১৯৮৯ সালে আমরা যখন সোভিয়েত ইউনিয়নে ছিলাম, তখন পৃথিবীর ইতিহাস এক বিশাল পরিবর্তনের সাক্ষী হয়েছিল। অনেকেরই মনে পড়ে যাবে, মিখাইল গরবাচেভের পিরিস্ত্রোইকা আর গ্লাসনস্তের আহ্বানে পুরো সমাজতান্ত্রিক ব্লক আশান্বিত হয়ে উঠেছিল। পুনর্গঠন এবং স্বচ্ছতা-জবাবদিহির প্রশ্নটি সে সময় সোভিয়েত ইউনিয়নে কেন এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল, সেটা তাৎক্ষণিকভাবে বাইরের পৃথিবী বুঝে উঠতে পারেনি। সোভিয়েত শাসনব্যবস্থায় এত সব জঞ্জাল জমেছিল, যা কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষে সাফ করা ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছিল, কারণ সেই জঞ্জাল সৃষ্টির মূল দায়ভার ছিল তাদেরই। তারা জনগণের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। সবখানে পার্টি-কর্তৃত্ব বজায় রাখতে গিয়ে তারা রাজনীতি-অর্থনীতি-সমাজ ও সংস্কৃতি জগৎকে আত্মীকৃত করে ফেলেছিল। বিরুদ্ধমত সহ্য করা হতো না। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘ইতিহাসের স্বপ্নভঙ্গ’ বইটি পড়লে সে সময়ের বাস্তবতা বোঝা সহজ হয়। তিনি সোভিয়েত ব্লকের দেশগুলোয় সমাজতন্ত্র পতনের নিখুঁত ও নির্ভরযোগ্য চিত্র এঁকেছেন। আমি শুধু ১৯৮৯ সালের কিছু ঘটনার কথা মনে করিয়ে দিতে চাই, যা ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙনের ক্ষেত্রেও বড় ভূমিকা পালন করেছে।
১৯৮৯ সালের জুন মাসে পোল্যান্ডে আংশিকভাবে মুক্ত নির্বাচন হয়েছিল, কমিউনিস্টবিরোধী সলিডারিটি সরকার এসেছিল ক্ষমতায়। হাঙ্গেরি খুলে দিয়েছিল তাদের সীমান্ত, সে দেশে পতন ঘটেছিল কমিউনিস্ট শাসনের। সে বছর ৯ নভেম্বর ভেঙে পড়েছিল বার্লিন প্রাচীর। সারা পৃথিবী অবাক বিস্ময়ে দুই জার্মানির মিলনদৃশ্য দেখেছিল। চেকোস্লোভাকিয়ায় ঘটেছিল ভেলভেট রেভল্যুশন, শান্তিপূর্ণভাবেই পতন হয়েছিল কমিউনিস্ট শাসনের, আর এ ক্ষেত্রে রোমানিয়ার কথা তো আলাদা করে বলতেই হয়। চসেস্কুর পতন ও তাঁকে হত্যা করার মাধ্যমে পূর্ব ইউরোপে সমাজতান্ত্রিক ব্লক একেবারেই ভেঙে পড়ে। বাদ থাকল সোভিয়েত ইউনিয়ন। ১৯৯১ সালের ২৬ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ঘটে।
সে সময় কীভাবে সোভিয়েত ইউনিয়নে ভাস্কর্যসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ভাঙার প্রতিযোগিতায় নেমেছিল মানুষ, সে কথা মনে করিয়ে দিতে চাই পরবর্তী বিষয়টিতে প্রবেশ করার উপলক্ষ হিসেবে।
মনে করিয়ে দিতে চাই, রাশিয়ায় সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের মূল নেতা লেনিনের ভাস্কর্যও বলপ্রয়োগের মাধ্যমে অপসারণ করা হয়েছিল, ভূমিসাৎ করা হয়েছিল—সে দৃশ্যও দেখেছিল পৃথিবীর মানুষ।
২. ‘রোডস মাস্ট ফল’ আন্দোলনটি ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন পতনের ২৪ বছর পর। দক্ষিণ আফ্রিকার ‘ইউনিভার্সিটি অব কেপটাউন’-এ ২০১৫ সালের ৯ মার্চ শুরু হয়েছিল এ আন্দোলন। ছাত্রনেতা চুমা ম্যাকুয়ে (ইংরেজিতে Chumani Maxwele) সেসিল জন রোডসের মূর্তির ওপর মানববর্জ্য নিক্ষেপ করেছিলেন। এর পরপরই বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে তীব্র আন্দোলন শুরু হয়েছিল।
