হোম > মতামত > উপসম্পাদকীয়

দেশি পশুতে কোরবানি

রিয়াদ হোসেন

ছবি: সংগৃহীত

আমাদের দেশের খামারিরা কোরবানি সামনে রেখে সারা বছর পশুপালন করে থাকেন। এ সময় তাঁরা খামারের অধিকাংশ পশু বিক্রি করে দেন। এতে একদিকে যেমন তাঁরা লাভবান হন, অন্যদিকে আমাদের অর্থনীতিও সচল হয়। কিন্তু কোরবানির সময় পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে চোরাই পথে গরু আসার কারণে সত্যিকার অর্থে ক্ষতিগ্রস্ত হন দেশীয় খামারিরা। তাঁরা সারা বছর যে স্বপ্ন নিয়ে পশু পালন করেন, তা অনেকটা বেসামাল হয়ে যায়। ফলে তাঁরা পশুপালনে আগ্রহ হারান; যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে আমাদের অর্থনীতিতে। কিন্তু এ বছর অন্তর্বর্তী সরকার কোরবানির জন্য পশু আমদানি না করার ঘোষণা দিয়েছে। কারণ দেশে যথেষ্ট পরিমাণ পশু আছে, যা দেশের মধ্যে ব্যক্তি উদ্যোগে উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। এতে আমাদের অর্থনীতিও সচল হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, এ বছর কোরবানির জন্য মোট ১ কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩৭টি গবাদিপশু প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আরও বলা হয়েছে, কোরবানির চাহিদা মেটানোর পরেও প্রায় ২০ লাখ ৬৮ হাজারের বেশি গবাদিপশু অতিরিক্ত থাকবে। ফলে বাইরে থেকে কোরবানির জন্য কোনো পশু আমদানি করার দরকার পড়বে না। সরকারের নেওয়া এই পদক্ষেপ কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলে দেশের অভ্যন্তরে যেসব খামারি পশু পালন করেছেন, তাঁরা বেশ লাভবান হবেন এবং ভবিষ্যতে আরও লোকজন পশুপালনে আগ্রহী হয়ে উঠবেন।

তবে কোরবানি সামনে রেখে আমাদের সীমান্তবর্তী জেলাসহ অনেক জায়গায় অস্থায়ী পশুর হাট গড়ে ওঠে। যেখানে অবৈধভাবে আমদানি করা পশু বিক্রি করা হয়। এতে বাইরে থেকে আসা পশুতে যেমন দেশের মধ্যে রোগবালাই ছড়ায়, তেমনি পশুর দাম কমে যাওয়ায় আমাদের খামারিদেরও স্বপ্নভঙ্গ হয়। বিগত বছরে দেখা গেছে, বাইরে থেকে পশু আমদানি করার কারণে পরবর্তী বছরগুলোতে দীর্ঘমেয়াদি একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়ে আমাদের ডেইরি খাতে। এ জন্য বর্তমান সরকারের নেওয়া এই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ আমাদের অর্থনীতির জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে। তাই পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত এবং মিয়ানমার থেকে যাতে চোরাই পথে কোনোভাবে গরু দেশে প্রবেশ করতে না পারে তার জন্য সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে। সরকারের নেওয়া এই পদক্ষেপ বাস্তবায়নে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

কোরবানির সঙ্গে আমাদের অর্থনৈতিক অনেক বিষয় ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। চামড়া প্রক্রিয়াকরণ, বাজারজাতকরণ এবং রপ্তানিকারক হিসেবে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের একটি চাহিদা ও গ্রহণযোগ্যতা অনেক আগে থেকেই রয়েছে। ফলে দেখা যায়, কোরবানিতে পশুর ভালো দাম পাওয়া যাবে এমন চিন্তা করে দেশের একশ্রেণির মানুষ উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলছে। পশুপালন করেই বিগত এক দশকে আমাদের দেশের অনেক তরুণ উদ্যোক্তা নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন করেছেন। এতে আমাদের কর্মসংস্থানের ওপরও চাপ কমেছে। এ জন্য গরুর বাজারে ধস নামিয়ে খামারিদের স্বপ্ন মেরে ফেলা যাবে না।

লোভী একশ্রেণির ব্যবসায়ী বহু বছর ধরে অবৈধ পথে কোরবানির পশু চোরাচালানের ব্যবসা করে আসছেন। তাঁদের চিহ্নিত করা প্রয়োজন। এসব চোরাকারবারির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করা দরকার। প্রয়োজনে প্রতিটি সীমান্ত অঞ্চলে নজরদারি বৃদ্ধি করতে হবে। চোরাকারবারে সম্পৃক্ত মানুষদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া গেলে অনেকাংশে কমে আসবে এসব অবৈধ কাজ। পাশাপাশি কোরবানির এ সময়ে রাস্তাঘাটে চাঁদাবাজি ও অতিরিক্ত টোল আদায় বন্ধে এবং পরিবহন ব্যয় কমিয়ে আনাসহ ছিনতাই প্রতিরোধে প্রশাসনকে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। তাহলে দেশীয় খামারিরা লাভবান হবেন এবং জিডিপিতে উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রাখায় দেশের অর্থনীতিতে সুবাতাস বইবে।

লেখক:– শিক্ষার্থী, সরকারি বিএল কলেজ, খুলনা

বুদ্ধিজীবী দিবস যেন ভুলে না যাই

উড়োজাহাজগুলোও পরিবেশের ক্ষতি করছে

যে প্রশ্নগুলোর জবাব পেতে হবে

পুতিনের ভারত সফর: আঞ্চলিক ও বিশ্বরাজনীতিতে কী বার্তা দেয়

বিজয়ের মাসে শঙ্কার কথা বলি

পথকুকুর-বিড়াল হত্যা: আইন এবং শাস্তি

জীবনের অপরিহার্য অংশ সংগীত ও শরীরচর্চা

দুর্নীতি রোগে আক্রান্ত আফ্রিকা

মার্কিন নিরাপত্তা কৌশল কি আঞ্চলিক আধিপত্যবাদের ব্লুপ্রিন্ট

ইমরান খান প্রতিরোধের প্রতীক