হোম > মতামত > সম্পাদকীয়

এক অন্তর্দীপের নিভে যাওয়া

সম্পাদকীয়

তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আর নেই। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস থেকে নিভে গেল আরেকটি আলো। এত দীর্ঘ লড়াই, এত প্রতিকূলতার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অসমসাহসী এই নারী শেষ বাঁকে এসে আর পারলেন না।

জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর গতকাল মঙ্গলবার সকাল ছয়টায় চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। তাঁর মৃত্যুসংবাদ ছড়িয়ে পড়লে শোকের নীরবতায় থমকে গেল দেশ। আর কাঁপিয়ে দিয়ে গেল রাজনৈতিক-মানসিক ভূমিকম্পের সূক্ষ্ম রেখাগুলো। সংগ্রাম, কারাবাস, অসুস্থতা—সবকিছুর মধ্যেও তিনি ছিলেন অবিচল; বিশ্বাসে দৃঢ় আর নেতৃত্বে অনমনীয়।

কারাগারের দেয়াল, হাসপাতালের শয্যা, রাজনীতির নির্মম অন্ধকার—সব মিলিয়ে দীর্ঘ বছর খালেদা জিয়া কাটিয়েছেন লড়াইয়ের ভার বহন করে; যে মানুষটি রাজপথে কখনো মাথানত করেননি। এমনিতে একটি লড়াই থেকে আরেকটিতে যাত্রা করতে করতে তাঁর শরীর হয়ে উঠেছিল ভঙ্গুর, মন ক্ষয়ে গিয়েছিল প্রতিহিংসার ধারাবাহিক আঘাতে। বিদেশে চিকিৎসা, দেশ-বিদেশের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, পরিবারের অসীম ব্যাকুলতা—সবই ছিল, সবই হলো; তবু তাঁকে আর ফেরানো গেল না।

তুমুল জনপ্রিয় এই নেত্রীর প্রস্থান শুধু একটি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের মৃত্যু নয়; এটি একটি যুগের সমাপ্তি। সেই যুগের মধ্যে আছে মুক্তিযুদ্ধের অন্ধকারে তাঁর বন্দিত্ব, স্বামীর শাহাদাতে জীবনচক্রের ভেঙে পড়া, সেনানিবাসের বাড়ি থেকে উচ্ছেদের অশ্রু, ওয়ান-ইলেভেনের নিঃসঙ্গ বন্দিত্ব, আর পুরান ঢাকার কারাগারের শীতল দেয়ালে জমে থাকা দীর্ঘশ্বাস। সবকিছুর পরও তিনি দাঁড়িয়েছিলেন—বাধা, ব্যথা আর ব্যর্থতা পেরিয়ে।

খালেদা জিয়ার জীবন ছিল ঘাত-প্রতিঘাতে পূর্ণ। একদিকে তিনি তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, গণতন্ত্রের সংগ্রামের মুখ; অন্যদিকে সমালোচনাও তাঁর পিছু ছাড়েনি। গণতন্ত্রের পথে হাঁটতে গিয়ে যেমন ভালোবাসা পেয়েছেন, তেমনি তীব্র বিরোধিতাও কম ছিল না। অনেক ভুলের দায় তাঁকে বহন করতে হয়েছে। কিন্তু তাঁর অটলতা, প্রতিকূলের মুখে দাঁড়িয়ে থাকার ক্ষমতা, আর ব্যক্তিজীবনের অবর্ণনীয় ক্ষতবিক্ষত অধ্যায় তাঁকে আলাদাভাবে স্মরণীয় করে তুলেছে।

শোকের এই মুহূর্তে আমরা এক রাজনীতিককে নয়; এক দৃঢ় চরিত্র নারীকে পরম শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি। যাঁর জীবনের গল্প শুধু সংগ্রামের নয়, অবিচল থাকার অনুশাসনও বটে। একটি অন্তর্দীপ নিভে গেছে; কিন্তু তার আলো অনেক দিন ধরে পথ দেখাবে আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসকে।

অসুস্থ শরীর নিয়েও যে মানুষটি শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে গেছেন, তিনি আমাদের শিখিয়ে গেলেন—দৃঢ়তা কীভাবে জন্ম নেয়। তাঁর কণ্ঠে ছিল সংগ্রামের ইতিহাস, নীরবতায় ছিল ত্যাগের গভীরতা। আজ তাঁর অনুপস্থিতিতে শূন্যতা শুধু রাজনীতিতে নয়, জাতির অনুভূতিতেও।

খালেদা জিয়া ছিলেন রাজনীতির এক অশ্বারোহিণী। যিনি প্রতিদিন আহত হন, প্রতিদিন অভিযুক্ত হন, আবার প্রতিদিনই ঘুরে দাঁড়ান। জয়-পরাজয়ের হিসাবের বাইরে ছিল তাঁর দৃঢ়তার বর্ণমালা। আজ তিনি আমাদের মাঝে নেই; কিন্তু যে অন্ধকার-আলো মেশানো উপস্থিতি তিনি রেখে গেলেন, তা বহুদিন পর্যন্ত রাজনীতির ভাষা, প্রতিদ্বন্দ্বিতার বোঝাপড়া এবং ইতিহাসের নির্মোহ রেকর্ডে প্রতিধ্বনিত হয়ে থাকবে। ইতিহাস তাঁকে মনে রাখবে—ভালোবাসা, বিতর্ক আর অবিচল সাহসের এক অনন্য নাম হিসেবে।

বিদায় খালেদা জিয়া।

কুয়াশা

নির্বাচনী ব্যয়

খুলনার এক গোলমেলে ব্যাপার

একটি প্রত্যাবর্তন, বহু প্রত্যাশা

বড়দিনের শুভেচ্ছা

শিক্ষকের ক্ষমতা

ধরা হোক হামলাকারীদের

কী ভয়ংকর!

শান্তি এখন খুব প্রয়োজন

শান্ত হোন