হোম > শিল্প-সাহিত্য

কিরীটী রায়ের রহস্যজগতে

ভদ্রলোকের উচ্চতা প্রায় সাড়ে ছয় ফুট। গায়ের রং ফরসা। বলিষ্ঠ দেহ। মাথাভর্তি ব্যাকব্রাশ করা কোঁকড়ানো চুল। চোখে পুরু লেন্সের কালো সেলুলয়েড চশমা। নিখুঁতভাবে কামানো দাড়িগোঁফ। মৃদুভাষী হলেও রসবোধ প্রবল। চলাফেরায় ক্ষিপ্রতা। মগজাস্ত্র কাজে লাগিয়ে একের পর এক রহস্য সমাধানে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। বুঝতেই পারছেন, ব্যক্তিটি আর কেউ নয়, কিরীটী রায়।

আজ সাহিত্যিক নীহাররঞ্জন গুপ্তের জন্মদিন। ১৯১১ সালের ৬ জুন পৃথিবীতে আসেন তিনি।  যশোরের (বর্তমান নড়াইল জেলার) লোহাগড়া উপজেলার ইটনায় জন্ম তাঁর। আজকের দিনে তাই তাঁর কালজয়ী সৃষ্টি গোয়েন্দা চরিত্র কিরীটী রায়ের গল্প শোনাব। 

নিজেকে রহস্যভেদী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন কিরীটী রায়। তাঁর স্ত্রীর নাম কৃষ্ণা। টালিগঞ্জে তাঁর বাড়ি আছে। আছে নিজস্ব একটি কালো অ্যাম্বাসেডর গাড়ি। গাড়ির ড্রাইভার হীরা সিং। ভৃত্যের নাম জংলী। গোয়েন্দাগিরিতে তাঁর সহকারী সুব্রত। কিরীটী ও তাঁর সহকারী দুজনেই চলাফেরা করেন ফিটফাট হয়ে। 

নিস্তব্ধ রাতে হঠাৎ হয়তো কোথাও থামল একটি গাড়ি। সাহেবি পোশাক পরা এক ভদ্রলোক নামলেন দরজা খুলে। নিশ্চিত জটিল কোনো রহস্য সমাধানে বেরিয়েছেন। বাঙালি হলেও কিরীটী রায়কে অসাধারণ দক্ষতায় সাহেবি কেতায় চালচলনের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছেন লেখক। মাথায় হ্যাট, গায়ে কোট, মুখে হাভানা চুরুট, চমৎকার ইংরেজি বচন—সবকিছু মুগ্ধ করে পাঠককে। তবে অবশ্যই কিরীটীর প্রতি পাঠকের আগ্রহের মূল কারণ তাঁর সঙ্গে জটিল সব রহস্যের জালে জড়িয়ে পড়ার সুযোগ।

কিন্তু কীভাবে জন্ম কিরীটী রায়ের? এর পেছনে কি বাস্তবের কোনো ঘটনার ভূমিকা আছে? কিসে অনুপ্রাণিত হয়ে চরিত্রটি সৃষ্টি করেছেন লেখক? নীহাররঞ্জন গুপ্ত নিজেই দুটি ঘটনার কথা বলেছেন। একটি একেবারে ছোটবেলায়। আরেকটি যৌবনের শুরুতে। একটি আত্মহত্যা, অন্যটি হত্যা। এ দুটি ঘটনাই পরবর্তী সময়ে কিরীটীর মতো একটি গোয়েন্দা চরিত্র নির্মাণে প্ররোচিত করে নীহাররঞ্জন গুপ্তকে।

প্রথম যৌবনের ঘটনাটি ঘটে নীহাররঞ্জনের পাড়ার এক পোড়ো জমিদারবাড়িতে। ভরদুপুরে সেখানে অন্তঃসত্ত্বা বিধবা বৌদিকে গুলি করে হত্যা করে যক্ষ্মারোগে আক্রান্ত রুগ্‌ণ, সুপুরুষ দেবর।

ঘরে ঢুকে থমকে দাঁড়িয়েছিলেন নীহাররঞ্জন গুপ্ত। শ্বেতপাথরের মেঝের ওপর পড়ে আছে মৃতদেহ। রক্ত জমাট বেঁধে ছিল। নীহাররঞ্জনের ভাষায়, ‘কেউ বুঝি সাদা পাথরের মেঝের ওপর মুঠো মুঠো রক্তগোলাপের পাপড়ি ছড়িয়ে দিয়েছে।’

অপর ঘটনাটি অবশ্য তাঁর বাল্যকালের। তবে এতে রহস্যের তেমন কিছু ছিল না। গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন সুন্দরী এক নারী।

নীহাররঞ্জন গুপ্তকে অনুপ্রাণিত করে লেখক পাঁচকড়ি দেও। উনিশ শতকের শেষ থেকে বিশ শতকের গোড়া পর্যন্ত তাঁর লেখা গোয়েন্দাকাহিনি কেড়ে নেয় বহু পাঠকের মন। এদিকে যুক্তরাজ্যে গিয়ে বিখ্যাত রহস্যকাহিনি লেখিকা আগাথা ক্রিস্টির সঙ্গে পরিচয় হয় নীহাররঞ্জনের। এটিও নিঃসন্দেহ তাঁকে উৎসাহ জুগিয়েছে একটি গোয়েন্দা চরিত্র সৃষ্টিতে। 

