রংপুরের পীরগাছায় অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে অসুস্থ গরু জবাইয়ের পর মাংস কাটতে গিয়ে আক্রান্ত হন একজন; অন্যজন অসুস্থ গরুর মাংস রান্না করতে গিয়ে আক্রান্ত হন। এ ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
গত আগস্টে পীরগাছা সদরের মাইটাল এলাকার কৃষক আব্দুর রাজ্জাক অসুস্থ গরু জবাইয়ের পর মাংস কাটতে গিয়ে আক্রান্ত হন। কয়েক দিনের মধ্যেই তাঁর হাতে ঘা ছড়িয়ে পড়ে। পরে রংপুর কমিউনিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তাঁর স্ত্রী ফেন্সি বেগম বলেন, ‘আগস্টের মাঝামাঝি পাশের বাড়িতে একটি গরু অসুস্থ হয়ে পড়লে জবাই করা হয়। পরে আমার স্বামী মাংস কাটাকাটি করেন। এ সময় তাঁর একটি আঙুল অল্প কেটে যায়। পরে জ্বর আসে, হাতে ঘা ওঠে। এই ঘা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। পরে তাঁকে রংপুর কমিউনিটি মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকেরা জানান, পশু থেকে একধরনের ভাইরাস তাঁর শরীরে প্রবেশ করেছে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।’
অসুস্থ গরুর মাংস রান্না করতে গিয়ে আক্রান্ত হন পারুল ইউনিয়নের আনন্দী ধনিরাম গ্রামের গৃহিণী কমলা বেগম। পরিবারের ভাষ্য, সেই রান্নার দুদিন পরই তাঁর হাতে ঘা ওঠে এবং তা দ্রুত শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। অবস্থা গুরুতর হলে তাঁকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে ৬ সেপ্টেম্বর তিনি মারা যান। তাঁর স্বামী জয়নাল আবেদিন বলেন, ‘আমার ভাগিনার দুইটা গরু অসুস্থ হলে আমরা জবাই করি। স্ত্রী মাংস রান্না করার পরপরই ঘা ওঠে। দুই দিন পর অবস্থা খারাপ হলে হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানেই মারা যায়।’ তাঁর ছেলে দুলাল মিয়াসহ পরিবারের আরও তিনজন এখনো অসুস্থ।
স্থানীয় কৃষকেরা বলছেন, গত দুই মাসে এই রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। আনুমানিক ২০০ মানুষ এতে আক্রান্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত হাজারখানেক গবাদিপশু মারা গেছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার আঁখি সরকার বলেন, ‘প্রায় প্রতিদিনই ৫ থেকে ৭ জন রোগী আসছে। অনেক সময় এক পরিবারের সবাই আক্রান্ত হচ্ছে। অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গের সঙ্গে এই সংক্রমণের মিল রয়েছে।’
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা একরামুল হক মণ্ডল বলেন, ‘আমরা ৫০ হাজার ভ্যাকসিন বরাদ্দ পেয়েছি। প্রতিদিন ইউনিয়নভিত্তিক ভ্যাকসিন প্রয়োগ চলছে। শিগগির পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে।’ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মুহাম্মদ তানভীর হাসনাত রবিন বলেন, ‘অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর আশঙ্কা নেই। যাদের মৃত্যু হয়েছে, তারা অন্য কোনো রোগে মারা যেতে পারে। আর আক্রান্তদের আমরা চিকিৎসা দিচ্ছি, অল্প দিনেই সুস্থ হয়ে যাবে।’
রংপুরের সিভিল সার্জন শাহীন সুলতানা বলেন, বিষয়টি আইইডিসিআরকে জানানো হয়েছে। তারা নমুনা সংগ্রহ করে পাঠাতে বলেছে। কিন্তু এই নমুনা সংগ্রহ করা সহজ নয়। ঢাকা থেকে এসে নমুনা সংগ্রহ করা উচিত।