রোডস ছিলেন একজন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী, যাঁকে আফ্রিকা দখলের মূল স্থপতি বলা হয়ে থাকে। আফ্রিকার সম্পদ দখল ও শোষণের প্রতীক হিসেবেই তাঁকে বিবেচনা করা হয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মনে করেন, রোডসের ভাস্কর্য এখানে থাকার অর্থ হচ্ছে, তা উপনিবেশবাদেরই জয়গান গাইবে। সুতরাং এই ভাস্কর্য সরিয়ে বি-উপনিবেশকরণের দিকে জোর দিতে হবে। ‘রোডস মাস্ট ফল’ হলো রোডসের ভাস্কর্য অপসারণ করার আন্দোলন। আন্দোলন শুরু হওয়ার এক মাসের মধ্যেই ৯ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভাস্কর্যটি সরিয়ে নেয়। এরপর শিক্ষাক্ষেত্রে, পাঠ্যক্রমে নানা ধরনের পরিবর্তন আসে, যা অন্য এক আলোচনার বিষয়।
আমরা এখান থেকে সরাসরি চলে যাব ব্রিটেনে, কারণ এই আন্দোলনের আঁচ লেগেছিল ব্রিটেনেও। অক্সফোর্ডের ওরিয়েল কলেজের সামনে থাকা রোডসের ভাস্কর্য অপসারণ নিয়েও সোচ্চার হয়ে ওঠেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ভাস্কর্য এখনো পুরোপুরি অপসারিত হয়নি যদিও, তবে পাঠ্যক্রমে বি-উপনিবেশকরণ প্রক্রিয়া খুবই গুরুত্ব পায়। পুঁজিবাদ, শ্বেতাঙ্গ আধিপত্য, ভাষা, রাজনীতি ও বিশ্ববিদ্যালয়-কাঠামোতে বৈষম্য নিয়ে তর্ক-বিতর্কের পথ প্রশস্ত হয়।
৩. আরেকটি আন্দোলনের কথা বলে মূল আলোচনায় প্রবেশ করব। যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৩ সালে আফ্রিকান-আমেরিকান কিশোর ট্রেভন মার্টিনকে গুলি করে হত্যা করেছিল শ্বেতাঙ্গ জর্জ জিমারম্যান। কিন্তু আদালতের রায়ে তিনি বেকসুর খালাস পান। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি বাক্য ঘুরতে থাকে, ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’।
তবে এ আন্দোলনটি বিস্ফোরিত হয়েছে ২০২০ সালের মে মাসে। শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসার ডেরেক শভিন কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের ঘাড়ে হাঁটু গেড়ে প্রায় ৯ মিনিট চেপে ধরে ছিলেন। ফ্লয়েডের শেষ কথা ছিল, ‘আই কান্ট ব্রিথ’ (আমি নিশ্বাস নিতে পারছি না)। এই ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হলে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে গোটা যুক্তরাষ্ট্র। ৫০টি রাজ্যের প্রায় সাড়ে ৪ হাজার শহরে বিক্ষোভ হয়। ৬০টির বেশি দেশে প্রতিবাদ হয়। পুলিশের জবাবদিহি নিয়ে নতুন আইন করার দাবি ওঠে। শুধু যুক্তরাষ্ট্রই নয়, বিশ্বের একটি বড় মানবাধিকার আন্দোলনের প্রতীক হয়ে ওঠে এই ঘটনা।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো, এ সময় কনফেডারেট ভাস্কর্যগুলো অপসারণের দাবি ওঠে। কনফেডারেট বলতে বোঝায় তাদের কথা, যারা দাসপ্রথা বজায় রাখার জন্য যুদ্ধ করেছিল।
তারই রেশ ধরে ব্রিটেনেও উঠেছিল কলস্টনের ভাস্কর্য অপসারণের দাবি। এডওয়ার্ড কলস্টন ব্রিটেনের ইতিহাসে একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি। তিনি ছিলেন ব্যবসায়ী। দাতব্য কর্ম করেছেন অনেক। কিন্তু তাঁর একটি নেতিবাচক পরিচয় হলো, তিনি দাস-বাণিজ্যের অন্যতম প্রধান অংশীদার। ব্রিটেনের কুখ্যাত ট্রান্স-আটলান্টিক দাস-ব্যবসার সঙ্গে তাঁর ছিল গভীর সম্পৃক্ততা।