ভারতের পাশাপাশি বার্মা, অর্থাৎ বর্তমান মিয়ানমারেও রহস্যভেদে যেতে দেখা যায় এই গোয়েন্দাকে। কিরীটীর অনেক কাহিনিতে যৌনতা বা যৌনবিকৃতি রহস্যের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে ওতপ্রোতভাবে। তেমনি নীহাররঞ্জন নিজে চিকিৎসক হওয়ায় এই জ্ঞানের প্রয়োগও চোখে পড়ে কোনো কোনো কিরীটী কাহিনিতে।

আর সাহিত্যজগতে কিরীটী রায়ের আবির্ভাব ‘কালো ভ্রমর’ উপন্যাসের মাধ্যমে। ১৯৩০-এর দশকে উপন্যাসটি লেখেন। ১৯৬৩ সালে এটি মিত্র ও ঘোষ প্রকাশনী থেকে চার খণ্ডে প্রকাশিত হয়। তারপর প্রকাশ পেতে থাকে একের পর এক কিরীটী কাহিনি। বাঙালি কিশোর-তরুণ-তরুণীর এতে বুঁদ হয়ে যেতে সময় লাগে না। এমনকি বুড়ো বয়সেও কিরীটীতে মুগ্ধ অনেক পাঠক। নীহাররঞ্জন রায়ের মৃত্যুর দেড় যুগ পরে এখনো অটুট কিরীটীর জনপ্রিয়তা।

যদ্দুর জানা যায়, গল্প-উপন্যাস মিলিয়ে কিরীটী রায়কে নিয়ে ৮০টির বেশি কাহিনি লিখেছেন নীহাররঞ্জন গুপ্ত। মিত্র ও ঘোষ থেকে প্রকাশিত হয়েছে ১৫ খণ্ডের কিরীটী অমনিবাস।

কিরীটী রায়কে নিয়ে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়েছে। বিশেষ করে গত কয়েক বছরে এ ধরনের কয়েকটি চলচ্চিত্র আকৃষ্ট করেছে পাঠক-দর্শককে। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে মুক্তি পায় ‘কিরীটী ও কালো ভ্রমর’। ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত ও কৌশিক সেন অভিনীত চলচ্চিত্রটিতে কিরীটীর চরিত্রে দেখা যায় ইন্দ্রনীলকে। একই বছরের ডিসেম্বরে মুক্তি পায় ‘কিরীটী রায়’। অনিকেত চট্টোপাধ্যায়ের পরিচালনায় চিরঞ্জিত চক্রবর্তী, স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় অভিনয় করেন। কিরীটী চরিত্রে ছিলেন চিরঞ্জিত।

২০১৭ সালে নির্মিত ‘এবং কিরীটী’ চলচ্চিত্রটির পরিচালক অনির্বাণ পারিয়া। কিরীটী চরিত্রে দেখা যায় প্রিয়াংশু চ্যাটার্জীকে। এদিকে ২০১৮ সালে অনিন্দ্য বিকাশ দত্তের পরিচালনায় মুক্তি পায় ‘নীলাচলে কিরীটী’। এই ছবিতে কিরীটী চরিত্রে ফিরে আসেন ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত।

এমনকি কিংবদন্তি অভিনেতা উত্তম কুমারও নাকি কিরীটী রায়ের ওপর ভিত্তি করে চলচ্চিত্র তৈরির জন্য ধরনা দিয়েছিলেন নীহাররঞ্জন গুপ্তের কাছে। তবে নীহাররঞ্জন রাজি হননি। কারণ উত্তমকে কিরীটীর চরিত্রের সঙ্গে মেলাতে পারেননি তিনি। অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন কিরীটী চরিত্রের জন্য তাঁর প্রথম পছন্দ।

সূত্র: আনন্দবাজার, উইকিপিডিয়া

তৌহিদুল হকের গুচ্ছ কবিতা

বিদায় নেওয়া হুমায়ূন এখনো আছেন

‘হীরক রাজার দেশে’ মঞ্চস্থ করল স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা

গবেষণায় বেরিয়ে এল আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’র গল্প

তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন

ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল যেন তাঁর দীর্ঘ কোনো বাক্যের সমাপ্তি

সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় লাসলো ক্রাসনাহোরকাইয়ের কলম

২০২৫ সালের সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন হাঙ্গেরিয়ান লেখক

কাজী নজরুলের ‘সাম্যবাদী’ কাব্যগ্রন্থের শতবর্ষপূর্তিতে ‘গাহি সাম্যের গান’ গ্রন্থ প্রকাশ

জুলাই বিপ্লবে প্রবাসীদের ভূমিকা নিয়ে আশিষ কিফায়েতের চলচ্চিত্র আমাদ’স ড্রিম