হোম > জীবনধারা > ভ্রমণ

আল্পসের কোলে সুইজারল্যান্ডের প্রাচীনতম শহর চুর

ফিচার ডেস্ক

সুইজারল্যান্ডের গ্রাউবুন্ডেন ক্যান্টনের সুইজারল্যান্ডের প্রাচীনতম শহর চুর। ছবি: উইকিপিডিয়া

সুইজারল্যান্ডের গ্রাউবুন্ডেন ক্যান্টনের ভেতরে অবস্থিত একটি শহর চুর; যাকে বলা হয় সুইজারল্যান্ডের প্রাচীনতম শহর। প্রাগৈতিহাসিক কালের পদচিহ্ন, রোমান সাম্রাজ্যের প্রতিধ্বনি এবং মধ্যযুগের মনোমুগ্ধকর আকর্ষণ নিয়ে এই শহর এক অনন্য ঐতিহ্য বহন করে। পূর্ব সুইজারল্যান্ডের আল্পস পর্বতমালার কেন্দ্রস্থলের এই শহর যেন ইতিহাসের প্রতিটি যুগ পার করে এসেছে। গ্রাউবুন্ডেন ক্যান্টনের রাজধানী এই শান্ত শহর তার অসাধারণ ঐতিহ্যের কারণে বিশেষ পরিচিত। প্রত্নতাত্ত্বিক ধ্বংসাবশেষ, মধ্যযুগীয় সরু রাস্তা এবং আধুনিক জাদুঘরের মেলবন্ধনে চুর এমন এক গন্তব্য, যেখানে ইতিহাস আর জীবনযাত্রা মিলেমিশে একাকার।

১৩ হাজার বছরের পুরোনো ইতিহাস

চুর রাতারাতি তৈরি হয়নি। ধারণা করা হয়, সুইজারল্যান্ডের মাটিতে পা রাখা মানুষেরা প্রথম এই স্থানেই আশ্রয় নিয়েছিল। প্রত্নতাত্ত্বিক খনন থেকে জানা যায়, প্রায় ১৩ হাজার বছর আগের শিকারি-সংগ্রাহক মানবগোষ্ঠীর উপস্থিতি এখানে ছিল। পরবর্তীকালে রোমানরা এই অঞ্চলে এক গভীর ছাপ রেখে যায়। সম্রাট অগাস্টাসের অধীনে, এই অঞ্চল রোমান সাম্রাজ্যের অংশ হয়ে ওঠে; যা চুরে সমৃদ্ধি এবং শহুরে উন্নয়ন নিয়ে আসে। তখন শহরটি কুরিয়া নামে পরিচিত ছিল। রোমানরা এখানে কৌশলগত সড়ক তৈরি করে, যার কিছু অংশ আজও ব্যবহৃত হয়। ২৮০ খ্রিষ্টাব্দের প্রথম দিকের সড়ক রেজিস্টারগুলোতেও চুরের নাম পাওয়া যায়।

শহরের পুরাতন রাস্তা, আল্টস্টাডট স্ট্রিট। ছবি: উইকিপিডিয়া

নিরন্তর বিবর্তনে এক শহর

চুরের ভৌগোলিক অবস্থানই এর ঐতিহাসিক গুরুত্বের প্রধান কারণ। আল্পাইন উপত্যকা এবং পর্বত পথের সংযোগস্থলে অবস্থিত হওয়ায় এটি দীর্ঘকাল ধরে একটি গুরুত্বপূর্ণ পারাপারের কেন্দ্র ছিল। চুর থেকে সহজে মিলান, ইতালীয় রিভিয়েরা, জুরিখ বা এমনকি মিউনিখেও পৌঁছানো যেত। এই সহজগম্যতা এটিকে বাণিজ্য, সংস্কৃতি এবং ধর্মের এক প্রকৃত সংযোগস্থলে পরিণত করেছিল। তবে চুর পরিবর্তন এবং বিপর্যয় থেকেও রক্ষা পায়নি। একসময় রোমান ‘ভিকাস’ থাকার পর এটি মধ্যযুগে প্রথম বিশপের আসনে পরিণত হয়। পরে গিল্ডের শহরে রূপান্তরিত হয়। দুর্ভাগ্যবশত, ১৪৬৪ সালে এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড চুর শহরকে প্রায় ধ্বংস করে দেয়। টাউন হলসহ বহু ভবন পুনর্নির্মাণ করতে হয়েছিল। আজও কিছু বাড়ির সামান্য হেলে থাকা দেয়াল সেই সময়ের সাক্ষ্য বহন করে। পাহাড়ের চূড়া থেকে বিশপের দুর্গটি এখনো শহরের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। এর পাদদেশে রয়েছে দ্বাদশ শতাব্দীতে নির্মিত ক্যাথেড্রাল অব দ্য অ্যাজাম্পশন অব সেন্ট মেরি। ৮০০ বছরের বেশি পুরোনো এই অসাধারণ গির্জা পশ্চিমা সংস্কৃতির সমৃদ্ধি মূর্ত করে তোলে।

