‘ম্যায় হু না’, ‘হায়দার’, ‘চিনি কম’, ‘চাঁদনি বার’ কিংবা ‘আন্ধাধুন’ সিনেমার কথা মনে আছে নিশ্চয়? তাহলেই মনে পড়বে টাবুর কথা। সু-অভিনয়, সাধারণ জীবনযাপন আর সময়ানুবর্তিতা—এই তিন মিলে তিনি টাবু। ৪ নভেম্বর ছিল তাঁর জন্মদিন। এই দিনে সামনে এসেছে তাঁর রূপরহস্যের কথা।
চুয়ান্নতম জন্মদিনে টাবু পার করছেন ভারতীয় সিনেমার জগতে তাঁর ৩৪ বছরের কর্মজীবন। এই দীর্ঘ কর্মময় জীবনে তাঁকে গ্ল্যামারের ওপর নির্ভর করতে হয়নি। দক্ষ অভিনয়, অভিব্যক্তি, কণ্ঠস্বর আর ব্যক্তিত্ব তাঁকে অন্যদের থেকে আলাদা করেছে বলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে। পর্দায় সহজ-সরল উপস্থিতি আসলে তাঁর সহজ-সরল জীবনযাপনেরই যেন প্রতিচ্ছবি। তাই বলে তিনি কি নিজের যত্নে উদাসীন? তা নয়; বরং তিনি নিজের ত্বক, চুলসহ শরীরের যত্নে বেশ সংবেদনশীল।
সহজে বিশ্বাসী
হ্যাঁ, টাবু জটিল ধরনের ত্বক পরিচর্যায় বিশ্বাসী নন। বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে তিনি সহজ ও ধারাবাহিকভাবে রুটিন মেনে চলার কথা জানিয়েছেন বহুবার। তাঁর সকালের রুটিনে সাধারণত ক্লিনজিং ও ময়শ্চারাইজিং এবং সান প্রোটেকশন বা সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে সুরক্ষার বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকে। এগুলোর কোনো ধাপ তিনি কখনোই বাদ দেন না।
দীর্ঘদিনের অভ্যাস
গোসলের আগে সি সল্ট ও পেট্রোলিয়াম জেলির মিশ্রণ দিয়ে এক্সফোলিয়েট করা তাঁর দীর্ঘদিনের অভ্যাস। তিনি মনে করেন, এটি তাঁর ত্বক নরম ও মসৃণ রাখতে সাহায্য করে। তিনি হালকা, নন-গ্রিজি ময়শ্চারাইজার পছন্দ করেন এবং চরিত্রের প্রয়োজনে না হলে ভারী মেকআপ এড়িয়ে চলেন।
খাদ্য, পানি ও বিশ্রাম
ত্বকের যত্ন শুধু পণ্য ব্যবহারের বিষয় নয় বলে মনে করেন টাবু। তিনি জ্বালানি হিসেবে শরীর কোন ধরনের খাদ্য-পানীয় দিচ্ছেন, সেদিকেও মনোযোগ দেন। টাবু জানিয়েছেন, তিনি পর্যাপ্ত পানি পান করেন, প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলেন এবং তাঁর খাদ্যতালিকায় থাকে সুষম খাবারের উপস্থিতি। তাতে থাকে তাজা ফল, সবজি ও ঘরে তৈরি পুষ্টিকর সাধারণ ও সহজ খাবার।
টাবু বিশ্বাস করেন, তিনি কেমন বোধ করছেন এবং কেমন দেখাচ্ছেন, এ দুয়ের ওপর ঘুমের বড় ভূমিকা আছে। দীর্ঘ সময় কাজ করা এবং রাতের শুটিং স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে, তাই সুযোগ পেলেই তিনি বিশ্রাম নেওয়ার চেষ্টা করেন।
সেই একটি দামি ক্রিম
টাবু একবার কোনো সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, নিজের মেকআপ আর্টিস্টের পরামর্শে তিনি প্রায় ৫০ হাজার টাকা মূল্যের একটি ফেস ক্রিম কিনেছিলেন। পরে তিনি সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে হাসাহাসি করেন। তিনি সে ধরনের পণ্য আর কিনবেন না বলেও জানিয়েছিলেন। ‘ফিল্ম কম্প্যানিয়ন’কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি এটি একবার কিনেছিলাম এবং সেটাই শেষ।’ এসব দেখে বোঝা যায়, আর যা-ই হোক, তিনি ট্রেন্ড বা দামের ট্যাগ দেখে আবেগতাড়িত হন না। তাঁর জন্য সৌন্দর্য সব সময়ই স্বাচ্ছন্দ্য, ধারাবাহিকতা এবং একটি এমন রুটিনের বিষয়, যা বিলাসিতার চেয়ে অনেক বেশি প্রাকৃতিক।
ন্যূনতম মেকআপ, সর্বোচ্চ স্বাচ্ছন্দ্য
সাধারণত পাবলিক ইভেন্টেও টাবুকে কখনো ভারী মেকআপে দেখা যায় না। তিনি নিউট্রাল টোন, হালকা আইশ্যাডো এবং প্রাকৃতিক লুক পছন্দ করেন। এই ন্যূনতম মেকআপের জন্য তাঁর ত্বক স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতে পারে। তিনি যেমন মিতভাষী ও আত্মবিশ্বাসী, তাঁর মেকআপও তেমনি মৃদু কিন্তু পূর্ণ।
তিনি দীর্ঘ শুটিংয়ের পর মেকআপ ঠিকঠাকমতো তুলে ফেলার বিষয়েও বিশেষ যত্নবান, যাতে তাঁর ত্বক সারা দিনের ক্ষয়ক্ষতি পুনরুদ্ধারের সময় পায়।
বয়সের সঙ্গে বদলে যাওয়া
টাবুকে অনন্য করে তুলেছে যে বিষয়টি, তা হলো তিনি কখনো বয়স লুকানোর চেষ্টা করেন না। তিনি এটিকে তাঁর জীবনের যাত্রাপথের একটি স্বাভাবিক অংশ হিসেবে মেনে নেন এবং এটিই সম্ভবত তাঁর সবচেয়ে বড় রহস্য। কোনো নির্দিষ্ট চেহারা বজায় রাখার চাপ নেই বা তার চেয়ে কম দেখানোরও কোনো তাড়না নেই; বরং তিনি সুস্থ বোধ করা, সক্রিয় থাকা এবং অনায়াসে জীবনযাপনের ওপর অনেক বেশি মনোযোগী।
সে জন্যই হয়তো তিনি বলতে পারেন, ‘আমি শুধু সেই গল্প বলতে চাই, যা আমাকে অনুভব করতে শেখায়।’