হোম > বিজ্ঞান

৫ হাজার বছর আগেই বুনন করা পোশাক পরত মিসরীয়রা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­

এতে আছে দরজির তৈরি সুনিপুণ হাতা, ‘ভি’-গলা। ছবি: ইউসিএল

প্রায় ৫ হাজার বছর আগে প্রাচীন মিশরে তৈরি একটি লিনেন পোশাক এখন বিশ্বের সর্বপ্রাচীন বুনন করা পোশাক (জামা) হিসেবে স্বীকৃত। কার্বন ডেটিংয়ের মাধ্যমে জানা গেছে, ‘তারখান ড্রেস’ নামে পরিচিত এই পোশাক ৩৫০০ থেকে ৩১০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের মধ্যে তৈরি হয়েছে।

প্রাচীনকালে মানুষ প্রধানত নিজেদের উষ্ণ রাখা ও শরীর সুরক্ষার জন্য পোশাক ব্যবহার করত। সেই সময়ের পরিধেয় বস্তু সাধারণত গায়ে পেঁচিয়ে পরা হতো এবং এগুলো জৈব পদার্থ দিয়ে তৈরি হওয়ায় খুব সহজেই পচে যেত। ফলে সেসব পোশাক বা বস্ত্রের ফসিল বা নমুনা সচরাচর পাওয়া যায় না।

তবে তারখান ড্রেস এই সাধারণ ধারার বাইরে। এটি নিছক কাপড় জড়িয়ে পরা কোনো বস্তু নয়, বরং সূক্ষ্মভাবে বোনা, কাটা ও সেলাই করা একটি পোশাক, যা আধুনিক পোশাক তৈরির ধারা ও কারিগরি দক্ষতার এক প্রাচীন উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত। এই পোশাকের মাধ্যমে শুধু পোশাক তৈরির প্রাচীন কৌশলই নয়, বরং সেই সময়কার মিসরীয়দের ফ্যাশন সচেতনতা ও নান্দনিক রুচিরও একটি স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়।

বিখ্যাত ব্রিটিশ পুরাতত্ত্ববিদ স্যার ফ্লিন্ডার্স পেট্রি ১৯১৩ সালে মিসরের তারখান শহরের নিকটে একটি মস্তাবা (আয়তাকার, সমতল ছাদের প্রাচীন সমাধি) খননের সময় এটি আবিষ্কার করেন। কায়রো শহরের প্রায় ৬০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত এই স্থান তারখান নেক্রোপলিস নামে পরিচিত, যেখানে পেট্রি ২ হাজারেরও বেশি কবর খুঁজে পান। বেশির ভাগ কবরই প্রোটোডাইনেস্টিক ও প্রারম্ভিক ডাইনেস্টিক যুগের—অর্থাৎ, খ্রিষ্টপূর্ব ৩১০০ সালের দিকের, যখন মিসরে প্রথম ফারাও রাজত্ব শুরু করেন।

মস্তাবার ভেতরে একটি ‘বড় লিনেন কাপড়ের স্তূপ’ খুঁজে পান পেট্রি। ধারণা করা হয়, আগের কোনো কবর লুটেরা এই পোশাকগুলো অবহেলাভাবে ফেলে রেখে গিয়েছিল। পরে কাপড়গুলো যুক্তরাজ্যে নিয়ে যাওয়া হলেও সেগুলো দীর্ঘদিন অবহেলায় পড়ে ছিল।

অবশেষে ১৯৭৭ সালে লন্ডনের ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড অ্যালবার্ট মিউজিয়ামের সংরক্ষণবিদেরা বুঝতে পারেন, স্তূপের ভেতরে থাকা এই পোশাক কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

তারখান পোশাকটি লিনেনের, যা ফ্ল্যাক্স (Linum usitatissimum) উদ্ভিদ থেকে তৈরি। এতে আছে দরজির তৈরি সুনিপুণ হাতা, ‘ভি’ গলা। পুরো জামায় রয়েছে সরু ভাঁজ, যাকে বলা হয় ‘নাইফ-প্লিট’। পোশাকটির নিচের অংশ হারিয়ে গেছে, ফলে এটি পূর্ণাঙ্গ জামা ছিল, নাকি শার্ট বা টিউনিক, তা স্পষ্ট নয়। তবে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের পেট্রি মিউজিয়ামের গবেষকদের ধারণা, এটি এক তরুণ, হালকা-পাতলা গড়নের নারীর জন্য তৈরি করা হয়েছিল।

২০১৬ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায় ইউসিএলের জাদুঘর প্রত্নতত্ত্ববিদ অধ্যাপক অ্যালিস স্টিভেনসন লেখেন, ‘প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে কাপড়ের মতো ক্ষয়প্রবণ বস্তু টিকে থাকা বিরল ঘটনা। আর সম্পূর্ণ বা প্রায় সম্পূর্ণ পোশাক টিকে থাকাটা তো আরও দুর্লভ।’

স্টিভেনশন ও আইসোটোপ রসায়নবিদ মাইকেল ডি’র যৌথ গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, তারখান ড্রেস তৈরি হয়েছিল ‘প্রথম রাজবংশের ঠিক সূচনাকালে’।

গবেষণায় বলা হয়েছে, এই পোশাক সম্ভবত তখনকার ফ্যাশনে জনপ্রিয় ছিল। কারণ ওই সময়ের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার শিল্পকর্মে দেখা যায় মৃত ব্যক্তিরা অনুরূপ পোশাক পরে রয়েছেন। তবে এটিকে শুধুই দাফনের পোশাক বলা যাবে না, কারণ জীবিত অবস্থায় কেউ নিয়মিত পরেছেন তার চিহ্ন এতে রয়েছে।

তথ্যসূত্র: লাইভ সায়েন্স

জোট বেঁধে শিকার ধরতে ছুটছে কিলার হোয়েল ও ডলফিন, বিস্মিত বিজ্ঞানীরা

ফ্রান্সে সমুদ্রতলে কিংবদন্তির শহর, ৭০০০ বছর আগের বিশাল প্রাচীরের সন্ধান

পূর্বের ধারণারও সাড়ে ৩ লাখ বছর আগে মানুষের আগুন জ্বালানোর প্রমাণ মিলল

২০০ শিশুর জন্মের পর জানা গেল দাতার শুক্রাণুতে ছিল ক্যানসারের জিন

মঙ্গল গ্রহে প্রথমবারের মতো বজ্রপাত শনাক্তের দাবি

কৈশোর থামে বত্রিশে, বার্ধক্যের শুরু ছেষট্টির পর—চিহ্নিত হলো মস্তিষ্কের ৫ পর্যায়

ভূমিকম্পের পর্যায়ক্রম: ফোরশক, মেইনশক ও আফটারশক কী

প্রাণীদের প্রথম চুম্বন ২ কোটি ১০ লাখ বছর পুরোনো

১২ হাজার বছর পুরোনো মূর্তিতে বিশ্বের প্রাচীনতম পৌরাণিক গল্পের চিত্রায়ণ

৪০ হাজার বছর আগে একটি ম্যামথের জীবনের শেষ মুহূর্তের কথা জানলেন বিজ্ঞানীরা