রাজনীতির মাঠটাকে যাঁরা অশ্লীল বাক্যবাণের চারণক্ষেত্র বানিয়েছিলেন, তাঁদেরই একজন গ্রেপ্তার হয়েছে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে। উত্তরা থেকে গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। কাহিনি সেই আগের মতোই। মামলা থেকে বাঁচিয়ে দেওয়ার নাম করে ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা। কার নামে কেন মামলা, সেটা এখন আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার নয়। অভিযোগ নিয়ে এসে হুমকি দিয়ে টাকা আদায় করার ফ্যাশন থেকে এই বিপথগামী তারুণ্যকে ফিরিয়ে আনা যাবে কি না, সেটাই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
আমরা অবাক হয়ে লক্ষ করছি, প্রতিপক্ষকে কুরুচিপূর্ণ শব্দ ব্যবহারে ঘায়েল করার একটা অপসংস্কৃতি চালু হয়ে যাচ্ছে। যাঁরা বিভিন্ন দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তেমন কেউ কেউও অবলীলায় মঞ্চে উঠে অশ্রাব্য শব্দাবলি উচ্চারণ করছেন। তারই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে কনিষ্ঠদের মধ্যে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমানকে উদ্দেশ করে অশ্রাব্য গালাগাল যখন করা হয়েছে, তখন রাজনৈতিক সংস্কৃতির হাল নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সবচেয়ে বিস্ময়কর ছিল, বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমানের বাড়ির সামনে বসে এক তরুণী যখন অবলীলায় অশ্লীল বাক্য আউড়ে যাচ্ছিলেন, তখন আশপাশে জড়ো হওয়া সঙ্গী-সাথিরাও তাতে মজা পাচ্ছিলেন। কেউ সেখানে ছিলেন না, যাঁরা বলবেন, এ রকম গালাগাল করা যায় না। বরং ভিডিওর মাধ্যমে এই গালাগাল ছড়িয়ে গিয়েছিল এবং সেই তরুণীর গালাগালের নৈপুণ্য দেখে কেউ কেউ গর্বিতও হয়ে থাকতে পারেন।
‘টিনের চালে কাউয়া’ স্লোগান দিয়ে ‘দেশ মাতিয়ে দেওয়া’ সেই তরুণী এবার মামলা-বাণিজ্য করতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছেন। যে তিনজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে, তাঁদের একজন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিমানবন্দর থানার সাবেক সদস্যসচিব, একজন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য, অন্যজন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিমানবন্দর থানার সাবেক যুগ্ম সদস্যসচিব। অর্থাৎ রাষ্ট্র সংস্কারের অঙ্গীকার করা তিন তরুণ-তরুণী এখন মামলা-বাণিজ্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন। বিনা পুঁজির এ ব্যবসা করা এখন একটি ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। সমন্বয়ক পরিচয়ে এ ব্যবসা দেশের বিভিন্ন জায়গায় অহরহ ঘটে চলেছে বলে অভিযোগ আছে। কোনো কোনো শিক্ষার্থীর মধ্যে এ প্রবণতার জন্ম হওয়ায় তা গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা ও অঙ্গীকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে।
শুধু শাস্তি দিয়ে এই অস্বাভাবিক প্রবণতার সমাধান হবে না। তাকাতে হবে গোড়ার দিকে। কোন পারিবারিক পরিবেশে বড় হলে একজন মানুষ ‘টিনের চালে কাউয়া’ স্লোগান দিতে পারেন, তা গবেষণা করে বের করতে হবে। একটি শিশু কেন তার শৈশব হারাবে, এর জন্য শিশুটিকেই দায়ী করা হবে, নাকি যাঁরা শিশুটিকে একটি আনন্দময় ভবিষ্যৎ উপহার দেবেন বলে দায়বদ্ধ, তাঁদেরকে প্রশ্নের মুখোমুখি করতে হবে? কেন রাজনীতিতে পারস্পরিক সৌহার্দ্য হারিয়ে গিয়ে শুধু আক্রমণকেই হাতিয়ার ভাবা হবে? কেন বিনা পুঁজিতে ব্যবসা করার লোভে দলে দলে তরুণেরা মামলা-বাণিজ্য করবে?
প্রশ্নগুলোর উত্তর পাওয়া প্রয়োজন।