সেন্ট মার্টিন গির্জা। ছবি: উইকিপিডিয়া

পুরোনো শহর: এক নিখুঁত মধ্যযুগীয় ছবি

চুরের পুরাতন শহরের মধ্য দিয়ে হেঁটে যাওয়া মানে যেন পুরোপুরি সংরক্ষিত এক মধ্যযুগীয় জগতে পা রাখা। এখানকার নুড়ি বিছানো সরু গলি, রঙিন স্থাপত্য এবং মনোরম চত্বরগুলো এক মোহনীয় পরিবেশ তৈরি করে। লাল রঙের নির্দেশক চিহ্নগুলো দর্শনার্থীদের শহরের প্রধান আকর্ষণগুলোর দিকে পথ দেখায়। বিখ্যাত ক্যাথেড্রাল, ছোট দোকান, প্রাণবন্ত ক্যাফে এবং আর্ট গ্যালারিগুলো এই পুরোনো এলাকাকে সচল রাখে। এখানে অবস্থিত বুন্ডনার কুন্সমুজিয়ামে সুইস ভাস্কর ও চিত্রশিল্পী আলবার্তো জিয়াকোমেট্টির মতো বিখ্যাত শিল্পীদের গুরুত্বপূর্ণ কাজ সংরক্ষিত আছে।

চুর স্টাডট স্টেশনে অপেক্ষা করছে ট্রেন দ্য অ্যারোসাবান। ছবি: উইকিপিডিয়া

যেখানে সংস্কৃতি প্রকৃতির সঙ্গে মিলিত হয়

ঐতিহাসিক ঐতিহ্যের বাইরেও চুর শ্বাসরুদ্ধকর প্রাকৃতিক পরিবেশ নিয়ে গর্ব করে। শহরের কেন্দ্র থেকে কেব্‌ল কারে করে চুরের আইকনিক পর্বত ব্রামব্রুশে যাওয়া যায়। সেখান থেকে আল্পস পর্বতমালার মনোরম প্যানোরামিক দৃশ্যেরও দেখা মেলে। এ ছাড়া চুর হলো কিংবদন্তি বার্নিনা এবং গ্লেসিয়ার এক্সপ্রেস ট্রেনের শুরুর স্থান। এই প্যানোরামিক রুটগুলো সেন্ট মরিস এবং জারমাটের দিকে যেতে সুইজারল্যান্ডের সবচেয়ে বিস্ময়কর কিছু ল্যান্ডস্কেপের ওপর দিয়ে অতিক্রম করে। তারা গ্রাউবুন্ডেন জুড়ে অফুরন্ত অ্যাডভেঞ্চারের দরজা খুলে দেয়।

চুর ভ্রমণ শুধু একটি শহরের দর্শন নয়; এটি ১৩ হাজার বছরের পুরোনো এক জীবনযাত্রার ইতিহাস অনুভব করার সুযোগ।

সূত্র: এনভলস

ঘুরে আসুন কাউয়ার চর

দেশে সরকার অনুমোদিত পাঁচ তারা ২০টি হোটেল

২০২৬ সালে ভ্রমণ করার নিরাপদ দেশগুলো

ট্যুর মুরল্যান্ডের ১৪তম বর্ষপূর্তি

বিশ্বে পকেটমারি ও প্রতারণায় শীর্ষে যেসব শহর

বিদেশ ভ্রমণে যেসব ভুলে পর্যটকদের জরিমানা হতে পারে

পাঁচ তারা হোটেলে যেসব ভুল করবেন না

মালদ্বীপ ভ্রমণ এখন আর শুধু ধনীদের জন্য নয়, অনেক সাশ্রয়ী

যে ৭ কারণে বয়স্ক ও তরুণদের ভ্রমণ পরিকল্পনায় তফাত থাকে

সেন্ট মার্টিনে রাত্রিযাপনের সুযোগ মিলবে দুই মাস, দিনে ২ হাজারের বেশি পর্যটক নয়