হোম > মতামত > উপসম্পাদকীয়

কেন আমরা বার বার লাল কার্ড দেখাই?

অর্ণব সান্যাল

সড়ক অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে সম্প্রতি লাল কার্ড দেখিয়েছে শিক্ষার্থীরা। কিন্তু তা তো এবারই প্রথম নয়। এর আগেও এমন লাল কার্ড অনেক দেখানো হয়েছে। ফল কি মিলেছে? নাকি আমাদের শুধু লাল কার্ড দেখিয়ে যাওয়ার দায়? 

অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, আমরা সাধারণেরা সব সময় চিৎকার করে গলা ফাটিয়েই যাব। আর তা শুনেও না শোনার ভান করবেন কর্তারা। আর এভাবে নির্দিষ্ট সময়ের বিরতিতে রাস্তায় নেমে কখনো বৃদ্ধ, কখনো তরুণ বা কখনো কিশোর–কিশোরীরা দেখিয়ে যাবেন লাল কার্ড। অথচ কার্ডের সেই লাল রং কারও চোখে লজ্জা হয়ে ফুটবে না। এমনকি প্রতীকী বা সত্যিকারের লাশের মিছিলেও কুঁচকাবে না ভুরু।

এসবে আর কেন আমরা কিছুই মনে করি না? কারণ, আমাদের শাসকযন্ত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা একটি বিষয় বুঝে গেছেন যে, ওসব থিতিয়ে যাবে এক না একদিন! আর বাকি সব চলবে আগের মতোই। তাই অন–অ্যারাইভাল ফ্রি ভিসা পেয়ে ফের শুরু হয় অনিয়মের মহোৎসব। 

এবারের ঘটনাও ভিন্ন নয়। রাজধানীর রামপুরায় সড়ক দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে বেশ কিছুদিন হলো। এর পর ধারাবাহিক আরও কিছু সড়ক দুর্ঘটনায় কয়েকজনের মৃত্যুর খবর মিলল। ফলাফল—অবরোধ, লাল কার্ড, ব্যঙ্গচিত্র, প্রতীকী লাশ নিয়ে মিছিল ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু এসব প্রতিবাদে কি আদৌ কারও কিছু আসে–যায়! 

ঠিক চার দিন আগের কথা বলি। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা। সকালবেলা একটি গাড়ি ওয়ানওয়ে রোড ধরে উল্টো দিকে চলে কারওয়ান বাজার মোড়ে উঠছিল। সঙ্গে সঙ্গে কর্তব্যরত ট্রাফিক সার্জেন্ট ও কনস্টেবলেরা গাড়িটিকে আটকে ফেললেন। রাস্তার পাশে দাঁড় করালেন। শুরু হলো জেরা। সার্জেন্টের জিজ্ঞাসা, কেন চালক উল্টো দিকে গাড়ি চালালেন? গাড়ি ও চালকের কাগজপত্র তলব করা হলো। কানে এল, ৬ হাজার টাকা জরিমানা করার শাসানি। 

আর সেই শাসানি শুনেই চালকের অনুনয়–বিনয় চালু। তিনি একটু ত্রস্ত, তা কয়েক হাত দূর থেকেও বোঝা গেল। ঠিক সেই সময়টায় চালককে বলা হলো, গাড়ি রাস্তার অন্য পাশে সরিয়ে রেখে আসার কথা। আর তারপরই হলো ‘চিরায়ত’ সেই ঘটনার মঞ্চায়ন। এ কারণে আমাদের এখনো দুর্ঘটনার পর রাস্তায় লাল কার্ড বা প্রতীকী লাশ নিয়ে মিছিল করতে হয়। 

ওই অভিযুক্ত চালক দায়িত্বরত ওই পুলিশ সদস্যের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আসার পর জিজ্ঞাসা করে জানা গেল, ৬ হাজার টাকার জরিমানা ৫০০–এই রফা হয়েছে। তবে সকাল সকাল পকেট থেকে টাকা খসায় তিনি স্বাভাবিকভাবেই নাখোশ। বলছিলেন, ‘ওই রাস্তা দিয়া অনেকেই উল্টা আসে। হুদাই আমারে ধইরা ৫০০ টাকা নিল।’ 

চালকের এহেন বক্তব্যের সত্যতা মিলল একই দিন রাত ১০টায়। নিজে ওই রাস্তা ধরে ফিরতে গিয়ে দেখলাম, বেশ কয়েকটি গাড়ি ওয়ানওয়ে রোডে উল্টো পথে আসছে। আর সব গাড়ির সামনে আছে পুলিশেরই একটি পেট্রল কার। 

