বাংলাদেশের রিকশা ও রিকশাচিত্রকে ‘ইনটেনজিবল কালচারাল হেরিটেজ’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেসকো। ৫ নভেম্বর আফ্রিকার দেশ বতসোয়ানার কাসান শহরে বসে ইউনেসকোর আইসিএইচের (ইনটেনজিবল কালচারাল হেরিটেজ) আন্তর্দেশীয় কমিটির ১৮তম বৈঠক। সেখানে গতকাল মঙ্গলবারের আসরে এ স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
আয়োজনে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেওয়ার পরে দেখানো হয় রিকশাচিত্রের ওপরে একটি ছোট প্রামাণ্যচিত্র।
এ স্বীকৃতির ফলে আট দশক ধরে চলমান রিকশাচিত্রকর্ম একটি বৈশ্বিক ঐতিহ্য হিসেবে ইউনেসকোর স্বীকৃতি লাভ করল। ছয় বছর ধরে এ চিত্রকর্মের নিবন্ধন ও স্বীকৃতির প্রক্রিয়া চলমান থাকলেও প্রথম চেষ্টায় তা ব্যর্থ হয়। তবে ২০২২ সালে পুনরায় নথিটি জমাদানের সুযোগ দেওয়া হলে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে এবং প্যারিসে বাংলাদেশ দূতাবাসের সহযোগিতায় সম্পূর্ণ নথিটি নতুনভাবে প্রস্তুত করা হয়।
১৫ নভেম্বর ৪২তম সাধারণ পরিষদের সভায় বাংলাদেশ ইউনেসকো নির্বাহী পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়।
ইতিহাস বলছে, ১৮৭০ সাল নাগাদ রিকশা উদ্ভাবিত হয়। বিশ শতকের প্রথম ভাগে অবিভক্ত বাংলায় রিকশার প্রবর্তন ঘটে। কাছাকাছি সময়ে পূর্ববঙ্গেও রিকশার প্রচলন হয়। ঢাকার সূত্রাপুরের এক বাঙালি জমিদার এবং ওয়ারী অঞ্চলের একজন মাড়োয়ারি ছয়টি রিকশা কিনে ঢাকায় প্রবর্তন করেন বলে জানা যায়।
বাংলাদেশে এর প্রচলন ঘটে সাইকেল রিকশার, মানুষে টানা রিকশা নয়। বাহারি ও শৌখিন পরিবহন হিসেবে ঢাকায় রিকশার আগমন ঘটে ১৯৪৭-এর দেশভাগের পর। রিকশাচিত্রের সূত্রপাত হয় এই সময় থেকেই। পঞ্চাশ ও ষাটের দশক থেকে রিকশাচিত্র তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে জনপ্রিয় হতে থাকে।
রিকশাচিত্রের মূল লক্ষ্য রিকশাকে সুসজ্জিত ও আকর্ষণীয় করা হলেও ধীরে ধীরে এই আর্টের প্রভাব অন্যান্য কাজেও পড়ে। বিশেষ করে চলচ্চিত্রের পোস্টারের কথা উল্লেখ করা যায়। ষাটের দশকে রিকশাচিত্র করা হতো মূলত শীর্ষস্থানীয় চলচ্চিত্র তারকাদের প্রতিকৃতি অবলম্বনে। পরে এতে যুক্ত হয় নানা কিছু।
রিকশাচিত্র ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। তাই এই ঐতিহ্যকে বাঁচাতে ইউনেসকো এই বাহনকে ইনটেনজিবল কালচারাল হেরিটেজ ঘোষণা করল।
এর আগে বাংলাদেশের বাউলগান (২০০৮), জামদানি বুননশিল্প (২০১৩), মঙ্গল শোভাযাত্রা (২০১৬) ও শীতলপাটি বুননশিল্পের (২০১৭) পর পঞ্চম বিমূর্ত ঐতিহ্য হিসেবে ইউনেসকোর ‘ইনটেনজিবল কালচারাল হেরিটেজ হিসেবে স্বীকৃতি পায়।