বিমানযাত্রায় মনের মতো সিট না হলে কিংবা তথাকথিত উইন্ডো সিটের জন্য অনেকেই অন্য যাত্রীদের অনুরোধ জানিয়ে থাকেন। এটা ভুল কিছু নয়, এখানে অনেকের দরকার আবার অনেকের ইচ্ছা জড়িত থাকে। তবে যাঁর সঙ্গে সিট বদল করতে চাচ্ছেন, তাঁকেও তো রাজি থাকতে হবে। হতে পারে যে সিটটা আপনি চাইছেন, সেখানে বসে থাকা মানুষটারও ওই সিটটাই দরকার। এ ক্ষেত্রে যিনি চাইছেন এবং যাঁর কাছে চাচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে একটা নমনীয় কথোপকথনের দরকার। বিমানে সিট বদলাতে অস্বীকার করায় মানুষকে অমানবিক বা অসংবেদনশীল বলে অভিযুক্ত করার ঘটনাও কম নয়। সাধারণত তা ঘটে যখন কেউ কোনো অভিভাবক বা পরিবারের কারও জন্য সিট ছাড়তে অস্বীকার করে।
রেগে যাওয়া কিংবা উত্তেজিত হয়ে কথা বলা কোনো সমাধান এনে দেবে না। এ ক্ষেত্রে সামলানোর জন্য বিশেষজ্ঞের মতামত দরকার না হলেও অভিজ্ঞরা কি বলছেন, তা জেনে রাখা ভালো। এই বিষয়ে ভ্রমণবিষয়ক সাইট ট্রাভেল+লিজারে পরামর্শ দিয়েছেন দ্বন্দ্ব সমাধান বিশেষজ্ঞ এমিলি স্কিনার। তিনি অ্যাসোসিয়েশন ফর কনফ্লিক্ট রেজল্যুশনের গ্রেটার নিউইয়র্কের নির্বাচিত সভাপতি। কাজ করেছেন কর্মক্ষেত্রের দ্বন্দ্ব ও যোগাযোগবিষয়ক সমস্যা নিয়ে। স্কিনার ব্যাখ্যা করেছেন কীভাবে এ ধরনের মুহূর্ত জটিল হয়ে উঠতে পারে। কেউ মেনে না নিলে কী করতে হবে এবং কেউ ভিডিও করতে শুরু করলে কীভাবে সামলাতে হবে।
দ্বন্দ্বের ধরন জানুন
ভ্রমণের সময় কী ধরনের মানুষের মুখোমুখি হবেন, তা আগে থেকে বলা যায় না। স্কিনার বলেন, দ্বন্দ্ব মেটানোর প্রথম ধাপ হলো আপনি দ্বন্দ্বে কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানান, তা বোঝা। বিমানে ওঠার আগেই ভেবে নিন, এমন পরিস্থিতিতে পড়লে মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে। কিংবা মনে মনে ভাবুন, এমন পরিস্থিতিতে আগে পড়ে থাকলে তখন কীভাবে সামলেছিলেন এবং তা ফলপ্রসূ হয়েছিল কি না। ভেবে রাখুন চাপের মুহূর্তে আপনি কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবেন। ধরন জানলে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়। স্কিনার বলেন, আপনি যত বেশি সচেতন থাকবেন, তত বেশি আপনার নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকবে।
পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করুন
আপনি যদি কারও প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন আর তারা শুধু ‘ঠিক আছে’ বলে চলে না যায়, তাহলে কিছু কৌশল প্রয়োগ করতে হতে পারে। এই বিষয়ে স্কিনারের পরামর্শ, তাদের কথা শোনা হয়েছে, তা স্বীকার করা এবং বোঝানো যে আপনি পরিকল্পনা করে এই সিট নিয়েছেন এবং এখানেই বসতে চান। তাতে কাজ না হলে সরে দাঁড়ান। কারণ, বিমানের মতো ছোট জায়গায় বিষয়টিকে বাড়ানো উচিত নয়।
পুরো দায়িত্ব আপনার নয়
বিমানের মতো ছোট জায়গায়, বিষয়টিকে বাড়ানো উচিত নয়। তবে বিমানে কেউ আপনাকে কোনো সমস্যায় ফেললে তা একা সমাধানের চেষ্টা করা আপনার দায়িত্ব নয়। বরং এতে অনেক সময় পরিস্থিতি খারাপও হতে পারে। এ ক্ষেত্রে স্কিনারের পরামর্শ, একজন ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টকে ডাকুন। এটি তাদের কাজের অংশ।
শান্ত থাকুন
আজকাল জনসমক্ষের দ্বন্দ্ব প্রায়ই ভিডিও করা হয়। এমন হলে শান্ত থাকা জরুরি। সবচেয়ে ভালো উপায় হলো শান্ত থাকা, সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া দেওয়া এবং যতটা সম্ভব কম জড়িত থাকা। ভিডিও করার সময় একমাত্র বিষয় হলো স্পষ্ট করে বলা, আমি আপনাকে ভিডিও করার অনুমতি দিচ্ছি না।
দ্বন্দ্ব সব সময় আক্রমণাত্মক নয়
সিট বদল নিয়ে বিব্রতকর মুহূর্ত কল্পনা করলে অনেকেই উচ্চ স্বরে ঝগড়ার দৃশ্য ভাবেন। হয়তো তাদের প্রয়োজন আছে, কিন্তু আপনার প্রয়োজনও সমান গুরুত্বপূর্ণ। আপনাকে কোনো ব্যাখ্যা দিতেও হবে না। আপনি চাইলে সহানুভূতি প্রকাশ করতে পারেন, তবে সিদ্ধান্তে দৃঢ় থাকতে হবে। ঠান্ডা মাথায় বলুন, ‘আমি বুঝতে পারছি, এটি আপনার জন্য কঠিন হতে পারে, তবে আমি আমার সিটেই থাকব।’