হোম > নারী

ইঞ্জিনিয়ারিং ছেড়ে সফল উদ্যোক্তা কানিজ ফাতেমা

মুহাম্মদ শফিকুর রহমান 

কানিজ ফাতেমা প্রিয়া মানামা। ছবি: সংগৃহীত

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে যখন উদ্যোক্তা হওয়ার মতো চ্যালেঞ্জিং কাজ বেছে নিলেন, আশপাশের মানুষ তখন রীতিমতো হইচই শুরু করে দিল। এ রকম সুযোগ কেউ কি হাতছাড়া করে? কিন্তু তিনি তখন স্বাধীনভাবে কিছু করার স্বপ্নে বিভোর। তিনি এখন কেবল সফল উদ্যোক্তাই নন, উদ্যোক্তা সৃষ্টির কারিগরও বটে। সাফল্যের এই গল্প যে মানুষের, তাঁর নাম কানিজ ফাতেমা প্রিয়া মানামা। কাপড়, রেস্টুরেন্টসহ একাধিক ব্যবসা করে তিনি সাফল্যের মুখ দেখেছেন।

স্বামী মঞ্জুরুল ইসলাম সুমন এবং দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে তাঁর পরিবার। স্বামী একজন চিত্রশিল্পী।

১৯৯৯ সালে উচ্চশিক্ষার জন্য চাঁদপুর থেকে ঢাকায় পাড়ি জমান কানিজ। এরপর শুধু এগিয়ে যাওয়ার পালা। ২০০৭ সালে তাঁর ‘ডিভাস স্টাইল’-এর অফিশিয়াল যাত্রা শুরু হয়। এরপর আর তাঁকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ডিভাস স্টাইলে মূলত তৈরি পোশাক; যেমন শাড়ি, পাঞ্জাবি, বেডশিট, শিশুদের পোশাক, কাপল ড্রেসসহ নিজস্ব ডিজাইনে পোশাক বিক্রি হয় অনলাইন এবং অফলাইন। এই প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে কাজ করছেন ২০ জন।

উদ্যোক্তা হিসেবে সাফল্য এলেও শুরুর দিকে কানিজের গল্পটা ছিল ভিন্ন। ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ভালো চাকরির সুযোগ ছেড়ে দেওয়াটা পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের অনেকে ভালোভাবে নেননি। মুখে না বললেও অনেকের আচরণে প্রকাশ পেয়েছে কটাক্ষ। কিন্তু এসব আচরণ কানিজ গায়ে মাখেননি। তিনি তাঁর মতো করে এগিয়েছেন। কানিজ বলেন, ‘আমি জানতাম, সফল হলে সবাই গ্রহণ করবে। তাই আমি আমার কাজে সর্বোচ্চ ফোকাস করতাম। জীবনটা আমার, তাই এর ভালো থাকাটা আমাকে নিশ্চিত করতে হবে। সফল হলে সবাই পাশে থাকে।’ কানিজের মা-বাবা শুরুর দিকে মেয়ের উদ্যোক্তা হওয়া সিদ্ধান্ত পছন্দ না করলেও এখন তাঁরা খুশি।

কানিজ ফাতেমার এক অনন্য উদ্যোগ আর্ট অব ডিভা ফাউন্ডেশন। তিনি উদ্যোক্তা হয়েই থেমে থাকেননি; গ্রামের নিম্ন আয়ের নারীদের স্বাবলম্বী করতে শুরু করেন আর্ট অব ডিভা। এর মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে পণ্য দেওয়া হয়। এই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে নারী উদ্যোক্তা তৈরির পাশাপাশি শীতকালে শীতবস্ত্র বিতরণ, ঈদ উপহারসামগ্রী বিতরণ, এতিমদের খাওয়ানোসহ বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজ করা হয়।

অনেক নারী উদ্যোক্তা শুরুটা বেশ ভালোভাবেই করেন। কিছুদিন যেতে না যেতেই ঝরে পড়েন। এমন হওয়ার কারণ কী? কানিজ বলেন, ‘আমাদের সমাজে সহযোগিতার অভাব, সেটা যেমন সামাজিক ও পারিবারিক—দুই জায়গাতেই। আবার অর্থ বিনিয়োগ করতে হয়। ব্যাংক জামানত চায়। এসবের ব্যবস্থা করতে না পারাই ঝরে পড়ার অন্যতম কারণ। তবে আমাদের দেশের নারী প্রথম বাধার সম্মুখীন হয় পরিবার থেকে। পরিবারের সহযোগিতা নারী উদ্যোক্তার জন্য অত্যন্ত জরুরি।’

দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার আলোকে কানিজ ফাতেমা নারী উদ্যোক্তাদের জন্য কিছু টিপস দিয়েছেন।

» যে বিষয়ে উদ্যোগ নিয়ে কাজ করতে চান, সে সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে।

» মার্কেট রিসার্চ করতে হবে।

» আপনি যেটা নিয়ে কাজ করবেন, তার চাহিদা সম্পর্কে জানা চাই।

» সঠিক কাঁচামাল নির্বাচন করা জরুরি।

কাজই কানিজ ফাতেমার ধ্যানজ্ঞান। কাজ করতে গিয়ে পুরস্কৃত হয়েছেন কয়েকবার। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে জয়িতা ২০১৯, পাওয়ার উইমেন পদ্মা ব্যাংক ২০২১, দক্ষিণ এশিয়ার ১০০ সেরা নারী উদ্যোক্তা অ্যাওয়ার্ড ২০২২।

ব্যবসা আরও বড় করবেন কানিজ ফাতেমা। সেখানে হাজারো মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। গ্রামের নিম্ন আয়ের নারীরা নিজেরাই উদ্যোক্তা হয়ে উঠবেন। এ জন্য ভবিষ্যতে অনেক কাজ করবেন, আপাতত এমনটিই তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা।

দিলরুবা হক মিলি: বনরক্ষী এক নারীর গল্প

অতীতের আলো, বর্তমানের অন্ধকার

জন্মনিবন্ধন করতে বাবার এনআইডি বা তথ্য বাধ্যতামূলক নয়

নারী আন্তর্জাতিক পেশাদার বক্সিংয়ে হিজাব, নিরাপত্তা নাকি প্রথা

পরিবেশ নিয়ে সরব দুই অভিনেত্রী

বিস্মৃত ছবিতে সামনে এল ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে নারীদের নেতৃত্ব

‘সচেতনতার অভাব ও সামাজিক কাঠামোর বৈষম্য নারীদের এগিয়ে যেতে বাধা দিচ্ছে’

‘নারীর সাফল্য অনেক পুরুষকে শঙ্কিত করে, এই শঙ্কাই সহিংসতা বাড়িয়ে দিচ্ছে’

রীমার ‘আয়নাবিবির গহনা’

শ্বশুর-শাশুড়ি বা অন্য কেউ স্বামীর হয়ে তালাক দিতে পারেন না