নিরাপদ অবতরণের জন্য ভারতের মহাকাশযান চন্দ্রযান-৩-এর ল্যান্ডার বিক্রম চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে উপযুক্ত জায়গা খুঁজছে বলে দেশটির মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) জানিয়েছে। ২৩ আগস্ট বিক্রমের চাঁদে অবতরণের সম্ভাবনা আছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, বিক্রমের ভেতরে রয়েছে একটি রোভার। চাঁদে অবতরণের পর ছয় চাকার রোভারটি বের হয়ে আসবে।
এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার চাঁদের এক পাশের বেশ কিছু ছবি তুলে পাঠিয়েছে ল্যান্ডার বিক্রম। রাশিয়ার মহাকাশযান লুনা-২৫ চাঁদে বিধ্বস্ত হওয়ার এক দিন পর ছবিগুলো প্রকাশ করেছে ইসরো।
প্রায় ৫০ বছরের মধ্যে চাঁদে রাশিয়ার প্রথম মহাকাশযান ‘দ্য ক্র্যাফট’ পাঠানো হলো। এটিও চাঁদের দক্ষিণ মেরুতেই নামতে চেয়েছিল। কিন্তু যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিধ্বস্ত হয়েছে।
চাঁদের এই অংশকে ‘চাঁদের অন্ধকার দিক’ বলা হয়। কারণ, এই দিক সম্পর্কে অল্প তথ্য জানা গেছে। বিজ্ঞানীদের মতে, এই জায়গায় অবতরণ করা কঠিন।
ল্যান্ডারটি চাঁদের কাছের কক্ষপথে (২৫ থেকে ১৩৪ কিলোমিটারের মধ্যে) অবস্থান করছে; চাঁদে সূর্যোদয়ের অপেক্ষা করছে।
চন্দ্রযান-৩-এর অভিযান সফল হলে দক্ষিণ মেরুতে অবতরণে ভারতই প্রথম দেশ হবে। যুক্তরাষ্ট্র, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীনের মহাকাশযান চাঁদে অবতরণ করলেও এই অংশে নামতে পারেনি।
চন্দ্রযান-৩-এর সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কারণ, এর আগের চাঁদের তিনটি অভিযান থেকে ভারতের বিজ্ঞানীদের অভিজ্ঞতা হয়েছে।
ভারতে ২০০৮ সালে প্রথম চন্দ্র অভিযানের ১৫ বছর পর এই অভিযান শুরু হয়। আগের অভিযানে চাঁদের পৃষ্ঠে পানির অণুর উপস্থিতি পায়। দিনের বেলায় চাঁদে বায়ুমণ্ডলের উপস্থিতি রয়েছে, তা-ও এই অভিযানের মাধ্যমে জানা যায়।
২০১৯ সালের জুলাইয়ে মহাকাশ অভিযানে যায় ‘চন্দ্রযান-২’। সেখানেও অরবিটার, ল্যান্ডার ও রোভার ছিল। অভিযানটি আংশিক সফল হয়। মহাকাশযানের অরবিটারটি এখনো চাঁদের কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করছে। তবে এটির ল্যান্ড-রোভার চাঁদে অবতরণের আগেই ধ্বংস হয়।
ইসরোর প্রধান শ্রীধারা পানিকার সোমনাথ বলেন, তাঁরা ওই ধ্বংসস্তূপ থেকে ডেটা নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন। চন্দ্রযান-৩-এর ত্রুটি ঠিক করতে এই ডেটাগুলো ব্যবহার করছেন।
চন্দ্রযান-৩-এর ওজন ৩ হাজার ৯০০ কেজি। এটি তৈরিতে ৬১০ কোটি রুপি খরচ হয়েছে। বিক্রম ল্যান্ডারটি প্রায় দেড় হাজার কেজি। আর ‘প্রাজ্ঞ’ রোভারটির ওজন ২৬ কেজি।
চন্দ্রযান-৩-এর প্রধান লক্ষ্য বরফের সন্ধান করা। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, যা ভবিষ্যতে চাঁদে বসবাস করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে। চাঁদ ভবিষ্যতে মঙ্গল বা অন্যান্য গ্রহের যাওয়ার জন্য মহাকাশযানের ঘাঁটি হবে।