হোম > ল–র–ব–য–হ

কুশলী ও ভয়ংকর এক সমরনায়কের চিরবিদায়

চেঙ্গিস খানের মতো সমরনায়ক পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। যুদ্ধকৌশলেও তাঁর জুড়ি মেলা ভার। পূর্বে চীনের উপকূল থেকে পশ্চিমে ওরাল সাগর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল তাঁর সাম্রাজ্য। একই সঙ্গে প্রচণ্ড নির্মমতা, ধ্বংসযজ্ঞ ও মৃত্যুর নির্যাস ছড়িয়ে কুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন চেঙ্গিস খান ও তাঁর বাহিনী। ইতিহাসের এই দিনে, অর্থাৎ ১২২৭ সালের ১৮ আগস্ট পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেন তিনি।

চীনা সাম্রাজ্য চি শাতে একটি অভিযান পরিচালনা করে চেঙ্গিস খানের নেতৃত্বে মোঙ্গল বাহিনী। এ সময় একটি ক্যাম্পে মারা যান তিনি। কারও কারও ধারণা, আগের বছর ঘোড়া থেকে পড়ে যে আঘাত পেয়েছিলেন, তা তাঁর মৃত্যুতে ভূমিকা রাখে। তবে সাম্প্রতিক কিছু গবেষণায় আবার এর জন্য প্লেগের মতো কোনো সংক্রামক রোগ কিংবা টাইফয়েডের কথাও বলা হয়েছে। আবার মৃত্যুর তারিখটা ১৮ থেকে ২৫ আগস্টের মধ্যে যেকোনো দিন হতে পারে বলেও মতো প্রকাশ করা হয়েছে কোনো কোনো গবেষণায়।

১১৬২ সালের আশপাশের সময়ে জন্ম চেঙ্গিস খানের। তখন তাঁর নাম ছিল তেমুজিন। বাবা ছিলেন মোঙ্গলদের একটি ছোটখাটো গোত্রের প্রধান। বাবা মারা যাওয়ার সময় সদ্য কৈশোরে পড়েছেন তেমুজিন । গোত্রে বাবার জায়গা দখল করার কথা ছিল তেমুজিনের। কিন্তু এক কিশোরকে মেনে নিতে রাজি ছিল না গোত্রটি। পরিবারটিকে ছেড়ে দেওয়া হয় স্তেপ বা বিস্তৃত তৃণময় অঞ্চলে।

কৈশোর থেকে তারুণ্যে পৌঁছাতে পৌঁছাতে ভয়ানক এক যোদ্ধা এবং ক্যারিশমাটিক এক ব্যক্তিত্বে পরিণত হন তেমুজিন। এ সময় অনেকেই তাঁর অনুসারী হতে থাকে। অন্যান্য মঙ্গোল নেতাদের সঙ্গে জোট গঠন করতে শুরু করেন তেমুজিন।

তাঁর স্ত্রীকে একটি প্রতিদ্বন্দ্বী গোত্র অপহরণ করার পর তাঁদের পরাজিত করার জন্য তেমুজিন একটি সামরিক বাহিনী গঠন করেন। এতে সফল হওয়ার পর অন্যান্য গোষ্ঠী এবং উপজাতিদের দিকে মনোযোগ দেন। নিজের সামরিক শক্তি কাজে লাগিয়ে মঙ্গোলদের একত্রিত করতে শুরু করেন। অনেক যোদ্ধা স্বেচ্ছায় তার পক্ষে এসেছিলেন, কিন্তু যাঁরা রাজি হননি, তাঁদের পরাজিত করেন। পরাজিতদের সামনে বশ্যতা নতুবা মৃত্যু—এ দুটির একটি বেছে নেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না।

১২০৬ সালের দিকে এসে তেমুজিন মঙ্গোলদের গোত্রগুলোর সম্মিলিত ও শক্তিশালী দলটির নেতায় পরিণত হন। এ সময় তাঁকে চেঙ্গিস খান উপাধি দেওয়া হয়েছিল, যার অর্থ, ‘মহাসাগরীয় শাসক’ বা ‘সবার শাসক’। এ সময় সুদক্ষ সেনাবাহিনী গড়ে তোলেন চেঙ্গিস খান। 

যাযাবর প্রকৃতির কারণে মঙ্গোলরা অন্য সভ্যতাগুলোর চেয়ে অনেক বেশি ঘোড়ার বংশবৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছিল। কারণ অন্যদের বিশাল চারণভূমির জন্য কৃষিজমি হারানোর সামর্থ্য ছিল না। চেঙ্গিস খানের সমস্ত যোদ্ধাই তাই ছিলেন ঘোড়সওয়ার। অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত দক্ষ এই অশ্বারোহী বাহিনী রীতিমতো আতঙ্কের প্রতিশব্দে পরিণত হয় অন্য সাম্রাজ্য ও গোত্রগুলোর কাছে। ১২০৯ সালের দিকে মঙ্গোলরা চীনের দিকে অগ্রসর হয়।

