কমলালেবুর খোসা দিয়ে রূপচর্চাঃ শীতে বাজার, ফুটপাতের দোকান ও সুপার শপ ছেয়ে যায় কমলালেবুতে। শীত যত বাড়তে থাকে ঘরে ঘরে ফলের ঝুড়িতে এই ফলের তত বেশি দেখা পাওয়া যায়। এই ঋতুতে মায়েদের একটা কাজ যেন আরও বেড়ে যায়। সকাল বা বিকেলে বাড়ির সবার হাতে একটি করে কমলালেবু ধরিয়ে দেওয়া। যারা খেতে চায় না, তাদের খোসা ছাড়িয়ে খাইয়ে দিতে ভোলেন না তিনি। কমলালেবু নিয়ে মায়েদের কাজ কি এখানেই শেষ? মোটেও না।
এই কমলালেবুর খোসা যত্ন করে রোদে শুকিয়ে তা গুঁড়া করে বয়ামে ভরে রাখেন তাঁরা। এরপর নিজে তো বটেই, বাড়ির মেয়ে-বউদেরও এই গুঁড়া দিয়ে তৈরি ফেসপ্যাক মাখতে দেখা যায়। এখন অবশ্য দেশের স্বনামধন্য লাইফস্টাইল ব্র্যান্ডগুলো কমলার খোসার গুঁড়া বাজারে এনেছে। তবে তাজা জিনিসের মর্মই তো আলাদা।
কমলার খোসা ত্বকের কোলাজেন উৎপাদনে সহায়তা করে এবং ত্বক মসৃণ রাখে। ফলে ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে এই উপাদানটি শীতের রূপচর্চায় রাখা যেতে পারে। এ ছাড়া এতে ভিটামিন ‘সি’, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা ত্বক উজ্জ্বল করতে, ব্রণ কমাতে এবং দাগ দূর করতে সাহায্য করে। রূপচর্চায় ব্যবহারের পাশাপাশি এই ঋতুতে নিয়মিত কমলা ও কমলার রস খাওয়ার চেষ্টা করুন। এতেও ত্বক ভেতর থেকে পুষ্টি পাবে ও ক্ষয়ক্ষতি সারিয়ে উঠতে পারবে। শোভন সাহা, কসমেটোলজিস্ট ও শোভ মেকওভারের স্বত্বাধিকারী
তাই কমলালেবুর এই ভরা মৌসুমে খোসা ফেলে না দিয়ে আপনিও রূপচর্চার কাজে ব্যবহার করতে পারেন। জেনে নিন ত্বকের কোন সমস্যার জন্য কমলালেবুর খোসা দিয়ে কোন ধরনের ফেসপ্যাক তৈরি করবেন।
ক্লিনজিং প্যাক
এই ঋতুতে কমবেশি সবার ত্বকেই একটা কালচে ভাব চলে আসে। ত্বকের চকচকে ভাব ফিরিয়ে আনতে কমলার খোসা খুব ভালো কাজ করে। স্ক্র্যাব হিসেবে কমলালেবুর খোসা ত্বকের মৃত কোষকে সরিয়ে ত্বক উজ্জ্বল করে তোলে। এক টেবিল চামচ টক দই, এক টেবিল চামচ কমলালেবুর খোসার গুঁড়া বা বাটার সঙ্গে মিশিয়ে মুখ, গলা ও ঘাড়ে মেখে নিন। ২০ মিনিট রেখে পানি দিয়ে ভালোভাবে ত্বক ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একবার এই প্যাক ব্যবহার করলে ত্বকের হারানো উজ্জ্বলতা ফিরে আসবে।
জীবাণুনাশক প্যাক হিসেবে ব্যবহার করুন
যাঁদের মুখে শীতকালেও প্রচুর ব্রণ হয় তাঁরা কমলালেবুর খোসা দিয়ে তৈরি প্যাক ব্যবহারে উপকার পাবেন। কমলালেবুর খোসায় থাকে জীবাণুনাশক, ব্যথানাশক ও ছত্রাকনাশক গুণ। মুখ ব্রণমুক্ত করে তুলতে কমলার খোসার জুড়ি মেলা ভার। একটি আস্ত কমলার খোসা ১ কাপ পানিতে সেদ্ধ করে সেই পানি টোনার হিসেবে ব্যবহার করুন। ত্বকের তৈলাক্ত ভাব কমাতে তাজা কমলার খোসার সঙ্গে মসুর ডাল বেটে মিশ্রণটি নিয়মিত ত্বকে লাগালে ব্রণ ও ব্রণের দাগ দূর হবে। ত্বক হয়ে উঠবে মসৃণ।
সানট্যান রিমুভাল প্যাক
ত্বকের রোদে পোড়া দাগ বা রোদে বের হওয়ার পর ত্বকে যে তামাটে ভাব আসে, তা দূর করতে কমলার খোসা দিয়ে তৈরি প্যাক জাদুকরী ভূমিকা পালন করে। ২ টেবিল চামচ কমলার খোসা গুঁড়ার সঙ্গে ১ টেবিল চামচ চন্দন গুঁড়া ও গোলাপজল মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। মুখ, গলা ও ঘাড়ে ভালো করে লাগিয়ে ২০ মিনিট রাখুন। এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। মাসে ৩ থেকে ৪ বার এ প্যাক ব্যবহার করলে ভালো ফল পাবেন। এ ছাড়া ১ টেবিল চামচ কমলার খোসার গুঁড়া, ১ টেবিল চামচ হলুদ ও ১ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে মুখ, গলা ও ঘাড়ে লাগান। ১০ মিনিট পর গোলাপজল দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে নিন, তবে ব্রণ থাকলে এ প্যাক লাগাবেন না।
স্যানট্যান বা রোদে পোড়া দাগ তুলতে ও ত্বকের রং উন্নত করতে ২ টেবিল চামচ বেসনের সঙ্গে এক টেবিল চামচ কমলার খোসা বাটা নিয়ে দুধ দিয়ে তৈরি ঘন পেস্ট ব্যবহার করুন। এই প্যাক তৈরিতে কোনো পানি ব্যবহার করবেন না। এই প্যাক ত্বকে পুরু করে মেখে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর কুসুম গরম পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে ত্বকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ম্যাসাজ করে প্যাক তুলে নিন। তারপর স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। এ প্যাক একবার ব্যবহারেই ত্বক অনেকটা উজ্জ্বল দেখাবে। হবে মসৃণও।