উৎসবের সময় সবকিছুর একটা গোছানো-সাজানো রূপ চাই। সেটা ঠিক সাধারণ সময়ের মতো নয়। এই যেমন চুলটা ঠিক থাকতে হবে। মানে, উজ্জ্বল, স্বাস্থ্যবান আর ঝরঝরে। ত্বকেরও ঠিক তেমন একটা ট্রিটমেন্ট চাই। হাজার হোক, ত্বকই প্রথম চোখে পড়ে! শুধু চোখে পড়াই নয়, নিখুঁত ও উজ্জ্বল ত্বক সুস্থতারও লক্ষণ বটে। ত্বক ঠিক আছে মানে আপনার শরীরের প্রয়োজনীয় সব উপাদান একদম সঠিক পরিমাণে আছে। কিন্তু কীভাবে সেটা করবেন?
পথ দুটি। প্রথম হলো, নিয়মিত পরিমাণমতো পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, পরিমাণমতো পানি পান করা আর শরীর সচল রাখার জন্য হালকা ব্যায়াম করা। দ্বিতীয়ত, কিছু উপকরণ ব্যবহারের মাধ্যমে ত্বক বাইরে থেকে ঠিক রাখার চেষ্টা করা। এই দুটি বিষয়ের মেলবন্ধন জুতসই হলেই কেবল ত্বক উজ্জ্বল থাকবে। নইলে, কখনো একটু বিবর্ণ মনে হবে, কখনো র্যাশ বা চুলকানি হবে ইত্যাদি। উৎসবের সময় সেটা কারও কাম্য নয়। বাইরে থেকে ত্বক ভালো রাখার বিভিন্ন উপায় আছে। যার কিছু কিছু আমরা ছোটবেলা থেকেই করে থাকি।
ছোটবেলায় মসুর ডালবাটা, নিমপাতাবাটা, কাঁচা হলুদবাটা আর কাঁচা দুধের মিশ্রণ জোর করে গায়ে মাখিয়ে স্নান করাতেন মা। সে কথা মনে আছে নিশ্চয়? সে সময় বিরক্ত লাগলেও এর সুফল হয়তো আজও পাচ্ছে আপনার ত্বক। এর দাগছোপ, রোদে পোড়া চিহ্ন আর ব্রণ সারাতে মায়ের দেওয়া টোটকার ওপর আর কীই-বা আছে বলুন। এখন থেকে ২৫ বা ৩০ বছর আগে তো এত বাজারচলতি প্রসাধনী ছিল না। সাধারণ ঘরোয়া উপকরণেই ত্বক থাকত স্বাস্থ্যোজ্জ্বল, চকচকে। এবার পূজার আগে পারলারে যাওয়ার সময় না পেলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে ঘরোয়া টোটকা ব্যবহার করে দেখতে পারেন।
বেসন, কাঁচা হলুদ ও টক দইয়ের প্যাক
ত্বকের ময়লা ও রোদে পোড়া ছোপ ছোপ দাগ তুলতে বেসন ভালো সমাধান। এটি ত্বক পরিষ্কারক হিসেবে পরিচিত। অন্যদিকে টক দইয়ে রয়েছে ব্যথানাশক উপাদান, যা ত্বকের লালচে ভাব কমাতে সাহায্য করে। কাঁচা হলুদের গুণ সম্পর্কে আলাদা করে বলার প্রয়োজন নেই। ত্বকের রং উজ্জ্বল করতে এবং ত্বক গভীর থেকে পরিষ্কার করতে হলুদ ভীষণ কার্যকরী। ত্বকের রোদে পোড়া দাগ দূর করতে ২ টেবিল চামচ টক দইয়ের সঙ্গে ১ টেবিল চামচ হলুদ এবং বেসনের গুঁড়া মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করুন। এই প্যাক ত্বকে লাগিয়ে রাখুন ২০ মিনিটের মতো। শুকিয়ে এলে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এরপর ত্বকের উপযোগী ময়শ্চারাইজার লাগিয়ে নিন।
বেসন ও মসুর ডাল বাটার জাদু
বেসন ও মসুর ডাল বাটা প্রাকৃতিক ক্লিনজার হিসেবে জনপ্রিয়। মুখে বয়সের ছাপ পড়তে শুরু করলে সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন এই দুটি উপকরণের মিশ্রণের প্যাক মাখলে ত্বক টানটান হবে। ত্বকের কালো দাগ দূর করতেও এই প্যাকের জুড়ি মেলা ভার।
চন্দনের চমক
চন্দন ত্বক ঠান্ডা রাখে। ফলে র্যাশ বা ব্রণ হয় না; পাশাপাশি এটি ত্বক থেকে রোদে পোড়া দাগ ও অন্যান্য কালো দাগ দূর করতেও খুব ভালো কাজ করে। রোদ থেকে ফিরে চন্দনের ফেসপ্যাক ব্যবহারে আরাম পাওয়া যায়। এই ফেসপ্যাক বানানোও সহজ। গোলাপজলের সঙ্গে চন্দনগুঁড়া মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন। এ ছাড়া কাঠবাদাম বাটার সঙ্গে চন্দনগুঁড়া ও দুধ মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করে রোদে পোড়া ত্বকে ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যাবে। সে ক্ষেত্রে এই প্যাক ২০ মিনিট ত্বকে রেখে কুসুম গরম পানি ও নরম তোয়ালে দিয়ে রগড়ে ত্বক ধুয়ে নিতে হবে।
মরা কোষ ঝরাবে দুধের সর
রোদে পোড়া ত্বকে দুধের সর মেখে রাখলে ত্বকের কালচে দাগ উঠে যায়। দুধে রয়েছে ল্যাকটিক অ্যাসিড, যা ত্বকের মৃত কোষ ঝরায়। ফলে ত্বক পরিষ্কার হয়ে ওঠে।
একজিমা দূর করবে ঘি
একজিমার মতো চর্মরোগের ঘরোয়া টোটকার মধ্যে ঘি বেশ কার্যকরী। ভিটামিন এ, ডি ও ই সমৃদ্ধ ঘি ত্বকের যেকোনো সংক্রমণ ঠেকাতে পারে। ত্বকের প্রাকৃতিক ময়শ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে ঘি। এ ছাড়া এটি ত্বক নরম ও মসৃণ রাখে। কাঁচা দুধ নিন দেড় কাপ। তাতে বেসন ও এক চামচ ঘি দিয়ে পেস্ট বানিয়ে সারা শরীরে লাগিয়ে নিন। শুকিয়ে গেলে একটি গরম পানিতে ভেজানো তোয়ালে দিয়ে ঘষে ঘষে তুলে নিন। এতে ত্বক অনেকখানি পরিষ্কার হয়ে যাবে। জ্বালাপোড়া ও চুলকানিও কমে যাবে।
নিমের গুণে পরিচ্ছন্ন ত্বক
র্যাশ বা চুলকানির সমস্যা থাকলে নিমপাতা সেদ্ধ পানি দারুণ কাজ করে। ব্যবহার করা যায় নিমপাতাবাটাও। নিমে রয়েছে অ্যান্টিসেপটিক ও ব্যথানাশক উপাদান। ফলে সংক্রমণ দূর করতে তা কার্যকর। নিমপাতাবাটা ত্বকে লাগালে জ্বালা ভাব থেকেও আরাম মিলবে। নিমে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকায় ব্রণ কমাতেও সহায়তা করে এটি।
সূত্র: স্টাইলক্রেজ, হেলথলাইন ও অন্যান্য