মানব পাচার রোধের প্রতিশ্রুতিতে বাংলাদেশ অটল রয়েছে এবং এই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.)। তিনি আরও বলেন, মানব পাচারে জড়িতদের জবাবদিহির জন্য শক্তিশালী আইনি কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও সজাগ ও সক্রিয় রয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা (পরিচালক) ফয়সল হাসান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মানব পাচারসংক্রান্ত বিমসটেক সাব-গ্রুপের তৃতীয় বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। আজ রোববার সকালে রাজধানীর হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ের সুরমা হলে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সীমান্তে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে এবং পাচারের বিপদ সম্পর্কে সংশ্লিষ্টদের সচেতন করতে বিভিন্ন জনসচেতনতামূলক প্রচারণা জোরদার করা হয়েছে।
উপদেষ্টা আরও বলেন, বাংলাদেশ মানব পাচার মোকাবিলায় জাতীয় কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন, ভুক্তভোগীদের দক্ষতার সঙ্গে শনাক্তকরণ, তাদের চাহিদা মূল্যায়ন এবং উপযুক্ত পরিষেবা প্রদানকারীদের সঙ্গে সংযুক্ত করার জন্য একটি জাতীয় রেফারেল ব্যবস্থাসহ (ওয়েব প্ল্যাটফর্মে হোস্ট করা) সক্রিয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, মানব পাচারকারীদের দ্রুত বিচারের জন্য নিবেদিত বিশেষ ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। জাতীয় কৌশলে সচেতনতামূলক প্রচারণাগুলোকে পদ্ধতিগতভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বিমসটেক এবং অন্যান্য দেশের সঙ্গে এ বিষয়ে সহযোগিতা জোরদারের জন্য আমাদের পারস্পরিক আইনি সহায়তাব্যবস্থা প্রসারিত করেছি।’
উপদেষ্টা বলেন, পাচারকারীরা সরকারি উদ্যোগগুলোকে এড়িয়ে যাওয়ার জন্য ক্রমাগত নিত্যনতুন কৌশল গ্রহণ করে। তারা সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক সংকট ও দারিদ্র্যকে কাজে লাগিয়ে এবং প্রযুক্তির অপব্যবহারের মাধ্যমে তাদের গোপন কার্যকলাপ এগিয়ে নেওয়ার জন্য অভিবাসন রুটগুলো কাজে লাগাতে থাকে। এই অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য একটি সম্মিলিত ও কৌশলগত কর্মপদ্ধতি প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, মানব পাচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অন্যান্য বিমসটেক সদস্য রাষ্ট্র উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিয়েছে। এ বৈঠকে সেই পদক্ষেপ এবং অভিজ্ঞতাগুলো বিনিময় করা হবে আশা করছি। পারস্পরিক অভিজ্ঞতা বিনিময় ও সম্মিলিত প্রয়াস আমাদের পাচারবিরোধী কৌশলকে আরও শক্তিশালী করতে সক্ষম করবে।
উপদেষ্টা আরও বলেন, এ বৈঠক মানব পাচার কৌশল নিয়ে আলোচনা, অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং বিমসটেক অঞ্চলজুড়ে মানব পাচার রোধে আমাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করার একটি উল্লেখযোগ্য সুযোগ দিয়েছে। এ বৈঠকের ফলাফল শক্তিশালী নীতি তৈরি, এর কার্যকর প্রয়োগ এবং গভীর আঞ্চলিক সহযোগিতার জন্য অনুঘটক হিসেবে কাজ করবে।
আগামী দুই বছরের জন্য বিমসটেকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব বাংলাদেশকে অর্পণ করার জন্য এর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্ভুক্তিমূলক, কর্মমুখী ও দূরদর্শী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বিমসটেককে পরিচালনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তাঁর সক্ষম ও অনুপ্রেরণামূলক নেতৃত্বে আমরা আত্মবিশ্বাসী যে বিমসটেক আমাদের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং সম্পর্ক গভীরতর করার মাধ্যমে নতুন এক উচ্চতায় পৌঁছাবে।
বিমসটেকভুক্ত সাত সদস্য দেশের (বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, নেপাল ও ভুটান) মানব পাচারসংক্রান্ত সাব-গ্রুপের সংশ্লিষ্ট সদস্যরা অংশ নেন। বৈঠকে স্বাগত বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের রাজনৈতিক ও আইসিটি অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব এবং মানব পাচারসংক্রান্ত বিমসটেক সাব-গ্রুপের তৃতীয় বৈঠকর চেয়ারম্যান খন্দকার মো. মাহাবুবুর রহমান। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বিমসটেক সেক্রেটারিয়েট ঢাকার পরিচালক প্রশান্থ চান্দ্রান।