সুইডেনের ইয়ুককাসইয়ার্ভিতে অবস্থিত এক হোটেল আগা-গোড়া বরফে তৈরি। কামরাগুলো বরফ দিয়ে বানানো, তেমনি বিছানা থেকে শুরু করে সব ধরনের আসবাব নির্মাণেও ব্যবহার করা হয়েছে ওই বরফই। আপনার আর বরফের শয্যার মধ্যে থাকবে কেবল পুরু একটা বল্গা হরিণের চামড়া ও উষ্ণ স্লিপিং ব্যাগ।
আর্কটিক সার্কেলের ২০০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত হোটেলটি প্রতি বছর বসন্তে গলে যায়, শীতের শুরুর দিকে আবার নতুন করে তৈরি করা হয়। পৃথিবীর সবচেয়ে পুরোনো মানে প্রথম বরফের হোটেল এটিই।
সুইডেনের বিখ্যাত এই বরফের হোটেলের প্রবেশদ্বার বলতে পারেন কিরুনা শহরকে। কিরুনা থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সুন্দর, ছোট্ট এক গ্রাম ইয়ুককাসইয়ার্ভি। সেখানেই টর্নি নদীর তীরে হোটেলটির অবস্থান। ইনজভি বারগকভিস্ট নামের এক ব্যক্তির উদ্যোগে ১৯৯০ সালে প্রথম বানানো হয় এ বরফের হোটেল।
জাপানের সাপোরোতে বরফের ভাস্কর্য তৈরির ঐতিহ্যে অনুপ্রাণিত ইনজভি ১৯৮৯ সালে জাপানি কিছু শিল্পিকে আমন্ত্রণ জানান ইয়ুককাসইয়ার্ভি গ্রামে, তাঁরা বরফের ভাস্কর্যের ওপর একটি কর্মশালায় অংশ নেন। কয়েক সপ্তাহ পর একই এলাকায় একটি ঈগলুতে (এস্কিমোরা বরফের যে ধরনের বাড়িতে থাকে) বরফের কিছু শিল্পকর্মের প্রদর্শনী করেন। এ সময় শহরের হোটেলে পর্যাপ্ত কামরা না থাকায় কিছু পর্যটক এই ঈগলুর মধ্যে বল্গা হরিণের চামড়ার ওপরে স্লিপিং ব্যাগে রাত কাটান। আর এখানে যারা রাত কাটান যারা তাঁদের ভালোই লাগে অভিজ্ঞতা। বলা চলে তারপরই শুরু হয় বরফের হোটেল তৈরির কর্মযজ্ঞ।
শীতের শেষ দিকে কিংবা বসন্তের শুরুতে বরফের স্বচ্ছ টুকরো কাটা হয় পাশের জমে যাওয়া টর্নি নদী থেকে। আনুমানিক ৯০ লাখ কেজি বরফ ও ২ লাখ ৭০ হাজার কেজি তুষার জমা রাখা হয় কাছের বরফ সংরক্ষণাগার ও উৎপাদনকেন্দ্রে। সেখানে আমন্ত্রিত ৫০ জন শিল্পী ব্যস্ত সময় কাটান বরফ দিয়ে নানা আসবাব, কাঠামো আর ভাস্কর্য তৈরিতে। এমনকি হোটেলের লবির বিশাল ঝাড়বাতিগুলো পর্যন্ত বরফের তৈরি। শীতের শুরুতে বরফের এই শিল্পকর্মগুলো ব্যবহার করা হয় বরফের কামরাগুলো সাজাতে।
হোটেলের ভেতরের প্রায় সবকিছুই তৈরি হয় বরফ দিয়ে। তবে কেবলমাত্র ওয়াশ রুমটা বাদে। এটি থাকে আলাদা একটি স্থায়ী দালানে।
বসন্ত চলে এলে, এপ্রিলের দিকে বরফের হোটেল গলতে শুরু করে। তখন যেখান থেকে এর উপকরণ এসেছিল সেই টর্নি নদীতেই গিয়ে পড়ে গলে। মেতে দেখা যায় হোটেলের জায়গায় আছে কেবল সবুজ ঘেসো জমি।
সূত্র: গ্লোব রোভারস ডট কম, এটলাস অবসকিউরা