আবারও আকবর আলীর মুখে শিরোপার হাসি। ২০২০ যুব বিশ্বকাপজয়ী এই অধিনায়ক ঘরোয়া ক্রিকেটের অন্যতম সফল অধিনায়ক হিসেবে যেন নিজেকে প্রতিষ্ঠা করছেন। এনসিএল টি-টোয়েন্টির পর তাঁর নেতৃত্বে রংপুর জিতেছে জাতীয় লিগের শিরোপাও। পরশু শিরোপা জিতে ফোনে যে প্রতিক্রিয়া জানালেন, সেটি সাক্ষাৎকারে রূপ নিল। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন রানা আব্বাস।
প্রশ্ন: ডাবল জেতার অনুভূতি কী?
আকবর আলী: আলহামদুলিল্লাহ, ভালো।
প্রশ্ন: জাতীয় লিগের ষষ্ঠ রাউন্ডে হেরে যাওয়ায় রংপুরকে শিরোপার দৌড়ে এগিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছিল। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানো কীভাবে?
আকবর: শুধু এই ছয় নম্বর ম্যাচটা হারায় আমরা একটু পেছনে পড়ে গিয়েছিলাম। এ ছাড়া আমরা এক নম্বরেই ছিলাম প্রায় পুরো লিগে। এমনকি যখন পাঁচ নম্বর রাউন্ড শুরু করি, তখনো এক নম্বরে ছিলাম। ছয় নম্বর রাউন্ডে আমরা হেরে গিয়ে একটু পেছনে পড়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু সিলেট জিতে গেলে তো হতো না। সিলেটের আর ময়মনসিংহের নেতিবাচক ফল দরকার ছিল আমাদের জন্য।
প্রশ্ন: এনসিএল টি-টোয়েন্টি যখন শেষ করলেন চ্যাম্পিয়ন হয়ে। তখন আজকের পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, পরবর্তী লক্ষ্য লাল বলেও চ্যাম্পিয়ন হওয়া। লক্ষ্য পূরণ হলো।
আকবর: চ্যাম্পিয়নশিপের তো একটা লক্ষ্য থাকেই। সাধারণত ম্যাচ জেতা গুরুত্বপূর্ণ। আর যখন আপনি বেশি ম্যাচ জিতবেন, সাধারণত যেটা হয় যে চার দিনের যখন ছয়—এবারই তো প্রথম সাত রাউন্ডের ম্যাচ খেলছি। সাধারণত আগে ছয় রাউন্ডের খেলা হতো। তো ছয় রাউন্ডে যেটা হয় যে আপনি তিনটা ম্যাচ জিতলে আর একটা-দুইটা ড্র করলে, একটা যদি হেরেও যাই, তা-ও দেখা যায়, চ্যাম্পিয়নশিপ হয়ে যায়। এবার যেহেতু সাত রাউন্ড ছিল, আমরা আশা করেছিলাম, দল চারটা ম্যাচ জিতবে, তারাই চ্যাম্পিয়ন হবে। তো চারটা হয়নি, তিনটা হয়েছে। বাকি সব কটি ড্র ছিল, একটা হার ছিল। এভাবে আসলে হয়ে গেছে।
প্রশ্ন: ঠিক, জয় যত বেশি, তার ঘরে ট্রফি আসার সম্ভাবনা বেশি।
আকবর: স্বাভাবিক। কারণ, আপনার ড্রয়ে হচ্ছে ২ পয়েন্ট; আর জিতলে ৮ পয়েন্ট। এটা অনেক বড় কিছু। কোনো দল চারটা ম্যাচ ড্র করল আর একটা দল তিন ম্যাচ হেরে একটা জিতল, শেষ পর্যন্ত পয়েন্ট একই। লাল বলের ক্রিকেটে জেতাটা গুরুত্বপূর্ণ; বিশেষ করে উইকেটের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন: এ কারণে সিলেট পাঁচ ড্র, দুই জয়, কোনো হার নেই; তবু চ্যাম্পিয়ন হতে পারল না।
আকবর: এ রকম আমাদেরও একবার হয়েছিল। ২০২৩ সালে সম্ভবত। যে আমরা দুটি ম্যাচ জিতেছিলাম, চারটি ড্র করেছিলাম। একটা ম্যাচও হারিনি। অপরাজিত ছিলাম। কিন্তু তারপরও আমরা চ্যাম্পিয়ন হতে পারিনি। ঢাকা বিভাগ ৩ ম্যাচ জিতে চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেছে। ৩ ম্যাচ জিতেছিল। তারা মনে হয় একটা না, দুইটা হার ছিল। তারপরও ওরা চ্যাম্পিয়ন হয়ে গিয়েছিল।
প্রশ্ন: তার মানে, লাল বলে ফলটা খুব জরুরি।
আকবর: অবশ্যই। অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন: টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি, সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহকের তালিকায় রংপুরের কেউ নেই। তবু আপনাদের চ্যাম্পিয়ন হতে সমস্যা হয়নি।
আকবর: (হাসি) এর কারণ হলো, যখন যার প্রয়োজন ছিল, সে পারফর্ম করেছে। হ্যাঁ, অবশ্যই সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক হলে ভালো লাগত রংপুর বিভাগ থেকে। তখন আরও দাপট দেখিয়ে জিততে পারতাম। কিন্তু আসলে, ইমপ্যাক্ট পারফরম্যান্স ছিল আমাদের অনেকের।
প্রশ্ন: ইমপ্যাক্ট পারফরম্যান্সের কথা বললে মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধর কথা আসবে।
আকবর: আমার মনে হয়, পুরো টুর্নামেন্টের সেরা বোলার ছিল সে। সাধারণত আমি তার ভক্ত। কারণ, সে যদি ফর্মে থাকে, ফিট থাকে—বাংলাদেশে অন্যতম সেরা বোলার।
প্রশ্ন: মুগ্ধর কোন দিকটা আপনার বেশি ভালো লাগে?
