হোম > বিজ্ঞান

নতুন আবিষ্কার, ক্ষুদ্রাকৃতির কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরির পথ দেখালেন বিজ্ঞানীরা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­

এই আবিষ্কার আরও ছোট, দ্রুত, দক্ষ এবং শক্তি সাশ্রয়ী কোয়ান্টাম প্রযুক্তি নির্মাণের জন্য নতুন উপায়ের দ্বার খুলে দিতে পারে। ছবি: শালম বুবারম্যান

কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যায় বড় ধরনের অগ্রগতি অর্জন করেছেন ইসরায়েলের এক দল গবেষক। তাঁরা প্রথমবারের মতো এমন এক নতুন ধরনের কোয়ান্টাম বিজড়নের (এনটেঙ্গলমেন্ট) সন্ধান পেয়েছেন। অত্যন্ত ক্ষুদ্রাকৃতির কাঠামোর মধ্যে আবদ্ধ ফোটনের (আলোক কণা) মোট কৌণিক ভরবেগের সীমার মধ্যেই এই ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন বিজ্ঞানীরা।

এই যুগান্তকারী আবিষ্কার করেন ইসরায়েলের ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি টেকনিয়নের গবেষকেরা। এই আবিষ্কার ভবিষ্যতে কোয়ান্টাম কম্পিউটিং ডিভাইসগুলোকে আরও ছোট আকৃতির করার পথ খুলে দিতে পারে। এতে কোয়ান্টাম কম্পিউটার ও যোগাযোগ প্রযুক্তিগুলো আরও শক্তিশালী ও কার্যকর হবে। যেখানে বর্তমানে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের আকার সাধারণত ডেস্কটপ থেকে একটি ছোট ব্যক্তিগত গাড়ির সমান হয়।

কোয়ান্টাম এনটেঙ্গলমেন্ট হলো পদার্থবিদ্যার এক অদ্ভুত, তবে পরীক্ষিত ধারণা। ১৯৩৫ সালে এই ধারণার সূত্রপাত করেন আলবার্ট আইনস্টাইন, বরিস পোদলস্কি ও নাথান রোজেন। তাঁদের ওই ধারণাপত্রটি ‘ইপিআর পেপার’ নামে বিখ্যাত।

তাঁরা দেখান, দুটি কণা এমনভাবে সম্পর্কিত থাকতে পারে যে, একটি কণার দশা পরিমাপ করলে অন্যটির সম্পর্কেও তাৎক্ষণিকভাবে জানা সম্ভব। এমনকি কণা দুটি পরস্পর থেকে কোটি কোটি আলোকবর্ষ দূরে থাকলেও!

আলবার্ট আইনস্টাইন এই অদ্ভুত ধারণাকে বলেছিলেন ‘স্পুকি অ্যাকশন অ্যাট অ্যা ডিসট্যান্স’ বা ‘দূরত্বের মধ্যে ভুতুড়ে আচরণ’।

তবে, পরবর্তী সময়ে এই ধারণাকেই ব্যবহারযোগ্য করে তোলেন টেকনিয়নের অধ্যাপক আসার পেরেস। তিনি অন্য বিজ্ঞানীদের সঙ্গে মিলে কোয়ান্টাম টেলিপোর্টেশন ধারণা দেন, যেখানে বিজড়িত কণার মাধ্যমে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় অদৃশ্যভাবে তাৎক্ষণিক তথ্য স্থানান্তর সম্ভব।

এই তত্ত্বই পরবর্তীতে কোয়ান্টাম যোগাযোগ প্রযুক্তির ভিত্তি তৈরি করে, যা ভবিষ্যতে নিরাপদ তথ্য আদান–প্রদানের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

এখন পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের কণার মধ্যে কোয়ান্টাম বিজড়ন দেখা গেছে, বিশেষ করে ফোটনের ক্ষেত্রে। ফোটনকে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে বিজড়িত করা সম্ভব, যেমন—এদের ঘূর্ণন, তাদের রং (ফ্রিকোয়েন্সি) কিংবা বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রে।

এ ছাড়া ঘূর্ণনের ধরন বা কৌণিক ভরবেগের ভিত্তিতেও দুটি ফোটন কণাকে বিজড়িত করা যায়।

এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা ফোটনের কৌণিক ভরবেগকে দুটি আলাদা অংশ—স্পিন (ঘূর্ণন) ও অরবিটাল (কক্ষপথ)—হিসেবে দেখেন। তবে, যখন ফোটনকে এমন ক্ষুদ্র স্থানে আবদ্ধ করা হয় যা তার তরঙ্গদৈর্ঘ্যের চেয়েও ছোট, তখন স্পিন কৌণিক ভরবেগ ও অরবিটাল কৌণিক ভরবেগ মিলেমিশে এক হয়ে যায়—যা হয় মোট কৌণিক ভরবেগ।

এই পরিস্থিতি দেখা যায় ন্যানোফোটোনিকস নামে একটি গবেষণা ক্ষেত্রে, যা ন্যানোস্কেলে (মানুষের চুলের চেয়ে প্রায় হাজার গুণ সরু) আলোর আচরণ ও ব্যবহারের সঙ্গে সম্পর্কিত।

আলোক কণাকে এত ক্ষুদ্র স্থানে আটকে রাখার একটি উদ্দেশ্য হলো যন্ত্রপাতি বা ডিভাইসকে ছোট করা। যেমনটি ঘটেছিল ইলেকট্রনিক সার্কিটের (ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট বা আইসি) ক্ষেত্রে। আরেকটি কারণ হলো, আলো ও পদার্থের মধ্যকার পারস্পরিক ক্রিয়া বাড়ানো, যাতে এমনসব নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়, যা বড় স্কেলে সম্ভব নয়।

বিজ্ঞান সাময়িকী নেচার–এ নতুন গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে। টেকনিয়নের পিএইচডি শিক্ষার্থী অমিত কাম ও গবেষক ড. শাই তেসেসের নেতৃত্বে গবেষক দল দেখিয়েছেন, এই ন্যানোস্কেল কাঠামোর মধ্যে ফোটনেরা কীভাবে এদের মোট কৌণিক ভরবেগের মধ্যে নতুনভাবে বিজড়িত হতে পারে।

তাঁরা নিখুঁতভাবে ফোটনের অবস্থার মানচিত্র এঁকে দেখিয়েছেন যে, এই নতুন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ফোটনের জোড়াগুলো একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে—যা আগে কখনো দেখা যায়নি।

২০ বছরের মধ্যে এটাই প্রথম, যখন নতুন ধরনের কোনো কোয়ান্টাম বিজড়নের খোঁজ পাওয়া গেল। এই আবিষ্কার আরও ছোট, দ্রুত, দক্ষ এবং বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী কোয়ান্টাম প্রযুক্তি নির্মাণের জন্য নতুন উপায়ের দ্বার খুলে দিতে পারে। এতে কোয়ান্টাম কম্পিউটিং ও যোগাযোগের প্রযুক্তিগুলোকে আরও ক্ষুদ্র আকৃতিতে নিয়ে আসতে সহায়তা করবে।

মঙ্গল গ্রহে প্রথমবারের মতো বজ্রপাত শনাক্তের দাবি

কৈশোর থামে বত্রিশে, বার্ধক্যের শুরু ছেষট্টির পর—চিহ্নিত হলো মস্তিষ্কের ৫ পর্যায়

ভূমিকম্পের পর্যায়ক্রম: ফোরশক, মেইনশক ও আফটারশক কী

প্রাণীদের প্রথম চুম্বন ২ কোটি ১০ লাখ বছর পুরোনো

১২ হাজার বছর পুরোনো মূর্তিতে বিশ্বের প্রাচীনতম পৌরাণিক গল্পের চিত্রায়ণ

৪০ হাজার বছর আগে একটি ম্যামথের জীবনের শেষ মুহূর্তের কথা জানলেন বিজ্ঞানীরা

মহাকাশে প্রস্রাব থেকে তৈরি প্রোটিন পাউডার হবে নভোচারীদের খাবার

ডিএনএর গঠন আবিষ্কারক ওয়াটসনের মৃত্যু, বর্ণবিদ্বেষ যাঁকে খ্যাতির শীর্ষ থেকে ডুবিয়েছে

প্রথম কবে মানুষের বন্ধু হলো কুকুর—একটি খুলি ঘিরে নতুন বিতর্ক

মহাকাশে বিশেষ চুলায় রান্নাবান্না, বারবিকিউ পার্টি করলেন চীনা নভোচারীরা