হোম > মতামত > উপসম্পাদকীয়

শিক্ষকেরা কি রাষ্ট্রের অবলা প্রাণী

কাজী মাসুদুর রহমান

সচেতন মানুষও শিক্ষকদের দাবির পক্ষে সংহতি প্রকাশ করছেন ফেসবুকে। ছবি: আজকের পত্রিকা

পৃথিবীর বহু দেশে শিক্ষকের অর্থনৈতিক ও সামাজিক মর্যাদা উচ্চতর হলেও, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এ চিত্র ভালো নয়। বিশেষ করে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ক্ষেত্রে এ চিত্র বেশ হতাশাজনক ও বেদনাদায়ক। দুঃখজনক হলেও সত্য যে দীর্ঘদিন ধরে চলমান এ দুরবস্থা দূরীকরণে কোনো সরকারই কোনো আন্তরিকতা দেখায়নি।

আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের ক্ষেত্রে মাধ্যমিক পর্যায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বলা যায়, দেশের উৎপাদনশীল শিক্ষার সবচেয়ে বৃহৎ ও গুরুত্বপূর্ণ স্তর হলো মাধ্যমিক। কেননা, আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় দেশের অধিকাংশ শিক্ষার্থীই মাধ্যমিক কিংবা উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে কর্মজীবনে প্রবেশ করে। আবার উচ্চশিক্ষা স্তরে প্রবেশের ক্ষেত্রেও এ স্তরটি ট্রানজিট স্তর হিসেবে গুরুত্ব বহন করে। অথচ এই স্তরের প্রায় ৯৭ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই বেসরকারি। ফলে শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা মেটাতে হয় ‘অনুদানভিত্তিক’ মান্থলি পেমেন্ট অর্ডারের (এমপিও) মাধ্যমে। তাঁদের বেতন-ভাতাও আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে অপ্রতুল ও যথেষ্ট বৈষম্যপূর্ণ। বিশেষ করে চিকিৎসা ভাতা, বাড়িভাড়া ও উৎসব ভাতার খাতে এই বৈষম্য খুবই প্রকট। যেমন বর্তমানে তাঁদের চিকিৎসা ভাতা, ঘরভাড়া ও উৎসব ভাতা দেওয়া হয় যথাক্রমে ৫০০ টাকা, ১০০০ টাকা ও মূল বেতনের শতকরা ৫০ ভাগ। অথচ সরকারি মাধ্যমিক প্রতিষ্ঠানের (যার সংখ্যা মাত্র ৩-৪ শতাংশ) শিক্ষকদের এ ক্ষেত্রে চিকিৎসা ভাতা ১৫০০ টাকা; ঘরভাড়া মূল বেতনের ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ (উপজেলা ও সিটি করপোরেশনভিত্তিক)। একই সিলেবাস ও পাঠ্যক্রমের আওতায় শিক্ষাদানরত শিক্ষকদের মাঝে এ রকম আর্থিক বৈষম্য খুবই অযৌক্তিক। ২০১৫ সাল থেকে এনটিআরসির মাধ্যমে বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ করা হচ্ছে, যা বিসিএসের চেয়েও কোনো অংশে কম নয়। বিসিএসের মতো তাঁদেরও প্রিলিমিনারি, লিখিত ও ভাইভার মাধ্যমে প্রখর মেধাভিত্তিক যাচাইয়ের মধ্য দিয়ে নিয়োগ করা হচ্ছে।

এর আগে সরকারি শিক্ষকদের ৫ শতাংশ বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলেও এ থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের দীর্ঘদিন বঞ্চিত রাখা হয়েছিল। এমনকি বৈশাখী ভাতা সরকারি সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দেওয়া হলেও তাঁদেরকে এ সুবিধার বাইরে রাখা হয়েছিল। ফলে সামাজিকভাবে তাঁরা পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ হীনম্মন্যতার মধ্যে বাস করতেন। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পর তাঁরা ২০১৮ সাল থেকে এই সুবিধার আওতায় এসেছেন।

এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও কর্মচারীরা ২০ শতাংশ ঘরভাড়া, ১৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা ও ৭৫ শতাংশ উৎসব ভাতার দাবি দীর্ঘদিন ধরে করে আসছেন, যা জাতীয় ও বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির প্রতাপের তুলনায় যৎসামান্য। সবশেষ গত ১৩ আগস্ট জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে তাঁরা উল্লিখিত দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পদযাত্রা করে দাবি মানতে ১২ অক্টোবর পর্যন্ত সরকারকে সময়সীমা বেঁধে দেন। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে তাঁদের দাবি বাস্তবায়নে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে যথেষ্ট গড়িমসি লক্ষ করা যায়। সবশেষ ৫ অক্টোবর ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’- এর বিশেষ দিনে শিক্ষকদের বাড়িভাড়া মাত্র ৫০০ টাকা বৃদ্ধি করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। এর প্রতিবাদে তাঁরা আবারও আন্দোলনে নামলে ১৩ অক্টোবর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী টিয়ার গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেডের মতো ভয়াবহ অস্ত্র ব্যবহার করে। এমনকি বেধড়ক লাঠিপেটা করে শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করা হয়। সচেতন মহল থেকে প্রশ্ন উঠেছে, এ রাষ্ট্র কি তবে শিক্ষকদেরকে অবলা প্রাণী মনে করে? দাবি বাস্তবায়নে ও নির্যাতনের প্রতিবাদে ১৪ অক্টোবর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পুরো দেশের এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেওয়া হয় এবং তদানুযায়ী তা পালিত হচ্ছে।

বছর শেষের এই সময়ে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন শিক্ষার্থীদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি বয়ে আনবে। কেননা, আর মাত্র কয়েক মাস পর ২০২৬ সালের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের মতো দেশের বৃহত্তম দুই পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠানের উচ্চমাধ্যমিকের প্রাক-নির্বাচনী পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে। মাধ্যমিকের নির্বাচনী পরীক্ষাও অত্যাসন্ন। এ ছাড়া অন্যান্য শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা আগামী মাস থেকে শুরু হবে। এ রকম পরিস্থিতিতে দেশের তাবৎ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।

সচেতন মানুষও শিক্ষকদের দাবির পক্ষে সংহতি প্রকাশ করছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছেন। তাই কালক্ষেপণ না করে শিগগিরই সৃষ্ট সমস্যার বাস্তবসম্মত সমাধান করে শিক্ষকদের সম্মানের সঙ্গে শ্রেণিকক্ষে ফিরিয়ে দেওয়া হোক।

যেখানে মুক্তিযুদ্ধ বেঁচে থাকে

মা কুকুর ও তার আটটি ছানা

যেথায় হাওয়ায় ভাসে ফুলের কান্না

মিসরের আরেকটি নামকাওয়াস্তে ভোট

ব্যক্তিগত গোপনীয়তা কি থাকছে

চীন-আমিরাত সামরিক সখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের ভেতর-বাহির

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শিক্ষা কেন দরকার

ক্যারিয়ার নিয়ে বিভ্রান্তি

বিষ্ণু দের কাব্যচেতনার সমগ্রতা