হোম > রাজনীতি

‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ নিয়ে উত্তপ্ত রাজনীতি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ ব্যানারে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ। ছবি: আজকের পত্রিকা

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গণহত্যার অভিযোগে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে। এই দাবিতে গতকাল শুক্রবার রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে ছাত্র-জনতা। এ নিয়ে গতকাল সারা দিন উত্তপ্ত ছিল রাজনীতির মাঠ।

গত বৃহস্পতিবার ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে এক বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানান, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনা সরকারের নেই। মূলত প্রধান উপদেষ্টার এমন বক্তব্যের পরেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতারা।

বৃহস্পতিবার রাতে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ এক ফেসবুক পোস্টে দাবি করেন, ভারতের পরিকল্পনায় ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ নামে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের ষড়যন্ত্র চলছে। ওই রাতেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘোষণা করা হয় শুক্রবার আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করা হবে। এরই অংশ হিসেবে গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া জুমার নামাজের পরে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমেও বিক্ষোভ মিছিল করা হয়।

এসব মিছিল থেকে বক্তারা বলেন, আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করা হলে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দেওয়া হবে। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনা নেই বলে প্রধান উপদেষ্টা যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটি প্রত্যাহারেরও দাবি জানান তাঁরা।

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে গতকাল জুমার নামাজের পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি মধুর ক্যানটিন, শ্যাডো, সূর্য সেন হল, ভিসি চত্বর হয়ে রাজু ভাস্কর্য গিয়ে শেষ হয়। অন্য দিকে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের একটি মিছিল মধুর ক্যানটিন, শ্যাডো, হলপাড়া, রাজু ভাস্কর্য হয়ে কেন্দ্রীয় মসজিদের দিকে যায়।

মিছিল-পরবর্তী এক সমাবেশে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদী বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে নিয়ে নির্বাচন করতে চাইলে বাংলাদেশে রক্তের বন্যা বয়ে যাবে। দুই হাজারের অধিক শহীদ এবং হাজার হাজার আহতের রক্তের শপথ, আমাদের দেহে এক বিন্দু রক্ত থাকতে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করতে দেব না। আওয়ামী লীগ মানেই খুনি।’

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরাও। মিছিলের পর সমাবেশে ছাত্র অধিকার পরিষদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক রায়হান হাসান রাব্বি বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবে যারা আমাদের ভাইদের পাখির মতো হত্যা করেছে, তাদের আমরা বেঁচে থাকতে এই বাংলাদেশে রাজনীতি করতে দেবে না। আমরা এখানে জড়ো হয়েছি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে। যত দিন না আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হয়, আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।’

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য প্রত্যাখ্যান এবং দলটির নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরাও। এ দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তাঁরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকসংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে গিয়ে শেষ হয়। এরপর সেখানে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা।

সমাবেশে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক তৌহিদ সিয়াম বলেন, ‘আমরা সেনাবাহিনীকে স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, আপনারা যদি ঢাকার বাইরে অন্য কোনো দেশের বা অন্য কোনো এজেন্সির প্রেসক্রিপশনে চলতে চান, তাহলে আপনাদেরও ছেড়ে কথা বলব না। যারা সেনাবাহিনীকে ভারতের প্রেসক্রিপশনে চালাতে চায়, তাদের আমরা শেখ হাসিনা যে পথে গেছে সেই পথে পাঠিয়ে দেব।’

ছাত্রশিবির জাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের রাজনীতি চলা মানে আমাদের শহীদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করা। আমাদের শরীরে এক ফোঁটা রক্ত থাকা পর্যন্ত আমরা বাংলাদেশে আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করতে দেব না।’

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গতকাল ভোর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে এই কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীরা।

বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ও হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে দেশের রাজনীতিতে আসতে হলে, আমাদের লাশের ওপর দিয়ে আসতে হবে।’

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নায়েবে আমির আহমেদ আলী কাসেমী বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করা হলে জুলাই অভ্যুত্থানের মতো ছাত্র-জনতা পুনরায় তাদের রুখে দেবে।’

এদিকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলন করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ মঞ্চ ঘোষণা’ নামে নতুন প্ল্যাটফর্ম ঘোষণা করেছে শিক্ষার্থীদের একাংশ। গতকাল বিকেল সোয়া ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ব্যানারে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে এই প্ল্যাটফর্ম ঘোষণা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহসমন্বয়ক এ বি জোবায়ের। এর আগে বিকেল পৌনে ৪টায় আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ ও গণহত্যার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তাঁরা।

প্ল্যাটফর্ম ঘোষণা করে এ বি জোবায়ের বলেন, ‘আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের প্রচেষ্টা রুখে দিতে এবং প্রতিশোধ নিতে আমরা আন্দোলন অব্যাহত রাখব। এ আন্দোলন অব্যাহত রাখতে ‘গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ আন্দোলন’ ঘোষণা করছি। আওয়ামী লীগবিরোধী যেকোনো মত ও পথের লোক এ প্ল্যাটফর্মের অধীনে ঐক্যবদ্ধ হতে পারবে।’

আজ শনিবার বিকেল ৫টায় রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা এবং গণহত্যার বিচারের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে প্ল্যাটফর্মটি। এ সময় রাজু ভাস্কর্যে গণইফতারেরও আয়োজন করা হবে।

প্রতিবেদনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও কুষ্টিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদের সহায়তা নেওয়া হয়েছে।

দুই কারণে পিছিয়ে গেল খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রা

বিমানবন্দর থেকে সোজা এভারকেয়ার হাসপাতালে জুবাইদা রহমান

ঢাকায় পৌঁছেছেন জোবাইদা রহমান

খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রা পিছিয়ে গেছে

খালেদা জিয়ার জন্য কাতার থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আসতে বিলম্ব

লন্ডন থেকে ঢাকার পথে জোবাইদা রহমান

বিএনপির নামে ২৮০০ সিসির ডিজেল ইঞ্জিন ‘হার্ড জিপ’ নিবন্ধন দিল বিআরটিএ

এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ‘কারিগরি সমস্যা’, খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রায় কিছুটা বিলম্ব হতে পারে

সীমান্তে দুই বাংলাদেশি হত্যা, এনসিপির নিন্দা

অক্সফোর্ড ইউনিয়নের আমন্ত্রণ পেলেন হাসনাত, জুনায়েদ ও সাদিক