ঘরের মাঠে বাংলাদেশ আগে কখনো ধবলধোলাই হয়নি, তা তো নয়। তবে চট্টগ্রামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে যেভাবে ধবলধোলাই হয়েছে বাংলাদেশ, তাতে লজ্জার চেয়ে চিন্তাই যেন বাড়ছে। চিন্তাটা ব্যাটিং নিয়ে। তিন মাস পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। তার আগে ব্যাটাররা যেভাবে ‘ঘুমিয়ে’ পড়েছেন, উদ্বেগ বাড়াই স্বাভাবিক।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ধবলধোলাইয়ের ব্যাখ্যায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু বলছিলেন, ‘একসঙ্গে একাধিক ক্রিকেটার ছন্দ হারিয়ে ফেললে এ রকম ফলই হবে। আরও দুই-একটা ব্যাটার রানে থাকলে ফল অন্যরকম হতে পারত।’ ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে বাংলাদেশের ব্যাটারদের রানখরার একটা চিত্র তুলে ধরা যাক। পুরো টি-টোয়েন্টি সিরিজে দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন তানজিদ হাসান তামিম। ৩ ম্যাচে ৫৫ গড়ে ১৬৫ রান করে তিনি শুধু বাংলাদেশ দলেরই নয়, সিরিজেরই সেরা ব্যাটার। কিন্তু তাঁর সঙ্গে সতীর্থদের দূরত্বটা দেখুন। এই সিরিজে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সেরা ব্যাটার হচ্ছেন পেসার তানজিম সাকিব, যাঁর রান ৪১। দলের ব্যাটিং স্তম্ভ তাওহীদ হৃদয়, সাইফ হাসান, লিটন দাসের রান ৩ ম্যাচে ৪০ পেরোতে পারেনি।
দলের ব্যাটারদের ছন্দ নিয়ে চিন্তিত মনে হলো সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমনকে। গতকাল আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেছেন, ‘আমাদের ব্যাটিং ভালো হচ্ছে না। ব্যাটিং আরেকটু ভালো করতে হবে। যে সিরিজগুলো জিতেছি, সেখানেও খুব যে ভালো ব্যাটিং হয়েছে, তা নয়। আমাদের বোলাররা খুব ভালো করছে বলে জিতে গেছি। এখন আমাদের বোলাররা যে বোলিংটা করছে, এটা বিশ্বমানের বলব। তবে ব্যাটিং ভালো না করলে বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে ভালো করা কঠিন। ইম্প্যাক্টফুল ব্যাটিং একজন করছে, বাকিরা করছে না। এটা আমাদের ব্যাটিংয়ের অনেকটা প্যাটার্ন হয়ে যাচ্ছে। বড় খেলায় একজনের ইম্প্যাক্টফুল ইনিংস দিয়ে তো হবে না। একসঙ্গে দুই-তিনজনের ইম্প্যাক্টফুল ইনিংস লাগবে।’
বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান নাজমুল আবেদীন ফাহিম ব্যর্থতা স্বীকার করে নিয়ে গতকাল মিরপুরে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘সর্বশেষ সিরিজটায় আমাদের একটু ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়ল। টানা চারটি সিরিজ জিতেছে আমাদের দল। সেখানে কিছু ছেদ ঘটল। এটা কিছুটা হতাশার। যে ধারায় ছিল দল, আরও ফল আশা করেছিলাম। বিশেষ করে ব্যাটিংয়ে যে রান করার সুযোগ ছিল, সেটা আমরা করতে পারিনি। ব্যাটিংয়ে ভালো করতে পারিনি, কিছুটা উদ্বেগের। মিডল ও লোয়ার মিডল অর্ডারে রান পাচ্ছিলাম, যেটা এবার পাইনি।’ ব্যর্থতার পেছনে টানা সূচি সামনে এনেছেন ফাহিম, ‘অনেক ক্রিকেটার টানা ক্রিকেট খেলছি, কিছুটা বিশ্রাম দরকার। এটা কিছুতেই অজুহাত নয়।’
তবে ফাহিম কিছুতেই মনে করেন না ক্যারিবীয়দের কাছে ধবলধোলাই হয়ে এলোমেলো হয়ে গেছে, ‘দল এলোমেলো হয়ে গেছে বিষয়টা এমন কিছু না। এই দলটাই তো টানা চারটি টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতেছে। অনেক দিন পর একটা (টি-টোয়েন্টি) সিরিজ হারল, মনে হয় না তারা এলোমেলো।’ সিরিজে ব্যর্থ হলেও হাবিবুল বাশার সুমনও ফাহিমের সুরেই বলেছেন, ‘বেশি ক্রিটিক্যাল হতে চাই না। কিছুদিন আগে এ দলটাই চারটি টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতেছিল। একটা সিরিজ হেরেছে বলে গেল-গেল রব তোলাও ঠিক না। ফাহিম মনে করেন, এ মাসে আয়ারল্যান্ড সিরিজের আগে ১০-১২ দিনের বিরতিতেই সতেজ হয়ে উঠবে দল, ‘সামনে যে বিরতি পাব, আশা করি তাতে আমরা আবার উঠে দাঁড়াতে পারব।’
উঠে দাঁড়ানোর আগে ব্যাটিংয়ের কিছু জায়গায় সমাধান খুঁজতে হবে বাংলাদেশ দলকে। বিশেষ করে জাকের আলীর মতো তরুণ মিডল অর্ডার ব্যাটারদের ব্যাটিংয়ের টেকনিক প্রশ্নবিদ্ধ। তরুণদের ব্যর্থতার ব্যাখ্যায় ফাহিম বলেছেন, ‘কেউ যখন নতুন আসে, তখন ফ্রি-মাইন্ডে খেলতে পারে। তাদের ব্যাপারে প্রতিপক্ষ দলেরও কম জানাশোনা থাকে। ধীরে ধীরে সাফল্য একটা প্রত্যাশা তৈরি করে। প্রতিপক্ষ দলও তাদের নিয়ে অনেক গবেষণা করে। সব মিলিয়ে একধরনের চাপ তৈরি হয়। মান ভালো থাকলে তারা পথ তৈরি করে নিতে পারে। আশা করি জাকের আলীও সেটা পারবে।’