সেদিন ছিল ১৯৬৯ সালের ২ মার্চ। চমৎকার রৌদ্রোজ্জ্বল একটি দিন। দক্ষিণ ফ্রান্সের তুলুজ শহরের বিমানবন্দরে ভিড় জমিয়েছেন বহু সংবাদকর্মী এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। টেলিভিশন ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে বেশ খানিকটা উত্তেজিত ভঙ্গিতে দেশি-বিদেশি সাংবাদিকেরা নানান ভাষায় সরাসরি সংবাদ সম্প্রচার শুরু করে দিয়েছেন। বিমানবন্দরের আশপাশে অবস্থান নিয়েছেন বহু উৎসাহী মানুষ। অবিশ্বাস্য একটি ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। অধীর আগ্রহে, রুদ্ধশ্বাসে সবাই তাকিয়ে আছে শরতের মেঘমুক্ত আকাশের দিকে।
বেলা ঠিক ৩টা ৬ মিনিটে বিকট শব্দে চারদিক কাঁপিয়ে প্রচণ্ড গতিতে আকাশে উড়ল ত্রিভুজ ডানার একটি বিশেষ বিমান, নাম কনকর্ড। ফরাসি ও ইংরেজদের যৌথ উদ্যোগে প্রযুক্তি ও সৃজনশীলতার পরাকাষ্ঠা এ কনকর্ড। মানুষের আকাশ জয়ের ইতিহাসে যুক্ত হলো আরেকটি জ্বলজ্বলে মাইলফলক।
ঘণ্টায় ২ হাজার ১৭৯ কিলোমিটার বা ১ হাজার ৩৫৪ মাইল গতিসম্পন্ন বিশ্বের প্রথম যাত্রীবাহী সুপারসনিক এ আকাশযান এক শ যাত্রী বহনে এবং ১৬ থেকে ১৮ হাজার মিটার উচ্চতায় উড়তে সক্ষম। মাত্র সাড়ে তিন ঘণ্টায় প্যারিস বা লন্ডন থেকে নিউইয়র্ক পৌঁছে যাওয়ার গৌরবময় অধ্যায়ের সৃষ্টি করেছিল বিস্ময়কর বিমানটি।
কনকর্ড বাণিজ্যিক সাফল্যের মুখ দেখতে পারেনি এর উচ্চমূল্য, গগনবিদারী শব্দ এবং প্রতি ঘণ্টায় অতিরিক্ত জ্বালানি ব্যয়ের জন্য। প্রতি ঘণ্টায় উড্ডয়নের জন্য এর দরকার হতো ২৫ হাজার ৬০০ লিটার, অর্থাৎ ২০ টন কেরোসিন!
২০০০ সালের ২৫ জুলাই প্যারিসের রোয়সি বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের সময় এক মারাত্মক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে বিমানটি। সেই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ১১৩ জন মানুষ। এটাই ছিল এই বিমানের প্রথম ও শেষ দুর্ঘটনা। সে সময় এয়ার ফ্রান্স এবং ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ কনকর্ড পরিষেবা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। প্রথম বাণিজ্যিক উড্ডয়নের দীর্ঘ ২৭ বছর পর ২০০৩ সালে পরিসমাপ্তি ঘটে কনকর্ড যুগের। দুই দশক আগে বিদায় নিলেও কনকর্ড বিমানের ইতিহাসে আজও এক বিস্ময়।
সূত্র: এয়ার ফ্রান্স।