ইদানীং লক্ষ করা যাচ্ছে, কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করা হলে তাঁকে মিডিয়ার সামনে হাজির করে সংবাদ সম্মেলন করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাঁদের কাছ থেকে উদ্ধার করা মালামাল সংবাদ সম্মেলনে দেখানো হয়।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংবাদ সম্মেলনে অভিযুক্ত ব্যক্তির ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবন চলে আসছে। আর এমনভাবে অভিযোগের বিষয় তুলে ধরা হয়, মনে হবে যেন তাঁর অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে। আইনের মূলনীতির একটি হচ্ছে, যতক্ষণ পর্যন্ত আদালত কোনো ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত না করেন, ততক্ষণ পর্যন্ত ওই ব্যক্তি নির্দোষ। অথচ পুলিশ সংবাদ সম্মেলন করে গ্রেপ্তার আসামিদের দোষী সাব্যস্ত করে ফেলে।
ইদানীং কয়েকজন মডেল বা চিত্রনায়িকাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গণমাধ্যমকে পুলিশ তাঁদের চরিত্র নিয়ে বিভিন্ন কথাবার্তা বলছে। লক্ষ করা যাচ্ছে, কাউকে কাউকে রাতের রানিও বলা হচ্ছে। এটা সম্পূর্ণ বেআইনি।
২০১৪ সালে বিচারপতি সামসুদ্দিন আহমেদ মানিকের নেতৃত্বে হাইকোর্ট বেঞ্চ একটি রায় দিয়েছিলেন। রায়ে বলা হয়েছিল, কোনো আসামিকে গ্রেপ্তারের পর তদন্তাধীন অবস্থায় ওই আসামিকে নিয়ে বা আসামির কাছ থেকে উদ্ধার করা জিনিসপত্র নিয়ে মিডিয়া ট্রায়াল করা যাবে না। সংবিধানের ১১১ অনুচ্ছেদটা মনে করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন। সেখান বলা হয়েছে, ‘আপিল বিভাগ কর্তৃক ঘোষিত আইন হাইকোর্ট বিভাগের জন্য এবং সুপ্রিম কোর্টের যেকোনো বিভাগ কর্তৃক ঘোষিত আইন-আদালতের জন্য অবশ্য পালনীয় হইবে।’ যেহেতু সুপ্রিম কোর্টের যেকোনো বিভাগ কর্তৃক ঘোষিত আইন সব অধস্তন আদালতের জন্য অবশ্য পালনীয় হবে, সেহেতু সুপ্রিম কোর্টের যেকোনো বিভাগের আদেশ-নির্দেশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও পালন করতে বাধ্য হবে। কিন্তু ওই রায় বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মানছে না। তারা একের পর এক এ ধরনের সংবাদ সম্মেলন করছে। এটা এখন নিয়মিত চর্চার মধ্যে নিয়ে এসেছে। আসামির ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার থেকে তাঁকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।