এখন প্রশ্ন হলো, যাদের নিয়ম রক্ষা করার কথা, তাঁরাই যদি নিয়ম ভাঙেন, তবে অন্যকে নিয়ম শেখাবেন কীভাবে? ওই চালক যদি সত্যিই ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করে থাকেন এবং তা অমার্জনীয় হয়, তবে সঠিক উপায়ে জরিমানা করাই তো ভালো ছিল। তাতে অন্তত জরিমানা দেওয়ার ভয়েই ওই চালক উল্টো দিকে গাড়ি চালাতে ভয় পেতেন। কিন্তু তিনিই যখন বুঝবেন, ৬ হাজার টাকার জরিমানা ৫০০ টাকায় রফা করা যায়, তখন তিনি আইন মানবেন কোন হিসাবে? আবার আইন রক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্তরাই যদি গাড়ি উল্টো পথে চালান, তবে সাধারণেরা কি সেটি দৃষ্টান্ত হিসেবে গ্রহণ করবে না? অবশ্যই করবে এবং তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত সেই রাতেই নিজ চর্মচক্ষুতে দেখার সৌভাগ্য হয়ে গেছে। 

আর ঠিক এমন পরিস্থিতিতেই আমাদের সামনে বছরে বছরে আসে সড়ক দুর্ঘটনার নতুন নতুন তথ্য। এই যেমন, চলতি বছরের নভেম্বরে সারা দেশে ৩৭৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪১৩ জন নিহত হয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানা গেছে। শনিবার রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের মাসিক দুর্ঘটনার প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। সাতটি জাতীয় দৈনিক, পাঁচটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে সংগঠনটি। এই প্রতিবেদন অনুযায়ী, নভেম্বরে প্রতিদিন সড়কে প্রায় ১৪ জনের প্রাণ গেছে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, এ সময় ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ৮৩টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ১০৪ জন। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় ১৪টি দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত হয়েছে। সবচেয়ে কম বরিশাল বিভাগে। রোড সেফটির দুর্ঘটনার প্রতিবেদনে তুলনামূলক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, গত অক্টোবর মাসের তুলনায় নভেম্বরে সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি বেড়েছে। 

এবার পাঠক, আপনারাই বলুন, যদি নিয়মের ঘোড়া ওপরের ঘটনার মতোই ধুঁকে ধুঁকে চলে, তবে কি আর সড়কে দুর্ঘটনা ও তাতে প্রাণহানির ‘ভীতিকর’ সংখ্যা ভয় দেখানো বন্ধ করবে? নাকি সেই ভয় দেখানো চলতেই থাকবে রাত–দিন নির্বিশেষে? 

সংশ্লিষ্ট কর্তা–ব্যক্তিরা বলতেই পারেন, আইন তো আছে, আইন প্রয়োগের চেষ্টাও চলছে। কিন্তু তা আসলে কত দূর কী হয় বা হচ্ছে, তার কোনো হিসাব সংশ্লিষ্টরা কোনো দিন জনগণকে দিয়েছেন? এই প্রশ্ন শুনে যদি আপনাদের মন বলে ওঠে, ‘এহ্, হিসাব!’ , তবে আর নতুন করে বলার কিছু নেই। আমরা কেন কিছুদিন পরপর সড়কে নেমে লাল কার্ড দেখাই এবং তার ফলাফল কী, তা তবে মনের গহিনে স্পষ্টই আছে। 

হাতের কার্ডেও তবে সেই নির্লিপ্ততার রং ঢালা হোক। লালের বদলে আসুক সবুজ। সড়কে অব্যবস্থাপনাকে না হয় গ্রিন কার্ডই দেখাই আমরা। তাতে যদি সংশ্লিষ্টদের আরাম হয়, ক্ষতি কী! আসল বা সুদ বা সুদে–আসল সবই তো তাঁরাই। 

এবার নির্বাচনের দিকে চোখ থাকবে সবার

আন্তর্জাতিক মূল্যহ্রাস ভোক্তার কাছে পৌঁছায় না কেন

ভারতজুড়েই কি ফুটবে পদ্মফুল

ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ

সমুদ্রস্তরের উত্থান ও দ্বীপরাষ্ট্রের নিরাপত্তা

সংকটেও ভালো থাকুক বাংলাদেশ

মন্ত্রীদের বেতন-ভাতা নিয়ে কথা

পাঠকের লেখা: বিজয় অর্জনের গৌরব

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সঙ্গে আমাদের কি বিচ্ছেদ হলো

একাত্তরে সামষ্টিক মুক্তি আসেনি