গুপ্তচর ও স্কাউটদের একটি বিস্তৃত নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে চেঙ্গিস খান শত্রুদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় দুর্বলতা শনাক্ত করতেন। তারপর একবারে আড়াই লাখ অশ্বারোহী সৈন্য নিয়ে সেখানে আক্রমণ করতেন। বড় শহরগুলোতে আক্রমণ করার সময় মঙ্গোলরা শত্রুকে বিতাড়িত করার জন্য অত্যাধুনিক সরঞ্জাম যেমন ক্যাটাপাল্ট (পাথর ছোড়ার অস্ত্র) ব্যবহার করত। এমনকি নদীর গতিপথ পাল্টে শত্রুকে প্লাবিত করাও ছিল তাদের যুদ্ধকৌশলের অংশ।

বেশির ভাগ সৈন্যবাহিনী এবং শহরগুলো চেঙ্গিস খান ও তাঁর লোকেদের অপ্রতিরোধ্য শক্তির প্রদর্শন দেখেই আত্মসমর্পণ করত। একটি বিজয়ের পর মঙ্গোলদের গণহত্যা-পরবর্তী প্রতিরোধের চিন্তাভাবনাও দূর করে দিত। যারা বেঁচে যেত, দ্রুতবর্ধনশীল মঙ্গোল সাম্রাজ্যের মধ্যে ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সুরক্ষা পেত।

১২২৭ সালের দিকে মধ্য এশিয়ার বেশির ভাগ জয় করেন চেঙ্গিস খান। তার বিশাল সাম্রাজ্য পশ্চিমে মধ্য রাশিয়ার ওরাল সাগর থেকে পূর্বে উত্তর চীনের বেইজিং পর্যন্ত বিস্তৃত হয়।

১২২৭ সালের আগস্টে চি শা রাজ্যে একটি বিদ্রোহ দমন করার সময় চেঙ্গিস খান মারা যান। মৃত্যুশয্যায় তিনি আদেশ দিয়ে যান রাজ্যটিকে পৃথিবীর থেকে মুছে ফেলার। চেঙ্গিস খানের একান্ত অনুগত উত্তরসূরিরা শহরের সমস্ত বাসিন্দাকে হত্যা বা ক্রীতদাসে পরিণত করে এবং গোটা শহরটি গুঁড়িয়ে দেয়।

মৃত্যু গোপন রাখার জন্য চেঙ্গিস খান আদেশ দিয়ে গিয়েছিলেন তাঁর অনুগতদের। সেনারা মঙ্গোল সাম্রাজ্যের রাজধানী কারাকোরামে ফিরে তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সময় যারা আশপাশে ছিল অর্থাৎ এটা দেখেছে বলে মনে করেছে, তাকেই হত্যা করে। তার মৃতদেহ চিহ্নিত না করা একটি কবরে সমাহিত করা হয়। আর তাই তাকে চেঙ্গিস খানের সমাধি কোথায় তা আজও এক রহস্য রয়ে আছে। এদিকে পৃথিবীজুড়ে মৃত্যুর নির্যাস ছড়ানো নৃশংস এক সমরনায়ক হিসেবে পরিচিতি পেলেও মঙ্গোলদের কাছে এখনো তিনি চিরস্মরণীয় এক ব্যক্তিত্ব।

সূত্র: হিস্ট্রি ডট কম

২৩ লাখ টাকার ‘ডিম’ গিলে ফেললেন যুবক, এক সপ্তাহ পর যেভাবে উদ্ধার করল পুলিশ

১৯ হাজার ডলারের ‘ডিম’ গিলে যুবক কারাগারে

জরায়ুহীন হয়ে জন্মেছিলেন, তাঁর হয়ে সন্তান জন্ম দিলেন প্রিয় বন্ধু

বিড়ালের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ ঘোষণা’ করল নিউজিল্যান্ড সরকার

৮০টি সেলাই ও ২ ঘণ্টার অস্ত্রোপচারে বাঁচল একটি কোবরা

দুই টার্কি মুরগিকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘ক্ষমা’ করলেন ট্রাম্প

মৃত মায়ের বেশ ধরে তাঁর পেনশনের টাকা তুলছিলেন ছেলে

আদালতে প্রিয় শিল্পীর পরচুলা পরে, গান বাজিয়ে চাকরি হারালেন বিচারক

প্রয়াত মায়ের চিলেকোঠায় পুরোনো কমিক বই, বিক্রি হলো ৯১ লাখ ডলারে

ক্যাটসতাম্বুল: যে শহরে পথের রাজা মানুষ নয়, বিড়াল