আকবর: সে অনেকটাই স্বাভাবিক। যা চায়, সেটা আসলে করতে পারে। সে যদি চায় ইন সুইং করাবে, ইন সুইং করাতে পারে। আউট সুইং করাতে চাইলে তা-ও পারে। আল্লাহর রহমতে অনেক স্বাভাবিক প্রতিভা। বিকেএসপিতে আমরা একসঙ্গে ছিলাম অনেক দিন। তাকে যেটা দেখেছি, অনেক পেসার যেমন এক সপ্তাহ, এক মাস অনুশীলন করে যেটা করতে পারে না, মুগ্ধ এক দিনের অনুশীলনেই সেটা করতে পারে।
প্রশ্ন: শিরোপার ডাবল তো হলো। কিন্তু একটা আফসোস কি থেকে গেল নাকি যে কাতারে রাইজিং স্টার্স এশিয়া কাপ জিততে পারলেই এ বছর ট্রেবল জেতার একটা সুযোগ ছিল আপনার?
আকবর: সেই আফসোস আছে। এখনো আছে। মনে হয়, প্রত্যেক খেলোয়াড়ের এটা সারা জীবন থাকবে। যতবার এটার কথা মনে করাবেন, এই যে এখন মনে করালেন, এখন আবার আফসোস হচ্ছে। যখন কোনো কিছু জেতেন, সেটার ভালো মুহূর্তগুলো আপনার সব সময় মনে থাকে এবং যতবার আপনি সেটা শোনেন, সেটার ছবি দেখেন, উৎফুল্ল থাকেন। একইভাবে যেমন কোনো একটা খারাপ বিষয়, সেটার স্মৃতি সব সময় থাকবে।
প্রশ্ন: ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের পরিবর্তনটা কেমন দেখছেন?
আকবর: আমার অভিষেকের পর থেকে দেখছি, সবচেয়ে প্রতিযোগিতামূলক টুর্নামেন্ট হয়েছে এবার। যদি টেকনিক্যালি দেখেন, শেষ রাউন্ডে পাঁচ দলেরই সুযোগ ছিল চ্যাম্পিয়নশিপের। তো এ রকম প্রতিযোগিতা আগে কখনোই দেখিনি। একটু উনিশ-বিশ হলে যারা পাঁচ নম্বরে ছিল, সম্ভবত চট্টগ্রাম বা বরিশাল, তারাও চ্যাম্পিয়ন হয়ে যেতে পারত। ভালো প্রতিযোগিতা ছিল এবার।
প্রশ্ন: উইকেট, সুযোগ-সুবিধা—সব মিলিয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে কী ধরনের পরিবর্তন দেখছেন?
আকবর: সুযোগ-সুবিধার কথা যদি বলেন, ভেন্যুতে খুবই ভালো পেয়েছি। হয়তোবা কক্সবাজারে কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল। কিন্তু সিলেট, বগুড়া, রাজশাহী খুবই ভালো ছিল। যদিও রাজশাহীতে এ বছর খেলিনি। যতটুকু শুনছি, খুবই ভালো ছিল। তবে সবাই জানি, বাংলাদেশের অন্যতম সেরা উইকেট বগুড়ায়।
প্রশ্ন: বিপিএল সামনে। ঘরোয়া ক্রিকেটে ট্রেবল জেতার সুযোগ নিশ্চয় আছে?
আকবর: ইনশা আল্লাহ, চেষ্টা করব। সেটা নির্ভর করছে আমরা দল (রাজশাহী) হিসেবে কীভাবে খেলতে পারছি।