ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনাকে ‘গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে চক্রান্ত’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে বিএনপির ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন।
তারেক রহমান বলেন, ‘আজ শরিফ ওসমান বিন হাদির যে দুর্ঘটনা ঘটেছে, এই দুর্ঘটনা আরও ঘটেছে। কিছুদিন আগে চট্টগ্রামে আমাদের এক এমপি প্রার্থীর ওপরে যা হয়েছে, এটা ষড়যন্ত্র। এটার বিরুদ্ধে যদি আমাদের অবস্থান নিতে হয়, এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে যদি অবস্থান নিতে হয়, যেকোনো মূল্যে আমাদের গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে, যেকোনো মূল্যে আমাদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে ফিরিয়ে আনতে হবে, গণতান্ত্রিক অধিকারকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।’
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলকে আগামী দিনের ভবিষ্যৎ হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তারেক বলেন, ‘এই ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে পারে এই দেশের মানুষ, এই ষড়যন্ত্র দমিয়ে দিতে পারে, রুখে দিতে পারে গণতন্ত্র।’
‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচির ষষ্ঠদিনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের বিভিন্ন স্তরের নেতাদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তাঁদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমাদের দলের পরিকল্পনাগুলো তোমাদের কাছে অর্পণ করছি। আমি বিশ্বাস করি, আজকে যে দায়িত্ব তোমাদের দিলাম মানুষকে বোঝানোর জন্য, যে দায়িত্ব দিলাম মানুষের সমর্থন জোগাড়ের জন্য, সেটি তোমরা করতে সফল হবে। কারণ, তোমাদের সেই যোগ্যতা আছে, তোমাদের সেই মেধা আছে। ফার্মার্স কার্ড, ফ্যামিলি কার্ড, হেলথ কার্ড প্রভৃতি বিষয়ে তোমাদের সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে ঘরে ঘরে মানুষের কাছে পৌঁছে দেবে।’
দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সভাপতিত্ব ও যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খানের সঞ্চালনায় ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব, সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির প্রমুখ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
এর আগে শুক্রবার সকালে অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী ভাষণে তফসিল ঘোষণা প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘তফসিল ঘোষণায় অনেকে ভারাক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু স্বাগত জানাতে বাধ্য হয়েছে। আমরা স্বাগত জানিয়েছি, সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছি। আমরা বলেছি, এ জন্যই গণ-অভ্যুত্থানের যত প্রত্যাশা, তার মধ্যে প্রধান ও প্রাথমিক প্রত্যাশা ছিল জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা, ভোটাধিকার প্রয়োগ করা, এই তফসিল ঘোষণা করা।’ তিনি বলেন, ‘কেউ কেউ বলেছে নো পিআর, নো ইলেকশন, কেউ কেউ বলেছে, আগে স্থানীয় সরকার ইলেকশন না হলে নো ইলেকশন। আর কেউ কেউ বলেছে, একই দিনে গণভোট আর সংসদ নির্বাচন হলে আমরা মানি না। কেউ কেউ বলেছে, ২০২৯ সালের দিকে নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করেন। এরা সবাই....আমি কারও নাম নিতে চাই না...গণতন্ত্রের বিপক্ষের শিবির। তারা নিজেদের মত করে গণতন্ত্র চায়, তাদের গণতন্ত্রের সংজ্ঞা আলাদা।’
কোন দলের নাম উচ্চারণ না করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘একটি দল আওয়ামী লীগের ভোটপ্রাপ্তির জন্য আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে একটি শব্দও উচ্চারণ করে না। আমাদের গ্রামের ভাষায় কথা বলে যে ভাশুরের নাম মুখে নেওয়া যায় না। এখন সেই দল আওয়ামী লীগের ভোট টানার জন্য তাদের যে ভূমিকা, সেটা জনগণের সামনে উন্মোচন করেছে।’
দলটির উদ্দেশে সালাহউদ্দিন আরও বলেন, ‘যাদের ইতিহাস হচ্ছে সব সময় বাংলাদেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে, যাদের ইতিহাস হচ্ছে ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে, তাদের কথাও আমাদের বলতে হবে। যারা ইনিয়ে-বিনিয়ে বলছে, তারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিল, তা আমরা মাঝেমধ্যে জিজ্ঞেস করি, সেই মুক্তিযুদ্ধটা কি পাকিস্তানের পক্ষে ছিল?’ তিনি বলেন, ‘কিছুদিন পরে তারা হয়তো বলবে, তারাই একমাত্র মুক্তিযুদ্ধ করেছিল, আমরা করি নাই। এ রকম অনেক বক্তব্য আপনারা ভোটের ময়দানে শুনতে পাবেন।’
সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ অনেক সচেতন। এখন আর ধর্মের বিড়ি বিক্রি করে বাংলাদেশের জনগণের সামনে ভোট চাওয়া যাবে না।’