একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান দীর্ঘ সময় ধরে উপস্থিত না থাকলে, সেখানে পাঠদান ব্যাহতসহ বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হওয়া স্বাভাবিক। ফাঁকিবাজির জন্য যদিও তেমন কোনো অজুহাতের দরকার হয় না।
তবে ফাঁকিবাজির অভিযোগ উঠেছে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার চান্দেরকান্দি ইউনিয়নের বাহেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। তাঁর নাম তাহমিনা সরকার। তিনি এই বিদ্যালয়ে প্রায় দেড় বছর ধরে অনুপস্থিত। কিন্তু প্রতি মাসে বেতন ঠিকই তুলে নিচ্ছেন। কেন তিনি এত দিন ধরে বিদ্যালয়ে আসছেন না এবং কেন তাঁর বিরুদ্ধে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি উপজেলা শিক্ষা কার্যালয় থেকে, সেই প্রশ্নেরও উত্তর নেই।
২০২৩ সালে এই বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ বিরোধের জেরে কয়েক দফায় অগ্নিসংযোগ ও নলকূপের পানিতে বিষ মেশানো হয়। সে বছরের ২ সেপ্টেম্বর রাতে বিদ্যালয়ের অফিসকক্ষে দুর্বৃত্তরা আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে প্রধান শিক্ষক মামলা করলে অফিস সহকারী কাম নৈশপ্রহরী মামুনসহ স্থানীয় তিনজন জেলে যান। এ ঘটনার পর থেকে তিনি নানা অজুহাত দেখিয়ে বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে দেন। কিন্তু নিয়মিত উপজেলা শিক্ষা কার্যালয়ে তিনি ঠিকই যান।
কী নিয়ে বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ বিরোধটি হয়েছিল, তা জানা যায়নি। একই সঙ্গে জানা যায়নি, কারা কী কারণে অগ্নিসংযোগ করেছিল এবং নলকূপে বিষ দিয়েছিল। যেকোনো সময় নানা ধরনের সমস্যা তৈরি হতে পারে, কিন্তু তা সমাধান না করে এভাবে বিদ্যালয়ের একজন প্রধান শিক্ষক কীভাবে দিনের পর দিন অনুপস্থিত থাকতে পারেন? বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ বিরোধ বা সেই ব্যক্তিগত সমস্যার অজুহাতে তিনি তাঁর দায়িত্বে অবহেলা করতে পারেন না।
প্রধান শিক্ষকের ওই বিদ্যালয়ে যেতে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে তিনি তাঁর সুবিধামতো জায়গায় বদলি হতে পারতেন। কিন্তু তিনি সেটা করেননি বলে জানা যায়। এখানে অভিযুক্ত ব্যক্তির সঙ্গে সঙ্গে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের যে গাফিলতি আছে, তা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। প্রধান শিক্ষকের খুঁটির জোর যদি শক্ত না হয়, তাহলে তিনি এভাবে দায়িত্বে অবহেলা করতে পারতেন না। তাঁর খুঁটির জোর কোথায়, সেটাও অনুসন্ধান করা দরকার।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রক্সি শিক্ষক দিয়ে দায়িত্ব পালন করার অভিযোগও রয়েছে। কোনো কোনো শিক্ষক অন্য কাউকে দিয়ে অর্থের বিনিময়ে তাঁর দায়িত্ব পালন করিয়ে নেন। কিন্তু তিনি তাঁর সুবিধাজনক জায়গায় অবস্থান করেও চাকরিতে বহাল তবিয়তে থাকেন। এই অপকর্ম করতে গিয়ে তাঁরা প্রচলিত আইন অমান্য করেন। তবে ভয়াবহ ব্যাপার হলো, তাঁদের কাছ থেকে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা নৈতিকতার ভালো দীক্ষা কীভাবে নেবে। এ ছাড়া ফাঁকিবাজেরা ভালো শিক্ষক কখনো হতে পারেন না।
আমাদের সমাজদেহের সর্বত্র যেভাবে পচন ধরেছে, সেখান থেকে বের হওয়ার জন্য শিক্ষকদের একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু শিক্ষকেরাই যদি এ ধরনের অনৈতিক কাজ করেন, তাহলে আমরা আর যাব কোথায়?
এখন সেই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার জন্য আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা খুব জরুরি। আর তা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার ওপরই একান্তভাবে বর্তায়।