৪. এবার আসি মূল প্রসঙ্গে। ভাস্কর্য বা স্মৃতিস্তম্ভ ভাঙার কাজটি আসলে কীভাবে দেখে মানুষ? ব্রিটিশ সংবাদ ও মতামত ওয়েবসাইট ‘আনহার্ড’ মূলত রক্ষণশীল ও বামপন্থী উভয় দৃষ্টিভঙ্গির লেখাই প্রকাশ করে থাকে। সেখানে এই ভাস্কর্য ভাঙাভাঙির মনস্তত্ত্ব নিয়ে একটি ভালো লেখা লিখেছেন জোয়েল ডে। লেখাটিতে সাবেক সমাজতান্ত্রিক দেশগুলো ও ব্রিটেনে ভাস্কর্য ভাঙচুরের ব্যাপারে দুই বিপরীত মতবাদ নিয়ে চমৎকার বিশ্লেষণ রয়েছে। তারই আলোকে কিছু কথা বলা যায়।
‘রোডস মাস্ট ফল’ আর ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনের সরাসরি প্রভাব পড়েছিল ব্রিটেনজুড়ে। আর তাতে ছিল উপনিবেশবিরোধী ভাবনার স্ফুরণ। ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বদের যে স্মৃতিস্তম্ভগুলো ছিল, সেই ব্যক্তিদের বিবেচনা করা হচ্ছিল বর্ণবাদের উসকানিদাতা হিসেবে। কলস্টনের ভাস্কর্য উচ্ছেদের পাশাপাশি রবার্ট দ্য ব্রুস থেকে রানি ভিক্টোরিয়ার স্মৃতিস্তম্ভও পড়েছে ভাঙচুরের তালিকায়। ২০২০ সালে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, অধিকাংশ ব্রিটনই এসব মূর্তি অপসারণের পক্ষে।
ব্রিটনরা কেন এ রকম করে ভাবছে, তা বোঝা শক্ত নয়। কেউই এমন ব্যক্তিকে সম্মান জানাতে চান না, যিনি অসংখ্য মানুষের জীবন ধ্বংস করে অর্থ উপার্জন করেছেন। তাই ব্রিটেনের তরুণেরা তাদের ঔপনিবেশিক অন্যায়গুলোর প্রতিবাদ করছে বলে মনে হয়।
২০২০ সালে সরকারি জরিপে আরও দেখা যাচ্ছে, ১৬ থেকে ২৪ বছরের মাত্র ১৬ শতাংশ তরুণ ইতিহাস বিষয় নিয়ে আগ্রহী। আরেক জরিপে দেখা গেছে, ব্রিটিশদের ইতিহাস নিয়ে গর্ব ১০ বছরে ৮৬ থেকে ৬৪ শতাংশে নেমে এসেছে। এই অবনতির সঙ্গে মিলে যাচ্ছে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা, সরকারি প্রতিষ্ঠান, বিশেষত পুলিশ ও শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি অবিশ্বাস।
অনেক বিশ্লেষকই বলছেন, এই সমস্যার উদ্ভবের কারণ সম্ভবত ঐতিহাসিক জ্ঞানের অভাব অথবা জ্ঞান অর্জনে অনীহা। তরুণেরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এখন তথ্য নেয় ইউটিউব, পডকাস্ট ইত্যাদি থেকে, যেগুলো সব সময় নির্ভরযোগ্য সূত্র না-ও হতে পারে।
ঠিক এর বিপরীত চিত্র দেখা যায় সাবেক সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোয়। এখানেও রয়েছে বিস্মিত হওয়ার মতো বহু উপাদান।
৫. সোভিয়েত ইউনিয়নে যে প্রজাতন্ত্রগুলো ছিল, তার একটি হলো কাজাখস্তান। আলমাতি দীর্ঘ সময় ধরে ছিল কাজাখস্তানের রাজধানী। যানবাহনের ধোঁয়ায় ঘেরা শহরটির কেন্দ্রস্থলে ‘আরমান’ সিনেমা হলের পাশেই রয়েছে একটি বারেলিফ ভাস্কর্য। বারেলিফ হলো এমন এক শিল্পকর্ম, যা দেয়াল বা পাথর থেকে বেরিয়ে আসে কিন্তু তার সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। আরমান সিনেমা হলের পাশের এই বিশাল শিল্পকর্মটিতে দেখা যাচ্ছে, মধ্যযুগীয় বর্ম পরিহিত সাহসী কাজাখ অশ্বারোহীদের সারি—হাতে বর্শা ও পতাকা—যেন যাযাবর বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত। তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এক নারী, যিনি মাতৃরূপী মাতৃভূমিকে প্রতীকীভাবে উপস্থাপন করেন। ১৯১৭ সালের বিপ্লবের স্মরণে তৈরি এই ভাস্কর্য আধুনিক আলমাতির মাঝে এক বিস্ময়কর স্মারক।
