হোম > মতামত > উপসম্পাদকীয়

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান এখন অনেক উঁচুতে

ড. কামালউদ্দীন আহমদ

আগামীকাল ২০ অক্টোবর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৬ বছরের এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক অর্জন আছে। হয়তো সেই অর্জন অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো নাও হতে পারে। রাজধানীতে পুরান ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থানের কারণে এর আকর্ষণ অন্য রকমের। যখন জগন্নাথ কলেজ ছিল, তখনো অন্যরকমের আবেদন ছিল। বাংলাদেশে ও দেশের বাইরে অনেক পেশাজীবী এই প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন করেছেন। অনেক রাজনীতিবিদ এখানেই লেখাপড়া করেছেন। আমাদের মহামান্য রাষ্ট্রপতিও এখানে বসে আইন বিষয়ে পরীক্ষা দিয়েছেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তনে তিনি তাঁর স্মৃতিচারণে সে কথা বলেছেন। এ রকম অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব এই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতিধারণ করছেন।

‘জগাবাবুর পাঠশালা’ বা যে নামেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় অভিহিত হোক না কেন, এর একটি অহংকারের ভিত্তি আছে। তবে যে প্রক্রিয়ায় জগন্নাথ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়েছে, তা ছিল অনেকটাই ত্রুটিপূর্ণ। সাধারণত একটি নতুন পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হলে তার একটি অবকাঠামোগত পরিকল্পনা থাকে। এর কোনোটাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছিল না। কলেজ আমলের কতগুলো ছাত্রাবাস ছিল, যার অনেকগুলোই বেহাত হয়ে গিয়েছিল। এগুলো ঠিকমতো পরিচালিত হতো কি-না, জানা নেই। মাঝেমধ্যে এলাকাবাসীর সঙ্গে ছাত্রদের কলহ বিবাদ হতো। হল পরিচালনার ব্যাপারে যেভাবে প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়, তার অনেকটাই ছিল না। স্বাধীনতার পর কয়েক বছর হলগুলো মোটামুটি সচল ছিল। হলগুলো কীভাবে পরিচালিত হতো, কিংবা এর প্রশাসনিক কার্যক্রম কতটা কলেজ কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে ছিল, তা জানা নেই। এভাবে এগুলো একে একে হাতছাড়া হতে থাকে। এরশাদের আমল থেকেই এই প্রক্রিয়া শুরু। প্রভাবশালীদের দখলে চলে যেতে থাকে একেকটি হল। 

মাঝেমধ্যে পত্রপত্রিকায় এসব হলের ভেতরে সংগঠিত বিভিন্ন ঘটনার সত্য/মিথ্যা বিবরণ প্রকাশিত হতো। আর হলগুলোর অবস্থান ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল। দীর্ঘ অনেক বছর এই কলেজ, আর তথাকথিত হলগুলোও নিয়ন্ত্রিত হতো মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তির দ্বারা। এক সময় কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম নিয়েও নানা রকম প্রশ্ন উঠতে থাকে। তারপরও জগন্নাথ তার স্বকীয় মহিমায় এগিয়ে গিয়েছে। ফলে ২০০৫ সালে এটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এর অবকাঠামো কলেজ আমলের মতোই রয়ে যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো পরিকল্পিত কিছুই এখানে নেই। শুধু অবস্থান রাজধানীতে বলে এর একটি গুরুত্ব আছে। স্বাভাবিক কারণেই এখানকার ছাত্র-ছাত্রীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমতুল্য অনেক সুবিধা আশা করেন। আবার অনেকে সীমাবদ্ধতা মেনে নিয়েও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা চালিয়ে যান।

এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭/৪ ধারা নামে একটি ধারা ছিল। ধারাটি ছিল পাঁচ বছর পর বিশ্ববিদ্যালয় তার নিজস্ব আয়ে চলবে। এই ধারার মধ্যে আর কী কী শর্ত সন্নিবেশিত ছিল, তা আমার এই মুহূর্তে জানা নেই। একই ধারার বলে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়। এর বিরুদ্ধে এই জগন্নাথের ছাত্র-ছাত্রীরা ২০১১ সালে এক জোরালো আন্দোলন গড়ে তোলেন। একপর্যায়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এগিয়ে এলেন এই সমস্যা সমাধানে। আমরা একদল সিনিয়র শিক্ষক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মেজবাহ উদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে সহযোগিতা করি এবং এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করি। তিনি প্রথম প্রতিক্রিয়ায় বললেন, এটা তো বিশ্ববিদ্যালয় করাই ঠিক হয়নি। আসলে তিনি অবকাঠামোগত অপ্রতুলতার কথা ভেবেই কথাটি বলেছিলেন। সে জন্যই ২৭/৪ ধারা বাতিলের ঘোষণা দেন এবং বিল আকারে এটি সংসদে উত্থাপন করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন এবং বাতিল করেন।

সেই থেকেই আসলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু। নিজস্ব আয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চালু হওয়া মানে ছাত্র-ছাত্রীদের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যায় টিউশন ফি পরিশোধ করা। সে জন্যই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রথম দেখাতেই আমাদের বলেছিলেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা এত বেতন কীভাবে দেবে। 

১৬ বছরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্জন অনেক। সবচেয়ে ঈর্ষণীয় হলো এর শিক্ষকমণ্ডলী। বিদেশ থেকে উচ্চ ডিগ্রি নিয়ে অনেক শিক্ষক এখানে পড়াচ্ছেন ও গবেষণা করেছেন। দেশের বিভিন্ন গবেষণাপ্রতিষ্ঠানে গবেষণা করেছেন। এসব অভিজ্ঞ শিক্ষকমণ্ডলীর সান্নিধ্যে শিক্ষার্থীরাও স্ব স্ব ক্ষেত্রে অনেক অবদান রাখছে। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান এখন অনেক উঁচুতে।

দেশব্যাপী বিভিন্ন সৃষ্টিশীল কাজে এখানকার শিক্ষার্থীদের ভূমিকা প্রশংসাযোগ্য। অবকাঠামোগত উন্নয়নের লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একান্ত ইচ্ছায় কেরানীগঞ্জে ২০০ একর জায়গায় নতুন ক্যাম্পাস নির্মাণের প্রাথমিক কাজ এগিয়ে চলছে। শিগগিরই মাস্টারপ্ল্যান প্রণীত হবে। দ্রুতই সীমানা দেয়ালের কাজ শুরু হবে বলে আশা করা যায়। সীমাবদ্ধতা অনেক আছে। তারপরও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার আশাহত নয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বঙ্গবন্ধুর আদর্শে শেখ হাসিনার হাত ধরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় অবশ্যই অভীষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে যাবে; অগণিত শিক্ষার্থীর স্বপ্ন পূরণে পুরোনো ঢাকার ঐতিহ্য রক্ষার্থে অর্থবহ ভূমিকা পালন করবে। 

অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ: কোষাধ্যক্ষ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

এবার নির্বাচনের দিকে চোখ থাকবে সবার

আন্তর্জাতিক মূল্যহ্রাস ভোক্তার কাছে পৌঁছায় না কেন

ভারতজুড়েই কি ফুটবে পদ্মফুল

ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ

সমুদ্রস্তরের উত্থান ও দ্বীপরাষ্ট্রের নিরাপত্তা

সংকটেও ভালো থাকুক বাংলাদেশ

মন্ত্রীদের বেতন-ভাতা নিয়ে কথা

পাঠকের লেখা: বিজয় অর্জনের গৌরব

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সঙ্গে আমাদের কি বিচ্ছেদ হলো

একাত্তরে সামষ্টিক মুক্তি আসেনি