৮)। তিনি দুপচাঁচিয়া বাজার এলাকায় লোটো শোরুমের ব্যবস্থাপক ছিলেন।
সোমবার রাত ১২টার দিকে আদমদীঘি থানার কোমারভোগ গ্রামের একটি রাস্তা থেকে মাইক্রোবাসটি জব্দ করে পুলিশ। এ সময় গাড়িটির পেছনের সিট থেকে পিন্টু আকন্দের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তাঁর নাক ও মুখ স্কচটেপ দিয়ে প্যাঁচানো ছিল। ঘটনাস্থল থেকে মাইক্রোবাসের চালক সানোয়ার হোসেনকে (৪০) আটক করা হয়।
পিন্টু আকন্দ নওগাঁ জেলার রাণীনগর উপজেলার লৌহচড়া গ্রামের মৃত আয়েজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি চার বছর ধরে দুপচাঁচিয়া বাজার এলাকায় বসবাস করছিলেন এবং তাঁর শ্যালক বাবু ও ইলাহীর মালিকানাধীন লোটো শোরুমে ব্যবস্থাপকের দায়িত্বে ছিলেন।
স্থানীয় লোকজন জানায়, সোমবার রাত সোয়া ৯টার দিকে সাদা রঙের একটি মাইক্রোবাস দুপচাঁচিয়া উপজেলা পরিষদ সড়কের খন্দকার মার্কেটের সামনে থামে। মাইক্রোবাস থেকে তিন-চার ব্যক্তি নেমে শোরুমে প্রবেশ করে কয়েক মিনিটের মধ্যেই পিন্টু আকন্দকে টেনেহিঁচড়ে গাড়িতে তুলে তালোড়ার দিকে নিয়ে যান।
মাইক্রোবাসের মালিক মশিউর রহমান পান্না জানান, সোমবার বিকেলে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে রাজশাহীতে আসামি ধরতে যাওয়ার কথা বলে দুপচাঁচিয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে তাঁর গাড়িটি ভাড়া নেওয়া হয়। সন্ধ্যা ৬টার পর ডিবি পুলিশ পরিচয় দেওয়া পাঁচ-ছয়জন দুপচাঁচিয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে মাইক্রোবাসে উঠে সান্তাহারের দিকে যান।
মশিউর রহমান বলেন, ‘গাড়িটি ভাড়া দেওয়ার পর থেকে জিপিএসের মাধ্যমে এর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছিলাম এবং চালকের সঙ্গে নিয়মিত ফোনে যোগাযোগ রাখছিলাম। পরে গাড়িটি সান্তাহার থেকে আবার দুপচাঁচিয়ায় ফিরে এলে চালক জানায়, রাজশাহী যাওয়া বাতিল হয়েছে, তালোড়ায় আসামি ধরতে যাবে। এর আগে দুপচাঁচিয়া থানা থেকে দুই পুলিশ সদস্য গাড়িতে উঠবেন বলেও জানায়।’
মশিউর রহমান পান্না আরও জানান, রাত ১০টার দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মাইক্রোবাসে এক ব্যবসায়ীকে অপহরণের ভিডিও দেখতে পান। এরপর জিপিএসের মাধ্যমে দেখতে পান, গাড়িটি তালোড়া হয়ে নন্দীগ্রাম, সিংড়ার কালীগঞ্জ হয়ে নওগাঁর রাণীনগর এলাকায় ঘুরে সান্তাহারে আসে এবং পরে আদমদীঘি উপজেলার ছাতিয়ানগ্রামে অবস্থান নেয়। এ সময় চালকের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব না হওয়ায় তিনি দুপচাঁচিয়া থানায় বিষয়টি জানান। পরে রাত ১১টার দিকে জিপিএসের মাধ্যমে গাড়িটি বন্ধ করে দেন।
এরপর সহকারী পুলিশ সুপার (আদমদীঘি সার্কেল) আসিফ হোসেনের নেতৃত্বে আদমদীঘি ও দুপচাঁচিয়া থানা-পুলিশ অভিযান চালিয়ে আদমদীঘি থানার কোমারভোগ গ্রামমুখী সড়কে তোফাজ্জল হোসেনের বাড়ির সামনে থেকে মাইক্রোবাসটি জব্দ করে। এ সময় চালককে আটক করা হয় এবং গাড়ি থেকে পিন্টু আকন্দের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
বগুড়া জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) আতোয়ার হোসেন বলেন, মাইক্রোবাসের চালকসহ তিনজনকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। পুরো ঘটনা জানতে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে পুলিশের একাধিক দল অভিযান চালাচ্ছে।