‘অক্টোবর’ শিরোনামের এই সোভিয়েত যুগের বিশাল শিল্পকর্মটি নরম ধূসর পাথরে খোদাই করা হয়েছিল লেনিনের অভ্যুত্থানের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে। যেভাবে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হয়েছে, তাতে এই ভাস্কর্যটি ধূলিসাৎ করে দিতে পারত এই শহরের উত্তেজিত জনগণ। কিন্তু সেটা তারা করেনি। স্থানীয় জনগণ এই ভাস্কর্যের জন্য গর্বিত। তাদেরই একজন বলেছে, ‘এটি খারাপ সময়ের প্রতীক, কিন্তু সে সময় কেটে গেছে। এটিকে সংরক্ষণ করতে হবে, কারণ এটি শিল্প। আর শিল্প মানেই সুন্দর।’
কমিউনিস্ট শিল্প রাজনৈতিক প্রতীক থেকে পরিণত হয়েছে নন্দনচর্চার এক ধারায়। রাজনৈতিক বার্তা বিলীন হওয়ায় স্ট্যালিন-পরবর্তী সেই ইউটোপিয়ান মোজাইক ও ফ্রেস্কোগুলো আজ নিছক শিল্প, যা সবাই বিনা মূল্যে উপভোগ করতে পারে।
বহু উদাহরণের মধ্যে আর একটিমাত্র উদাহরণ দেব। বুলগেরিয়ার বুজলার্জা স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মিত হয়েছিল ১৯৮১ সালে। পাহাড়ের চূড়া ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে সমতল করে এর ভিত্তি তৈরি করা হয়। ভেতরে ৯৩৭ বর্গমিটারজুড়ে ৬০ জন শিল্পীর তৈরি কোবাল্ট মোজাইক। প্যানেলগুলোর বিষয়—বুলগেরীয় কমিউনিস্ট পার্টির ইতিহাস, মার্ক্স, লেনিন, কৃষক-শ্রমিক-গেরিলা—সব মিলিয়ে এক বিশাল শিল্পজগৎ। ১৯৮৯ সালে সমাজতন্ত্রের পতন হলে ভবনটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু স্থপতি দোরা ইভানোভা ২০১৫ সালে ‘বুজলার্জা প্রজেক্ট ফাউন্ডেশন’ গড়ে তোলেন। ইন্টারনেটে ছবি দেখে তিনি বুঝলেন—ধ্বংসস্তূপের নিচে লুকিয়ে আছে এক অপূর্ব শিল্পকর্ম। তাঁর লক্ষ্য ছিল এটিকে পুনরায় জীবন্ত করা। তাঁর ভাষায়—‘এটি সংরক্ষণ জরুরি, কারণ এটি এক স্থাপত্য-শিল্প-নির্মাণের মহার্ঘ সৃষ্টি; এবং আরও জরুরি—আমাদের অতীতকে মনে রাখতে হবে, বিশেষত যখন তা বেদনাদায়ক।’
এই অনুভূতি শুধু শিল্পীসমাজেই নয়। স্থানীয়রাও চায় এটি সংরক্ষিত হোক। ট্যাক্সিচালকেরাও বলেন, ‘এটি একটি জাদুঘর হলে চমৎকার হতো!’
৬. সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অনেক ক্ষেত্রেই ভুল ব্যাখ্যা ও অর্ধসত্যের কেন্দ্র। ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’-এ প্রভাবিত অনেক তরুণ মনে করে, ব্রিটেন কেবল দাসত্বের ওপর দাঁড়িয়ে ধনী হয়েছে। আংশিক সত্য হলেও, তারা উপেক্ষা করে—প্রাকৃতিক সম্পদ, উদ্যোগী সংস্কৃতি, শিল্পবিপ্লব—এসবও ব্রিটেনকে শক্তিশালী করেছিল। ইতিহাসকে এক চোখে দেখলে চিত্র বিকৃতই হয়।
পোলিশ সাংবাদিক আগাতা পিজিকের একটি কথা স্মরণ করা দরকার। তিনি বলেছেন, ‘এভাবে মানুষ আধুনিক রাজনীতির ক্ষোভকে ইতিহাসের স্মৃতিস্তম্ভে চাপিয়ে দিচ্ছে, যা বিপজ্জনক সরলীকরণ।’
স্মৃতিস্তম্ভ ভাঙা সহজ; সমাজের প্রকৃত সমস্যা সমাধান কঠিন—এই কথা বোঝার জন্য তো ব্রিটেন বা বুলগেরিয়ার কাছে যেতে হবে না। খোদ আমাদের দেশেই কি তার উদাহরণ পাওয়া যাবে না?
লেখক: উপসম্পাদক,
আজকের পত্রিকা